শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারী, ২০২১, ০৯:২১ সকাল
আপডেট : ২৬ জানুয়ারী, ২০২১, ০৯:২১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডা. জাকারিয়া চৌধুরী: আরাফাত রহমানের প্রতি

ডা. জাকারিয়া চৌধুরী: ইয়াসির আরাফাত এবং আরাফাত রহমান কোকো দু'জনেই ছিলেন শ্বাস কষ্টের রোগী, এক প্রকার নিরাপত্তাহীন দুর প্রান্তের দুইজন মানুষ। ইয়াসির আরাফাতকে খুন করেছে ইহুদিরা- এটা মোটামুটি স্পষ্ট ও প্রমানিত। অন্যদিকে আরাফাত রহমান মরে গেলেন..... এমনি এমনিই ? তার মৃত্যুর কারন হিসেবে এক শ্রেনীর সরকারী নেতাদের অশ্লীল ইংগিত !!!? বলি, ইংগিত করুন, যত ইচ্ছা বলুন। বলতেই থাকুন। আমরা আপনাদেরকে ভাড়া দেব। আপনারা অশ্লীল কথা বলতেই থাকুন। মনে রাখবেন কথা গোপন থাকবে না, বের হবে।
আজকের ভারতের সাথে জিয়নবাদী ইসরাইলের সম্পর্ক একেবারে কাঁঠাল আর তার ভেতরের কোষের মত আষ্টেপৃষ্ঠে। এই সম্পর্ক কতটা ভাল তার একটা উদাহরন দেই। ইসরাইল তাদের ফিল্ড আর্টিলারির জন্য ছোট আকারের, সহজে বহনযোগ্য, ছোট ছোট রাডার সিস্টেম বানিয়েছে যা একেবারেই মৌলিক এবং মারাত্মক রকম কার্যকরী। এর নাম দেয়া হয়েছে 'আয়রন ডোম এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম'। মজার ব্যাপার হল, ইসরাইলের পিতা আম্রিকা যখন বিষয়টার প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে পুরো সিস্টেমটা দেখতে চেয়েছে, নেতানিয়াহু তখন সাফ ওদের মুখের উপর না করে দিয়েছে। আবার আমেরিকা যখন কিনতে চেয়েছে, তখন রাজধানী তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের বিষয়ে আমেরিকার অগ্রিম কর্মকান্ড দিয়ে প্রমান করতে হয়েছে তারা ইসরায়েলের-ই এক প্রকার এক্সটেনশন। আমেরিকা আয়রন ডোম পেয়েছে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে। ইসরাইল রাষ্ট্র জন্মের পর এমন ঘটনা কখনোই ঘটেনি। ভারত সেই রাডার সিস্টেম দেখেছে, বুঝেছে এবং জাহাজ ভর্তি করে নিয়েও এসেছে। ভারতই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা সর্বপ্রথম এ রাডার সিস্টেমের অধিকারী হল।
মাস কয় আগে ইসরাইল গাজায় যখন নারী আর শিশুদের মাথার খুলি গুলো উড়িয়ে দিচ্ছিল ( লং রেইঞ্জ স্নাইপার শট । এগুলোই একমাত্র ঠাণ্ডা মাথার সামরিক খুন। এজন্য জেনেভা কনভেনশন যুদ্ধ ক্ষেত্রে স্নাইপার রাইফেল অনুমোদন করেনা। ) তখন দুনিয়ার কোথাও এসবের স্বপক্ষে কোন মিছিল, মিটিং বা সমাবেশ হয়নি। এমনকি খোদ ইস্রাইলেও না। দুনিয়ার বেশির ভাগ শক্তি হয় চুপ থেকেছে নতুবা মিন মিন করে বলেছে,'উচিত নয়, উচিত নয়। কিন্তু ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে নিশ্চয়।' অন্যের দেশ দখল করে এরা আত্মরক্ষা করে যাচ্ছে। সেল্যুকাস ! এসব বলা আমার আজকের বিষয় নয়। আজ বলছি, সে সময় ভারত সরকার মহারাজ ইজরায়েলের পক্ষে বিশ লক্ষ লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে ইসরাইল দক্ষিন এশিয়ায় কতটা শক্তি রাখে। জয় ভারত মহারাজ, তোমাতে পুস্প চন্দন ঝরে পড়ুক।
ইয়াসির আরাফাত প্রায়ই শ্বাস-কষ্ট, জ্বর জাড়িতে ভুগেন। বার্ধক্য জনিত হাঙ্গামা লেগে থাকে বললেই চলে। তার এসব খবর আর মন দিয়ে শুনিনা। কত শুনব ? একেবারে শেষ সময়ে এসে উনি বুঝতে পেরেছিলেন কিনা আমার জানা নেই, সেক্যুলার পিএলও আর উগ্র ইসরাইল পাশাপাশি চলতে পারবে না। এ সন্দেহ আমার মনে দানা বেধেছিল এই কারনে যে, হামাস যখন গাজার নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয় তখন তিনি এর বিরোধিতা মুলক কোন বক্তব্য দেননি। আবার জনগন যখন হামাসকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে পেলেস্টাইনের শাসনভার তুলে দেয় তখন তিনি সে রায় মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু হামাসকে যখন পিএলও, ইসরাইল, আমেরিকা, সৌদি আরব সহ কিছু রাষ্ট্র বিনা কারনে ক্ষমতাচ্যুত করে তখনো মি আরাফাতকে এ কান্ডের সমর্থনে কোন বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। এসবের খিস্তিও আজকে আলোচনার কথা নয়। বলে যাচ্ছি শুধুমাত্র পরিস্থিতির একটা চিত্র একে দেবার আশায়। যা বলছিলাম, শেষবার যখন উনি অসুস্থ্য হলেন তখনকার পরিস্থিতিটা ঠিক বলে বোঝাতে পারব না। সবখানেই একটা লুকোচুরি ভাব লক্ষ্য করছিলাম। আমি খেয়াল করেছিলাম পিএলও প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে, ইসরাইলের বক্তব্য, ফ্রান্স সরকারের বক্তব্য আর হসপিটালের ডাক্তারদের বক্তব্য। আমার আশংকা হয়েছিল কিছু একটা লুকোচুরি হচ্ছে। আমার আশংকায় আর কি আসে যায়?
ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর বেশ কিছুদিন পর তার স্ত্রী অভিযোগ করলেন যে, আরাফাত কে হত্যা করা হয়েছে। এতে জড়িত ইসরাইল এবং পিএলও। এই বক্তব্যের পর থেকেই তিনি মিডিয়া ব্ল্যাক আউট। ফ্রান্স প্রথমে বলল যে তারা এ বিষয়ের কোন তদন্ত করবে না কিন্তু পরে তদন্ত করে বলল অভিযোগটি ভুয়া। কিন্তু সুইস একটা প্রতিষ্ঠান গোপনে লেগে রইল। বছর দুই পরে তারা ঘোষণা করল যে, ইয়াসির আরাফাতকে বিষ প্রয়োগে ধীরে ধীরে হত্যা করা হয়েছে। এই বিষের নাম পলোনিয়াম ২১০ ( এই বিষয়ে বিস্তারিত লেখার আশা রইল পরে কোন এক সময়ে)।
নামে নামে জমে চিনে বলে একটা কথা এদেশে এখনো আছে। আরাফাত রহমান কোকো নামের দুর্ভাগা এবং রোগা পটকা একটা ছেলে জন্মেছিল বাংলাদেশে। সম্ভবত জন্মই ছিল তার আজন্ম পাপ। সে জিয়া পরিবারে জন্ম না নিলে রাজার হালে এক জীবন কাটিয়ে দিতে পারত । যার বাবা এদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট, সাবেক সেনা প্রধান, এ দেশের স্বাধীনতার ঘোষক, যার মা এদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী এবং তিন তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী তাকে হিংসে করার লোক এ দুনিয়ায় খোঁজে পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশে পাওয়া যাবে বিস্তর। তো সেই আরাফাত কে বিনা দোষে যখন বারবার ইলেক্ট্রিক শক দেয়া হচ্ছিল তখনো তার মা দেশের কথা ভেবেই বলেছিলেন, সন্তানদের সঁপে দিয়েছি আল্লাহর হাতে কিন্তু দেশ ছেড়ে যাচ্ছিনা কোথাও। এসবেরই এক পর্যায়ে আওয়ালীগের প্রসব তখনকার সরকার আরাফাতকে দেশ ছাড়া করে। আগামিকাল আট বছর পরে যখন অভাগা আরাফাত আর তার মায়ের দেখা হবে তখন আরাফাতের দেহটা নিশ্চয়ই ফ্রোজেন থাকবে। আর কি বলব। হঠাত করেই মাথা থেকে লেখা চলে গেছে। ক্ষেপে গেছি।
লেখাটি লিখেছিলাম আরাফাত রহমান কোকোর লাশ দেশে ফেরার আগের দিন। প্রকাশ হচ্ছে সেই মৃত্যুর ছয় বছর বাদে। তবুও আরাফাত কে এদেশের মানুষ মনে রেখেছে। এদেশের ছেলেমেয়েদের খেলাধুলায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে তার ভুমিকা ছিল একেবারেই শুরুর দিকে। এটা খুব বড় কোন দোষ ছিল না যে তাকে দেশ ছাড়া করতে হবে। আমার প্রায়ই জানতে ইচ্ছে করে আরাফাত রহমানের রক্তে কোন ক্লটিং ডিজওর্ডার ছিল কি না। যাদেরকে হেপারিন বা ওয়ারফেরিন দিয়ে হত্যা করা হয়, তাদের বেলা শুধু অসুখটাকে কাজে লাগানো হয়। যে অসুধ তিনি নিয়মিত নেন, তার ডোজের কনসেন্ট্রেশন বাড়িয়ে দিলেই হল। শুরু হয় ইন্টারনাল ব্লিডিং। মৃত্যুর দিন দুই পরে ঠোট দুটো কালো হয়ে যায় সাবকিউটেনিয়াস লেভেলে। ঠোট, জিহবা তখন নীলচে কালো দেখায়। আমি মনে হয় এমন কালারের ঠোটই দেখেছিলাম আরাফাত রহমানের। এমন একটা কাজ করে পাশের স্টোরে একটা অসুধ ইমপ্ল্যান্ট করা কঠিন কিছু না। ইয়াসির আরাফাতকে পলোনিয়াম ২১০ দেয়া হয়েছিল তার বিশ্বস্ত লন্ড্রির দোকানের পানিতে। একটা রেডিও একটিভ মেটেরিয়াল। যার ফল ভোগ করতে হল ইয়াসির আরাফাতের প্রান দিয়ে। আমাদের ছোট ছেলে এমন কি করেছিল ?
ডা. জাকারিয়া চৌধুরী: ডেন্টাল সার্জন, কলামিস্ট
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়