সুজন কৈরী: সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীদের কাছে সোনার হরিণ ব্লু ব্যাজ। নিজের আইডির নিরাপত্তা, জনপ্রিয়তা বা ব্যবসায়িক প্রচারের পুরোটাই বহুগুনে বাড়িয়ে দেয় এই ব্লু ভেরিফাইড ব্যাজ। এতে অনেক ব্যবহারকারীর দৌড়ঝাপ দেন আইডি ভেরিফাইডের দিকে। আর এর সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ফেসবুক আইডি ব্লু ভেরিফাইড করার বিজ্ঞাপন দিয়ে চলছে অভিনব প্রতারণা। টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর আইডি হ্যাক করে তা ফিরিয়ে দেয়ার নামে আবারও অর্থ আদায় করা হয়। এমনই এক প্রতারক চক্রের হোতা সৈকত মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার সৈকত ৪০০ ডলার খরচ করে বিদেশি এক নাগরিকের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কিনেছেন। নিজেকে দাবি করতেন কানাডিয়ান নাগরিক হিসেবে। সেই অ্যাকাউন্টে মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচে পেজ ভেরিফিকেশনের বিজ্ঞাপন দেন। বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রতারিত হয়েছেন।
পুলিশ আরও জানায়, নিজেকে ভেরিফায়েড এক্সপার্ট ও কানাডিয়ান নাগরিক দাবি করা সৈকতের বাড়ি নরসিংদীতে। মিসরের একটি হ্যাকার দল অনলাইন ব্ল্যাক মার্কেটে এসব পেজ কেনাবেচার ব্যবসা করে বলেও তথ্য রয়েছে।
সৈকতের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে সৈকতকে শনিবার নরসিংদীর শিবপুর থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।
পুুলিশ জানায়, হৃদয় আহমেদ নামের বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তার ফেসবুক আইডি ভেরিফিকেশন করতে চান। এজন্য তিনি যোগাযোগ করেন ফেনবুকের একটি গ্রুপের সঙ্গে। ওই গ্রুপের একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে অগ্রিম ১০ হাজার টাকা আর নিজের ইউজার আইডি দেন। কিন্তু এরপর থেকে হৃদয় তার আইডিতে লগ ইন করতে পারতেন না। এরপর যাকে টাকা দিয়েছেন, তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু হৃদয়কে ব্লক করে দেয় ওই প্রতারক। এছাড়া বিভিন্ন ব্ল্যাক মার্কেটে থাকা গ্রুপগুলোতে হৃদয়ের আইডি বিক্রি করে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। উপায়ান্ত না পেয়ে হৃদয় যোগাযোগ করের পুলিশের সঙ্গে। করেন ডিজিটাল আইনে মামলাও। মামলা হওয়ার পর তদন্ত করে পুলিশ খোঁজ পায় চার্লস এন্ড্রুস ব্রায়াম নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টের। এর মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন হৃদয়। তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে পুলিশ জানতে পারে, নিজেকে কানাডিয়ান নাগরিক দাবি করা ওই ব্যক্তির আসল নাম সৈকত মিয়া। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সৈকত পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি ৪০০ ডলার খরচ করে মিসরীয় এক নাগরিকের কাছ থেকে তার ভেরিফায়েড পেজ কেনেন। এরপর নিজের নামে চালানো শুরু করেন।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, সৈকত মিয়া আসলে দুটি পদক্ষেপে এটি করতেন। প্রথমত বলতেন, ভেরিফায়েড করতে ২০ হাজার টাকা লাগবে। ১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করতেন। টাকা পাওয়ার পর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিতে বলতেন। পরে ওই ইউজার আইডি দিয়ে পেজের নিয়ন্ত্রণটা নিয়ে নিতেন। এভাবে প্রতারণা করতেন সৈকত।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ফেসবুক পেজ ভেরিফাই করতে কয়েক হাজার লোক সৈকতের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে তথ্য রয়েছে। তাদের অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারক সৈকতের সঙ্গে আর কেউ জড়িত আছে কিনা, তা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।