শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারী, ২০২১, ০৯:০৩ সকাল
আপডেট : ১৫ জানুয়ারী, ২০২১, ০৯:০৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : সমসময় : অপরাধের সঙ্গে দুর্নীতির যোগ

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : দুর্নীতি এবং নীতিপঙ্গুতা যদি একটি সমাজে প্রকট হয়ে ওঠে তখন সামাজিক পরিসরটি দখল করে নেয় অপরাধীরা। রাজধানীর কলাবাগানে স্কুলে পড়া কিশোরী ছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। বন্ধুর ডাকে তার বাড়িতে পড়তে গিয়ে মেয়েটি আজ নির্মম নির্যাতন সইয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। মেয়েটি তার বন্ধুকে বিশ্বাস করেছিলো। কিন্তু এই সমাজে যে মেয়েদের জন্য বিশ্বাস বা বন্ধুত্ব কীভাবে ধর্ষিত হয়ে গেছে তার তরতাজা নিদর্শন এ ঘটনা। অনেকেই বলছেন বিষয়টা এক ভয়াবহ নৈতিক বিপর্যয়কে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। একটা বিভাজিত রাজনৈতিক পরিবেশে অবক্ষয়িত সামাজিক এক পরিবেশে বাস করছি আমরা। তাই আমরা দেখি যখনই কোনো মেয়ে নির্যাতন বা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন তখনই তাকেই দোষ দেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। সামাজিক মাধ্যম, বিভিন্ন আলোচনায় মেয়েটিকেই দায়ী করে বলা হচ্ছে, কেন সে ওই বাড়িতে গেলো। এর আগেও নানা সময় ধর্ষণের শিকার নারীকেই দায়ী করে নানা কথা বলাবলি হয়েছে।
মানুষের মনোজগতের এই ভয়াবহতা দেখে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন যে তবে কি আইন করে এই ভিকটিম ব্লেমিং বন্ধ করতে হবে? কারণ, ভুক্তভোগীকে দোষ দেওয়ার এই চর্চা সামাজিক অবস্থার সঙ্গে বিচার ব্যবস্থা এবং বিচার প্রক্রিয়ায়ও প্রতিফলিত হতে পারে। আমরা হয়তো অনেক কথাই বলবো যে পরিবারের এখানে ভূমিকা ছিলো। মেয়েটি কার সঙ্গে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে এসব খেয়াল রাখা দরকার ছিলো পরিবারের। আমরা যখন এমন কথা বলি তখন আমরা একবারও ভাবতে চাইনা যে এভাবে মোরাল পুলিশিং করে, গোয়েন্দাগিরি করে সবকিছুর সমাধান হয় না। একটা সমাজে, পরিবারে, রাজনীতি ও প্রশাসনের সব পরিসরে যদি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ প্রবল বেগে ঢুকতে থাকে তখন তার প্রভাব পড়ে সব ক্ষেত্রে। দুর্নীতিতে সমাজের শক্তিধর বা ক্ষমতাবান মানুষেরা জড়িত। কোনো সরকারি বা বেসরকারি কাজ পেতে, নাগরিক সুবিধা পেতে, দ্রুত কাজ আদায় করতে, চাকরি পেতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘুষ লেনদেন বা দুর্নীতি ছাড়া কাজ হয় না এমন ধারণা কমবেশি সবার। অল্প বয়সী শিক্ষার্থীরাও নকল থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো দুর্নীতিতে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ে, করছে খুনখারাবি, মাদকের ব্যবসা এবং যৌন সহিংসতা।
আমরা কথায় কথায় বলি মূল্যবোধের অবক্ষয়। কিন্তু এই আমরাই আমাদের পাশের বাড়ির অমুক ভাইয়ের কিংবা চাচা, মামাদের চাকরির বাইরের উপরি আয় নিয়ে গর্ব করি। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে প্রতিনিয়ত মাত্রাতিরিক্ত বৈভব আর স্ফুর্তির প্রদর্শনী দেখতে দেখতে একে আমরা সামাজিক বৈধতা দিয়েছি। অভিযুক্ত দিহানের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার। কিন্তু পত্রিকান্তরে বেরিয়েছে তার অঢেল সম্পদের বিবরণী। এইটুকু ছেলেকে পরিবারের গাড়ির বাইরে আলাদা গাড়ি কিনে দিয়েছেন তিনি। চাইতে বা না চাইতে এভাবে প্রাপ্তিযোগ একজন কিশোরকে কোন পর্যায়ের দুর্বীনিত করে তোলে সেটা কি ভাবছি আমরা? অপরাধের সঙ্গে দুর্নীতির এই যোগ নিয়ে কথা বলবো কী আমরা?
অবক্ষয়ের কথা আমরা জানি। একটি শিশুর প্রাথমিকভাবে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি তার পরিবারের মাধ্যমেই শুরু হয়। তার পরে তাকে শিক্ষা দেয় সামাজিক পরিবেশ এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এখন পরিবারে, শিক্ষাঙ্গনে যদি সে দুর্নীতির অর্থ আর অনিয়মের ছোটাছুটি দেখে তাহলে তার মগজে কি ঢুকে সেটাও ভাবা দরকার। বর্তমানে তথাকথিত আধুনিকতার প্রভাবে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক হারে নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের সমস্যা প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠছে। এক্ষেত্রে কোনো রকম স্থান, কাল, পাত্র ভেদ থাকছে না। তা সে শহরই হোক বা গ্রামেরই হোক। অল্প বয়সী মাদকাসক্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে। সহজে টাকা রোজগারের জন্য বিপদগামী হতেও দ্বিধাবোধ হচ্ছে না তারা। এক সার্বিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন বর্তমান প্রজন্মের এক বিশাল অংশ। আমাদের রাজনীতিতে চলছে বিদ্বেষের চর্চা। আমাদের সেবা পরিষেবায় ব্যাপক দুর্নীতি। আমাদের শিক্ষাঙ্গন থেকে উঠে যাচ্ছে নীতি নৈতিকতা। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ বিপন্নবোধ করছে। অবক্ষয় যেভাবে আমাদের ঘিরে ধরেছে তাতে আমরা সন্তানদের মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে পারবো না, এটাই স্বাভাবিক। ক্ষমতাবৃত্তে যারা বিচরণ করেন তারা জনগণের এই বিপন্নতার বোধকে থোরাই সমীহ করেন। খুন, ধর্ষণ, দখল, লুটসহ নারী ও সাধারণ মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়মিত ঘটছে। বিচারের বাণী যে নীরবে নিভৃতে কাঁদে তাতে সংশয়ের অবকাশ নেই, যদিও শাসনপ্রণালি বা ক্ষমতাবৃত্তের ভেতরে অবস্থানকারীরা সুশাসনের গল্প আমাদের শুনিয়েই যাচ্ছেন। গণতন্ত্রের যে স্তম্ভগুলোকে আগে মজবুত বলে মনে হতো, এখন তারা ভঙ্গুর। তাই মানুষ আজ বিপন্ন। এ কারণেই আজ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে ঢাকার কলাবাগানে বিকৃত যৌনাচার, খুন আর খতমের ঘটনা। একের পর এক এমনটা ঘটলে মানুষ আর কতোটা খারাপ থাকবে, মানুষ আর কতোটা বিপন্ন হবে তা জানতে ইচ্ছা করে। বাংলাি ট্রবিউন। লেখক: সাংবাদিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়