হারুন-অর-রশীদ: [২] জেলার চিরচেনা দৃশ্য হলো বাড়ির পেছনের অংশে বাঁশঝাড়, গাব গাছ আর বাগানজুড়ে অযত্নে বেড়ে ওঠা বেতগাছ। তবে এখন এসব হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। কংক্রিট সভ্যতার দাপটে কমে যাচ্ছে বেতগাছ, সেই সঙ্গে বেতফলও।
[৩] বেতগাছে ফুল আসে অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। আর ফল পাকে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। অপ্রচলিত হলেও অনেকের কাছে ফলটি খুবই প্রিয়। বেতফলের আরেক নাম বেতুল। এটি যেমন পুষ্টিকর তেমন সুস্বাদু। ঔষধিগুণে সমৃদ্ধও। মূলত মাটির অবস্থা ভেদে এই ফল খুব মিষ্টি কিংবা একটু টকও হয়। বেতফল মরিচ দিয়ে চাটনি করে খেতে খুব মজাদার।
[৪] ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে বেতফল পাকে। অনেক সময় বৈশাখ মাস পর্যন্তও বেতফল থাকে। পাকা বেতফল এমনিতেই খেতে দারুণ সুস্বাদু।
[৫] ফরিদপুরের সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ড. মো: রেজাউল করিম বলেন, 'শীতের সময়, বিশেষ করে শীতের শুরুতে ফুল আসে বেত আসে। আর শীত শেষ হওয়ার পর গরম শুরুর সময় বেতফল পাকে। তবে আবহাওয়ার কারণে কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে এর। তিনি বলেন, জনসংখ্যার বাড়তি চাপের কারণে বন জঙ্গল উজাড় করে ফেলা হচ্ছে। ফলে বেত গাছও দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে।'
[৬] গ্রামের কৃষকের অতি প্রয়োজনীয় গাছ হিসেবে পরিচিত বেতগাছ। বেত দিয়ে বিভিন্ন হস্তশিল্প যেমন চেয়ার, টেবিল, মোড়া, ডালা, কুলা, চাঙ্গারি, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, গোলা, ডোল, ডুলা, আউড়ি, চাঁচ, ধামা, পাতি, বই রাখার তাক, সোফা, দোলনা, খাট, ঝুড়ি, টেবিল ল্যাম্প, ল্যাম্পশেড ইত্যাদি তৈরি করা হয়। এটি গৃহনির্মাণ কাজেও ব্যবহার হয়।
[৭] বিশেষ করে রেস্তোরাঁ বা অফিসের কে শৌখিন পার্টিশন হিসেবে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এ ছাড়া লম্বা বেত ফালা করে নানা কিছু বাঁধার কাজেও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কালের আবর্তে মানুষ তার প্রয়োজনে ঝোঁপ-ঝাড়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলছে।
[৮] খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে কৃষক শ্রেণির মানুষ বেত বিক্রি করার জন্য আসতেন। একটি ২০-২২ হাত লম্বা বেত আগে বিক্রি হতো ২০ থেকে ২৫ টাকায়। কিন্তু আজ সে বেত ১৫০ টাকা দিলেও পাওয়া যাচ্ছে না।
[৯] বেত ব্যবসায়ী আরমান ভূইয়া বলেন, 'আমি এই ব্যবসার সঙ্গে প্রায় ১৫ বছর ধরে জড়িত। কয়েক বছর আগেও মুঁড়া বা ধামার চারদিক মজবুত করে গিঁট দেওয়ার জন্য বেত ব্যবহার করা হতো। আজ বেত অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য হওয়ায় তার স্থান দখল করেছে প্লাস্টিকের দড়ি বা রশি।'
[১০] বেঁচে থাকার তাগিদে পুরোনো বেত ব্যবসায়ী অনেকেই পেশা পরিবর্তন অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষ বাড়ির আশপাঁশের ঝোঁপঝাড় কেটে পরিষ্কার করে সেখানে ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। এতে প্রকৃতি থেকে যেমন হারিয়ে যাচ্ছে একটি প্রয়োজনীয় প্রজাতির লতানো গাছ, তেমনি হারাচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য।' সম্পাদনা: জেরিন
আপনার মতামত লিখুন :