শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারী, ২০২১, ০৭:২১ সকাল
আপডেট : ২৮ জানুয়ারী, ২০২১, ০৭:২১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

টিকা বিদ্বেষ আর গাধার জল ঘোলা

ড. শোয়েব সাঈদ, বাংলাদেশে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ভ্যাকসিন। রাজনীতি, ভূগোলনীতি, ধর্ম, সবকিছুর খিচুড়ি মনস্কতায় আচ্ছন্ন জাতির বিজ্ঞানভিত্তিক ফ্যাক্টস নিয়ে ভাবনার সময় কই? বেশ কিছু জ্ঞানীগুনী জন আবার তাঁদের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণার অনুকূলে গল্প বানিয়ে উসকে দিচ্ছে টিকা ভীতি। টিকা গ্রহণের সময় একটি সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হবে। এই সম্মতি পত্রের ভাষা নিয়ে ভিন্ন মত থাকতে পারে, এই নিয়ে পরামর্শ, অভিমত দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু এই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে রাজনীতির মারপ্যাঁচে ভ্যাকসিনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ভ্যাকসিন নিয়ে ভয় দেখানো দেশ বা জনগনের জন্যে কল্যাণকর নয়। বাংলাদেশের বিখ্যাত এক দার্শনিক, লেখকের ফেসবুকে এসব নেগেটিভ আলোচনা দেখে বিশেষ করে সম্মতিপত্রের বেশ কিছু পয়েন্ট নিয়ে তীব্র সমালোচনায় ভাবছিলাম কোভিড মহামারি নয়, বাংলাদেশে চলছে বিজ্ঞান মনস্কতার মহামারি। জনপ্রিয় হতে চান? লাইক শেয়ারে ভাসতে চাইলে ভ্যাকসিন নিয়ে ভিত্তিহীন নেতিবাচক গল্প ফাঁদলেই ভাইরাল। বৈজ্ঞানিক ব্যাখা বিশ্লেষণে আগ্রহ বরাবরই কম।

উন্নত দেশে যে কোন ছোট খাট সার্জারিতে ডাক্তার কর্তৃক ঝুঁকির বয়ান শুনে রোগীর পালিয়ে যাবার কথা, কিন্তু সবাই সেটি মেডিক্যাল সিস্টেমের নিয়মমাফিক কথন হিসেবেই ধরে নেন। বাংলাদেশে টিকার সম্মতিপত্রের ভাষাটি সবদেশের মেডিক্যাল সিস্টেমে মোটামোটি একই রকম শুধু একটি পয়েন্ট ছাড়া। এই পয়েন্টটি হচ্ছে “এই টিকা গ্রহণের সময়, অথবা পরে যে কোনো অসুস্থতা, আঘাত বা ক্ষতি হলে, তার দায়ভার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা সরকারের নয়” সরকারে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে যা টিকা গ্রহণে আস্থা তৈরিতে গুরুতর সমস্যা তৈরি করবে। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট ব্যাখা থাকা দরকার, সতর্কতা দরকার। অন্যান্য পয়েন্টগুলো মূলত ছিল রুটিন এপ্রোচ। আরেকটি পয়েন্ট “আমি সম্মতি দিচ্ছি যে, টিকা গ্রহণ ও এর প্রভাব সম্পর্কিত তথ্যের প্রয়োজন হলে আমি তা প্রদান করব“ নিয়ে দেখলাম তীব্র সমালোচনা। অথচ টিকার সেফটি রেকর্ডের জন্যে এই অঙ্গীকার গুরুত্বপূর্ণ এবং ভ্যাকসিনের কোয়ালিটি কন্ট্রোলে অত্যাবশ্যক। পশ্চিমা মিডিয়ার সাথে যাদের পরিচয়, তাঁরা জানেন পশ্চিমা মিডিয়া, লেখক বা দার্শনিকরা এই সব বিষয়ে ভীতি সঞ্চারের চাইতে সরাসরি ত্রুটিটি দেখিয়ে দিতেই অভ্যস্ত।

এসট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটি সেরামে উৎপাদনের বিষয়টি কর্পোরেট জগতে বিপুল চাহিদায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বাংলাদেশে সেরামের ভ্যাকসিন নিয়ে কথা চালাচালির অনেক অনেক আগে বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে এসট্রাজেনেকার সাথে সেরামের চুক্তি। বাংলাদেশের ৩ কোটি ভ্যাকসিন নিয়ে তথাকথিত ষড়যন্ত্রতত্ত্বের সাথে বছরে দেড়শ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সেরামের লাভক্ষতির হিসেবটি বুঝবার অক্ষমতা গুলিস্থানের মোড় থেকে নকল ঔষধ কেনার মানসিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ভুল তথ্য দিয়ে, ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ভ্যাকসিন বিদ্বেষের রাজনীতি আরও কিছু দিন হয়তো বাংলাদেশে চলবে। টিকা নেওয়া অভিযান চলমান থাকলে এর কার্যকারিতা আর সেফটি নিয়ে সংশয় ক্রমশ কেটে যাবে। সেরামে উৎপাদিত এসট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনটির তথ্যাদি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত বিজ্ঞান সাময়িকীতে নামকরা বিজ্ঞানীদের বিস্তারিত রিভিউ করার পর। ভ্যাকসিন নিয়ে অপপ্রচারের সমাধান নিহিত আছে বিজ্ঞানভিত্তিক ফ্যাক্টসের চূড়ান্ত সক্ষমতার উপর। সায়েন্টিফিক ফ্যাক্টস শুড প্রিভেইল। বৃক্ষের পরিচয় তার ফলে।

বাংলাদেশে টিকা বিদ্বেষের পাশাপাশি কানাডায় চলছে টিকা নিয়ে হাহাকার। উৎপাদক রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের দেশগুলোর ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদের গ্যাঁড়াকলে কানাডার ত্রাহি-ত্রাহি অবস্থা। ভ্যাকসিন নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণায় সময় বা রুচি নেই এদের।

এসট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সেরাম উৎপাদন করে উপমহাদেশের ভ্যাকসিন রাজনীতির তোপের মুখে। অথচ ইউরোপের দেশগুলো এসট্রাজেনেকার ইউরোপীয় প্লান্টে উৎপাদিত ভ্যাকসিন নিয়ে কাড়াকাড়িতে লিপ্ত, ভ্যাকসিনের সেফটি নিয়ে বদ চিন্তার সময় নেই ওদের।

ফাইজারের ভ্যাকসিন উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে ফরাসী ফার্মা সানোফি, ১২৫ মিলয়ন ডোজ উৎপাদনের অঙ্গীকার নিয়ে। না, এ নিয়েও কোন বদ রাজনীতি নেই। তার মানে এই নয় উন্নত বিশ্বে বদ রাজনৈতিক নেই, আছে তবে সংকট কালে চেষ্টা করে জনকল্যাণে ঐক্যবদ্ধ থাকতে, এটাই সম্ভবত ওদের সভ্যতার দায়।

ভ্যাকসিন নিয়ে বৈশ্বিক দাপাদাপির মধ্যে চাহিদা আর সাপ্লাইয়ের তীব্র টানাপোড়েনে আর স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে যাবার প্রাণপণ আকুতির বৈশ্বিক ইমপ্যাক্টের ধাক্কায় বাংলাদেশের ভ্যাকসিন বিদ্বেষের বিলাসিতা দিনশেষে উবে যাবে অবশ্যই এবং একটা সময় বরং ১৭ কোটি জনগণের প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের জন্যে তীব্র চাপের সৃষ্টি হবে। জল ঘোলা করে পান করার জন্যে খ্যাত বিশেষ প্রাণীটির স্বভাবের পথে নাই বা হাঁটলাম।

লেখকঃ কলামিস্ট এবং মাইক্রোবিয়াল বায়োটেক বিষয়ে বহুজাতিক কর্পোরেটে ডিরেক্টর পদে কর্মরত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়