শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারী, ২০২১, ০৬:০১ সকাল
আপডেট : ২১ জানুয়ারী, ২০২১, ০৬:০১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মুখের ১০ পাপ পরিহার মুমিনের কর্তব্য

আবদুল্লাহ আল ফুআদ: মানুষের যেসব অঙ্গের মাধ্যমে গুনাহ সংঘটিত হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মুখ। যে ব্যক্তি মুখ সংযত রাখতে পারবে, অনেক কবিরা গুনাহ থেকে তার বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। মুখের কথার প্রভাব খুবই শক্তিশালী। চাই সেটা ভালো হোক বা মন্দ। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশৃঙ্খল পরিবেশের পেছনে মানুষের মুখের অসংযত কথাই প্রধানত দায়ী। কালের কণ্ঠ

এখানে ১০টি মৌখিক পাপের বিষয়ে আলোচনা করা হলো—

মিথ্যা বলা : মৌখিক পাপগুলোর মধ্যে মিথ্যা সবচেয়ে ভয়াবহ। ছোট একটি মিথ্যা সারা জীবনের অর্জিত সব সম্মান ম্লান হতে পারে। তাই রাসুল (সা.) মিথ্যাকে বৃহত্তর গুনাহ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এই মিথ্যা মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। হাদিস শরিফে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সত্য পুণ্য ও নেক আমলের পথ দেখায়। আর নেক আমল জান্নাতের পথ দেখায়। আর ব্যক্তি সত্য বলতে বলতে আল্লাহর কাছে সিদ্দিক (মহাসত্যবাদী) হিসেবে পরিগণিত হয়। আর মিথ্যা পাপের পথ দেখায়। আর পাপ পাপীকে জাহান্নামে নিয়ে যায়। ব্যক্তি মিথ্যা বলতে বলতে আল্লাহর খাতায় ‘কাযযাব’ (চরম মিথ্যুক) বলে চিহ্নিত হয়ে যায়।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৯৪)

দোষ চর্চা: মৌখিক পাপসগুলোর অন্যতম হচ্ছে গিবত বা দোষচর্চা। অনেক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির এটিই মূল। তাই এই ঘৃণ্য কর্ম থেকে বিরত থাকতে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কেউ যেন কারো পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি স্বীয় মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করতে পছন্দ করবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

চোগলখুরি করা: বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের দোষ অন্যের কানে পৌঁছে দেওয়াকে চোগলখোরি বা কূটনামি বলে। যারা চোগলখোরি করে বেড়ায়, তাদের কবরে ভয়াবহ শাস্তি হওয়ার কথা হাদিসে রয়েছে। একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) কোথাও যাচ্ছিলেন। দুটি নতুন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে দাঁড়িয়ে দোয়া করলেন। এরপর খেজুরের একটি ডাল দুই টুকরা করে কবর দুটিতে পুঁতে দিলেন। সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর কারণ জিজ্ঞেস করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কবর দুটিতে শাস্তি হচ্ছে। কিন্তু এমন কোনো গুনাহর কারণে শাস্তি হচ্ছে না, যা থেকে বেঁচে থাকা কঠিন ছিল। সহজেই তারা ওই সব থেকে বাঁচতে পারত; কিন্তু বেঁচে থাকেনি। একজন প্রস্রাবের ফোঁটা থেকে বেঁচে থাকত না, অন্যজন চোগলখোরি করে বেড়াত।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭২৮)

অশ্লীল গালি দেওয়া: রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি [আল্লাহর অবাধ্য আচরণ] এবং তার সঙ্গে লড়াই-ঝগড়া করা কুফরি।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৫)

উপহাস করা: কাউকে উপহাস করা কিংবা মন্দ নামে ডাকা ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে হিংসা-বিদ্বেষ বৃদ্ধি পায়। অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাই এসব মন্দ নামে ডাকা থেকে বিরত থাকতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা, কোনো সম্প্রদায় যেন কোনো সম্প্রদায়কে উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চেয়ে উত্তম। আর নারীরা যেন নারীদের উপহাস না করে। হতে পারে তারা তাদের চেয়ে উত্তম। তোমরা পরস্পরের দোষ বর্ণনা কোরো না এবং একে অন্যকে মন্দ নামে ডেকো না। বস্তুত ঈমান আনার পর মন্দ নামে ডাকা হলো অন্যায়মূলক কাজ...।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১১)

মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া: প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখার একটি মাধ্যম হলো মামলা দায়ের করা এবং মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে তাকে অন্যায়ভাবে বিপদে ফেলা। একজন মুমিন কখনোই মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে পারে না। একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) হেলান দিয়ে বসে ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি সাহাবাদের বলেন, কবিরা গুনাহ সম্পর্কে কি আমি তোমাদের বলব? সাহাবারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, বলুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, অন্যতম কবিরা গুনাহ হলো, কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা (শিরক করা), মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া। এ কথা বলে নবী করিম (সা.) সোজা হয়ে বসেছেন এবং বলেছেন, মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া। এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন। (বুখারি, হাদিস : ২৬৫৪)

আল্লাহর নামে মিথ্যা শপথ: যথাযোগ্য জায়গায় শপথ করা বৈধ। শপথ করা হয় আল্লাহর নামে। এই শপথ যদি হয় মিথ্যা, তাহলে এটি হবে চূড়ান্ত পর্যায়ের অন্যায়। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি (মিথ্যা) কসমের মাধ্যমে কোনো মুসলিমের হক কেটে দেয় (মিথ্যা কসমের মাধ্যমে কাউকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে)। আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত করে দেন এবং জান্নাত হারাম করে দেন। এ কথা শুনে এক সাহাবি বলেন, যদি সামান্য বস্তুর ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে? নবীজি বলেন, হ্যাঁ, যদি আরাকের (এক প্রকার গাছ) সামান্য একটি ডালও হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৩৭)

খোঁটা দেওয়া: আবু জার (রা.) বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি এমন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা যাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদের পরিশুদ্ধ করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আবু জার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এ কথাটি তিন-তিনবার বলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, তারা কারা, তারা তো সর্বস্বান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল? তিনি বলেন, (ক) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে; (খ) যে ব্যক্তি উপকার করার পর খোঁটা দেয় এবং (গ) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৬)

অনর্থক কথা বলা: যেখানে-সেখানে অপ্রয়োজনে কথা বলার দ্বারা ব্যক্তিত্ব হালকা হয়ে যায়। সমাজে তার মূল্যায়ন কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে অনর্থক কথায় অযাচিত বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। তাই ইসলামে একে অসুন্দর আখ্যায়িত করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের জন্য ইসলামের সৌন্দর্য হচ্ছে তার অনর্থক কথাবার্তা পরিহার করা।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৯৭৬)

অভিশাপ দেওয়া: কাউকে যখন-তখন অভিশাপ দেওয়া গর্হিত কাজ। হাদিসে এই অভিশাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘তোমরা পরস্পর আল্লাহর লানত, তার গজব ও জাহান্নামের অভিশাপ দেবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৮৬)

কারণ এই অভিশাপ অনেক ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে, সে যদি এর যোগ্য হয়, তাহলে তার প্রতি পতিত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর দিকেই তা ধাবিত হয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯০৭)

আল্লাহ আমাদের নিন্দনীয় এসব মৌখিক পাপ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়