রাহুল রাজ: [২] লোকজ শিল্পকে লালন, আর সেই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার নিরলস প্রচেষ্ঠায় নিবেদিত গোপালগঞ্জ জেলার তরুণ কারুশিল্পী সুনির্মল দাস বাপী। ২৭ বছরে বয়সে লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরী করে ইতোমধ্যে ব্যপক পরিচিতি লাভ করেছেন।
[৩] প্রায় হারিয়ে যাওয়া ৬৫ প্রকারের বাদ্যযন্ত্র নতুন করে তৈরি করে নতুন প্রজন্মের কাছে উপস্থাপন করে যাচ্ছেন এই মেধাবী তরুণ।
[৪] গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার গান্ধিয়াশুর গ্রামে নিজ বাড়িতেই তৈরি করছেন গ্রামবংলার এসব বাদ্যযন্ত্র। বাপী গোপালগঞ্জ সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স, মাষ্টার্স এর পাশাপাশি ডিএইচ,এম,এস শেষ করেছেন। বর্তামানে তিনি এল,এল,বি ও বি,পি, এড, অধ্যয়নরত আছেন। তার বাবা সুনীল কুমার দাস অবসর প্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ছোটবেলা থেকে বাপীর কারুশিল্পী ও গান বাজনা পছন্দ করে আসছেন।
[৫] ১০ বছর বয়সে একইগ্রামের বর্ষিয়ান কারুশিল্পী, বিজয় পান্ডের কাছে তার হাতে খড়ি। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণের পরে দেশীয় হারিয়ে যেতে বসা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র আবার ফিরিয়ে আনতে মনোনিবেশ করেন নতুন ভাবে এসব তৈরি করার। ইতিহাস ঘেঁটে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন বাংলার অনেক পুরাতন বাদ্যযন্ত্র। বাড়িতে বসেই নিজ চেষ্ঠায় কাঠ, বাঁশ ও ফেলনা জিনিষ দিয়ে তৈরি করতে থাকেন একের পর এক বাদ্যযন্ত্র। তৈরির পরে সে যন্ত্র বাজিয়ে সবাইকে তাক করে দিতেন।
[৬] আস্তে আস্তে তার তৈরির তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে। বর্তমানে তার তৈরির তালিকায় রয়েছে ৬৫ টি বাদ্যযন্ত্রের নাম।
কাঠ দিয়ে তৈরি করেছেন, দোতারা, খমক, ক্ষঞ্জনি, কাঠ সেকার, সরজ, বেহালা, কাহন, ডাক, ঢোল, তবলা, সেকার, সানাই, প্রেমজুড়ি, রাবন বীনা, কাড়া, জয়ঢাক, একতারা, পাখয়াজ, নাল, চাপটি ঢোল, ডুগডুগি, সরজ।
[৭] বাশথেকে তৈরী করেছেন, চটা, বাঁশি, মোহন বাঁশি, গুপিযন্ত্র, ফুরাংফাং বাঁশতরঙ্গ।
[৮] নারকেলের মালা থেকে একতারা, মনসেকার, মেরাকাচ, বীন বাঁশি প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র।
[৯] ফেলনা জিনিস থেকেও তৈরি করেছেন বাদ্যযন্ত্র। দুধের কোট্টা, মেলামাইনের প্লেট, শামুক, তালের আঠি, মেটো চাড়া, গাড়ির হর্ন, প্রভৃতি ফেলানো জিনিস থেকেও বাদ্যযন্ত্র তৈরী করে ভিন্ন সুর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন বাপী।
[১০] ২০১৭ সালে ঢাকা কেন্দ্রিয় শহিদ মিনারে ও গোপালগঞ্জ জেলার মেলাতে বাপীর তৈরি এসব বাদ্যযন্ত্র প্রর্দশনী হয়ে সবার প্রশংসা কুঁড়িয়েছে।
[১১] সুনির্মল দাস বাপী শুধু একজন কারুশিল্পী নয় তিনি বহুপ্রতিভার অধিকারী। তিনি একাধারে মিমিক্রি ও অভিনয় শিল্পী।
[১২] সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাপী নিজ বাড়ীতে একটা বাদ্যযন্ত্রের জাদুঘর তৈরী করবেন বলে জানান।