মোরশেদ শফিউল হাসান : ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পর যেসব সাংবাদিক-শিক্ষক-লেখক-বুদ্ধিজীবী বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে গিয়াস কামাল চৌধুরী, রিয়াজ উদ্দিন আহমদ এবং অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর পূর্বাপর ভূমিকা তাদেরকে আওয়ামী-বাকশাল রাজনীতির বিরোধী হিসেবেই তুলে ধরে (তাদের মধ্যে একজন রিয়াজ উদ্দিন আহমদ অবশ্য এক সময় ছাত্রলীগ করতেন)। তবে সেদিন কেন বা কোন পরিস্থিতিতে তারা বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন বা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন আজ পর্যন্ত সে-সম্পর্কে কোথাও কোনো ব্যাখ্যা-বিবৃতি দিয়েছেন কি? সাংবাদিকদের মধ্যেও সেদিন নির্মল সেন, কামাল লোহানী, এমনকি আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত নাজিমুদ্দিন মানিক, শফিকুল আজিজ মুকুল ও ফেরদৌস আলম দুলাস্লের মতো কয়েকজন যেখানে বাকশালে যোগদানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যেও যখন ড. আহমদ শরীফ, অধ্যাপক মমতাজুর রহমান তরফদার, সনজীদা খাতুনসহ অনেকে বাকশালে যোগ দেননি, তখন কেন প্রথমোক্তদের বাকশালে যোগ দিতে হলো?
অন্যদিকে আবুল ফজল, বেগম সুফিয়া কামাল, আবু জাফর শামসুদ্দিন, আবদুল গাফফার চৌধুরী (তিনি মনে হয় তখন দেশে ছিলেন না), শামসুর রাহমান, ওয়াহিদুল হক, আবেদ খান, নির্মলেন্দু গুণ, শাহরিয়ার কবীর, মুনতাসীর মামুন- তাদের কেউ কিন্তু সেদিন বাকশালে যোগ দেননি (দু- একজন এমনকি খোদ বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে অনুরোধ/আমন্ত্রণ পেয়েও)। তাদের অনেকে আজ মৃত, আর জীবিত যাদের নাম উল্লেখ করলাম তাদের সব কজনই বর্তমানে আওয়ামী রাজনীতির সমর্থক বা তার প্রতি মোটামুটি সহানুভূতিশীল বলে পরিচিত। কিন্তু কথা তা নিয়ে নয়। প্রশ্ন হলো, সেদিন তাদের বাকশালে যোগদান না করার সিদ্ধান্তটাকে তারা আজ কীভাবে মুল্যায়ন করেন? তারা কি ভুল করেছিলেন, আর সেজন্য তারা আজ অনুতপ্ত? নাকি মনে করেন নীতিগতভাবে বা ওই সময়ের জন্য তাদের সে সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো? এ-সম্পর্কে তারা এ-যাবৎ কোথাও কিছু লিখেছেন বা বলেছেন কী? স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাস চর্চার জন্য এ-প্রশ্নগুলোর গুরুত্ব যে আছে, শুধু তাই নয়- এগুলোর উত্তর পাওয়া জরুরি বলেও মনে করি। এ বিষয়ে কারো কিছু জানা থাকলে জানাবেন আশা করি। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :