রাশিদ রিয়াজ : গবেষকরা ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৯৯৪ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখতে পেয়েছেন অর্থই তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন ৩৩ হাজার ৩৯১ জন। এসব মার্কিন নাগরিকরা বলছেন তাদের পারিবারিকভাবে আয় যত বেড়েছে ততই তারা সুখী অনুভব করেছেন। এর আগে আরেক গবেষণায় বলা হয়েছিল এধরনের সুখ পেতে বছরে অন্তত ৭৫ হাজার ডলার আয়ের উৎস থাকা জরুরি। কিন্তু নতুন গবেষণা বলছে অর্থ সত্যিই আপনাকে সুখী করে এবং আপনি কতটা ধনী তার ওপর সেটি নির্ভর করে না। ডেইলি মেইল
দীর্ঘদিন ধরে ধারণা বিরাজ করছে অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা পর্যন্ত মানুষের জীবনকে সুখী করে তুলতে পারে। এবং এক পর্যায়ে অর্থ অনর্থের কারণও হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে আপনি ধনী হচ্ছেন এ অনুভূতি আপনার মনের সুখ ও সুস্থতা বাড়িয়ে দেয় যার কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার অধ্যাপক ড. ম্যাথিউ কিলিংসওয়ার্থ বলেন সম্পদ ও মঙ্গলের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। তিনি গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন মোবাইল ফোনে প্রশ্ন করা হয়েছে, ঘুম থেকে ওঠার পর, ঠিক এখনি আপনার কেমন লাগছে, কেমন অনুভব করছেন? এধরনের প্রশ্নের উত্তরে ধনীরা বলেছেন ভাল, বেশ ভাল। দেখা গেছে উচ্চ আয়ের মানুষ তাদের জীবনকে অতি সহজে সুনিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। যা তাদের জীবন পারতপক্ষে সুখ সৃষ্টি করে। তার মানে সুস্থতা পরিবারের আয়ের সাথে রৈখিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং এধরনের প্রভাবের কোনো সীমা নেই। এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে প্যানাস।
ড. কিলিংস ওয়ার্থ বলেন গবেষণার ফলাফল সাধারণ মানুষের যথেষ্ট নজর কেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ নমুনা বিশ্লেষণ করে বিশাল আকারে অভিমত পাওয়া গেছে যে দীর্ঘদিন ধরে ভালো আয়ের মানুষরা ক্রমাগত সুখের এক স্তর থেকে আরেক স্তরে পৌঁছে গেছেন। তার মানে উচ্চ আয় মানুষকে দিনের পর দিন তার সার্বিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। এর সঠিক কারণ জানা সম্ভব হয়নি। এক পর্যায়ে অর্থ সুস্বাস্থ্য বা সুখের পরিমান বাড়াতে পারে না বলে দাবি করা হলেও তা বরং ভুলই প্রতীয়মান হয়েছে। প্রুডো ইউনিভার্সিটির আরেক গবেষণা বলছে বছরে ৪৩ থেকে ৫৪ হাজার পাউন্ড বা ৬০ থেকে ৭৫ হাজার ডলার আয় সম্পদশালী সুখী হয়ে উঠতে আদর্শ হিসেবে কাজ করে। তবে বছরে ৯৫ হাজার ডলার আয় করছেন এমন অনেকে বলেছেন তারা তাদের জীবনে সফলতা হাতের মুঠোয় ধরতে পেরেছে। গ্যালাপ ওয়ার্ল্ড পোলের তথ্য এ গবেষণায় কাজে লাগানো হয়েছে। এতথ্যে ১৬৪টি দেশের ১৭ লাখ মানুষের কাছে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিল।
এছাড়া সদয় হওয়া সুখী হওয়ার আরেক উপায় বলছেন গবেষকরা। গবেষণায় দেখা গেছে উদারতার সঙ্গে যুক্ত মানুষের মস্তিষ্কের একটি অঞ্চলে নিউরনগুলো ভেন্ট্রাল স্ট্রিটামে নিউরনগুলো সক্রিয় করে, যা সুখের উদ্দীপনা তৈরি করে। সুইজারল্যান্ডের ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবী চার সপ্তাহের জন্যে প্রতি সপ্তাহে ২৫ ডলার করে খরচ করে একটি পরীক্ষায় অংশ নেন। এরপর তারা যখন একটি স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন তাদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ পরিমাপ করে দেখা যায় আচরণের ক্ষেত্রে তারা কম বা বেশি উদারতার পরিচয় দিচ্ছেন। তাদের বাছাই করা ব্যক্তিদের অর্থ দেয়ার বিপরীতে অন্যদের তা দিতে বলা হয়েছিল। এবং এধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা অধিকতর উদারতার পরিচয় দেন। একই সঙ্গে নিজেদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও তারা বেশ সুখী ছিলেন। এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে জার্নাল ন্যাচার কমিউনিকেশনে।