শিরোনাম
◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ ভিত্তিহীন মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের নাজেহাল করা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী ◈ অপরাধের কারণেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের  বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ অ্যাননটেক্সকে জনতা ব্যাংকের সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিলের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের ◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি  ◈ ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ ইরানে ইসরায়েলের হামলার খবরে বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আতঙ্ক

প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারী, ২০২১, ১০:০২ দুপুর
আপডেট : ২৭ জানুয়ারী, ২০২১, ১০:০২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তুচ্ছ ঘটনায় কিশোর-তরুণরা খুনোখুনিতে

ডেস্ক রিপোর্ট: সিফাত ভূঁইয়া নামে এক কিশোর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের গলিতে দাঁড়িয়ে হালিম খাচ্ছিল। তখন আরেক কিশোরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তার। এই সামান্য ঘটনা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বাগবিতণ্ডা। এর জের ধরে একপর্যায়ে সিফাতকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। গত ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। মাঝেমধ্যেই এমন তুচ্ছ ঘটনায় খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোর-তরুণরা। চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় অন্তত তিন কিশোর খুন ও পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বিরোধের কারণ অতি নগণ্য।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু আইন প্রয়োগ করে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সব পক্ষকে ভূমিকা রাখতে হবে। আর অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু-কিশোরদের সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এতে বিপথগামী হওয়া ঠেকানো যাবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ওয়ালিদ হোসেন  বলেন, এ ধরনের ঘটনা যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। তবে কিশোরদের ঘটনাগুলো মূলত সামাজিক অবক্ষয়ের ফল। এ ক্ষেত্রে সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সন্তানদের সঠিক পথে রাখতে সময় দিতে হবে অভিভাবকদের। সন্তানের গতিবিধির ওপর লক্ষ্য রাখতে হবে। ফেসবুক বা গ্যাজেট আসক্তি কমিয়ে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে হবে। তাহলেই কিশোর অপরাধীর মতো সমস্যা তৈরি হবে না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধে জড়ানোর প্রবণতা বেড়ে গেছে। সামান্য ঘটনায় তাদের উগ্র আচরণ শেষ পর্যন্ত প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা দলবদ্ধ হয়ে ক্ষমতার চর্চা করতে পছন্দ করে। বয়সে নবীন হলেও তারা কাছাকাছি বয়সের অন্যদের থেকে সমীহ-শ্রদ্ধা পেতে চায়। সে সঙ্গে অন্যরা তাদের আদেশ মেনে চলবে- এটাই তাদের মূল চাওয়া। তাদের এ চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু হলেই দেখা দেয় সমস্যা। তুচ্ছ ঘটনায় মারাত্মক পরিণতি হয়। ঢাকার কামরাঙ্গীরচর, মহাখালী ও কেরানীগঞ্জে সাম্প্রতিক তিন খুনের ঘটনার বিশ্লেষণে এমন চিত্র পাওয়া যায়।

কামরাঙ্গীরচরে কিশোর খুনের ঘটনার পরদিন স্থানীয় ইব্রাহিমনগর বালুরমাঠ এলাকা থেকে ছয় শিশুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের আদালতে হাজির করা হলে তিনজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। কামরাঙ্গীরচর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তফা আনোয়ার  জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বয়স ১০ থেকে ১২ বছর। তাদের কেউ ছাত্র, কেউ শ্রমিক। তারা জানিয়েছে, সিফাতের সঙ্গে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে বিরোধেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যায় ব্যবহূত সুইচ গিয়ার ছুরিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এর আগে ১ জানুয়ারি রাতে মহাখালীর কাঁচাবাজার এলাকায় ছুরিকাঘাতে আরিফ নামে এক কিশোর নিহত ও দু'জন গুরুতর আহত হয়। বনানী থানার ওসি নূরে আযম মিয়া বলেন, এ ঘটনায় অভিযুক্ত দু'জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো জনি নামে এক তরুণ ও ১২ বছরের এক মেয়ে শিশু। তারা জানিয়েছে, মাদক (ড্যান্ডি) সেবন নিয়ে বাগবিতণ্ডার জের ধরে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারি রাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কালিন্দী ইউনিয়নের মৃধাবাড়ি এলাকায় খেলা নিয়ে বিরোধে ছুরিকাঘাতে মো. সানজু নামে এক কিশোর খুন হয়। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম  বলেন, ব্যাডমিন্টন খেলা নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এতে আরও তিন কিশোর আহত হয়। এ ঘটনায় জড়িত রবিন নামে এক তরুণ ও তার ছোট ভাইকে (অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় নাম প্রকাশ করা হলো না) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রবিনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার ভাইকে গাজীপুরের টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

 

পরিবারকে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে :মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক  বলেন, এক দশক ধরে শহরকেন্দ্রিক কিশোর-তরুণদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া বা কিশোর গ্যাংয়ের কথা বেশি শোনা যাচ্ছে। তবে তারা যেন অপরাধে না জড়ায় সেজন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয়। মূলত আবেগতাড়িত হয়ে ক্ষমতার চর্চা করার আশায় তারা উগ্র হয়ে ওঠে। নিজের ইচ্ছা অন্যের ওপর চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। একা ক্ষমতার প্রয়োগ কঠিন বলে তারা দল গঠন করে। অন্যদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালায়। এর মাধ্যমে তারা আনন্দ পেতে চায়। এর সঙ্গে রাজনীতিরও সম্পৃক্ততা রয়েছে।

অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক বলেন, কিশোরদের অপরাধে জড়ানো ঠেকাতে পরিবারকে প্রধান ভূমিকা রাখতে হবে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক নজরদারির বিষয়টি থাকছে। পরিবারের সদস্যদের লক্ষ্য রাখতে হবে সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পড়ালেখা ও সংশ্নিষ্ট কাজে এমনভাবে সম্পৃক্ত রাখবে, যেন শিক্ষার্থীরা অন্যদিকে মনোনিবেশ করতে না পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে একই সঙ্গে আইনগত ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শিশু-কিশোরদের বেড়ে ওঠার উপযোগী সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে।সূত্র:সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়