আমিনুল ইসলাম : সত্যি বলতে কী, দেশে থাকতে বোধ করি আমি সেই অর্থে আমরা বাংলাদেশিরা কেমন, খুব একটা বুঝতে পারিনি। বিদেশে এসে ভালো ভাবে বুঝতে পারছি। দুই একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন আপনি একা একটা বাসায় থাকেন। আপনার বাসায় কোনো বাংলাদেশি এসেছে। বাসায় ঢুকেই বলবে এমন একটা বাসায় একা থাকলে তো আমি দম বন্ধ হয়েই মরে যেতাম। তখন আপনার কী করা উচিত? আপনি যে এখনো দম বন্ধ হয়ে মরে যাচ্ছেন না। এজন্য আনন্দিত হয়ে ৩২ দাঁত বের করে চমৎকার একটা হাসি দেওয়া ছাড়া তো আর কিছু করার নেই। রাস্তায় হেঁটে বেড়াচ্ছেন। হঠাৎ কোনো বাংলাদেশির সঙ্গে দেখা হলো। একটা কথার পর দ্বিতীয় কথা বলার আগেই বলে বসবে বিয়ে করছেন না কেন? কবে করবেন? এভাবে আর কতোদিন? এভাবে কী আর থাকা যায়? তো, আপনার কি উত্তর দেওয়া উচিত তখন? খুব দুঃখী দুঃখী চেহারার একটা ভাব নিয়ে বলতে হবে হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন। এভাবে কী আর থাকা যায়। আহা, কতো কষ্ট দৌড়ে বাস থেকে নামছেন। অমনি এক বাংলাদেশির সঙ্গে দেখা। পরের কথাটাই হবে গাড়ি কিনছেন না কেন? এই শহরের আপনার ছাত্রদেরও তো গাড়ি আছে।
আর আপনি কিনা এভাবে দৌড়ে দৌড়ে বাসে উঠছেন তো, আপনার তখন কি বলা উচিত? একটু হাসি, একটু কষ্ট এমন একটা ভাব নিয়ে দ্রুত কেটে পড়ার চেষ্টা করবেন। অথচ তাদের কারও সঙ্গেই হয়ত আপনার কোনো বন্ধুত্বের সম্পর্ক নেই। নেই কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক। আসলে সেই অর্থে কোনো সম্পর্কই নেই। স্রেফ একই শহরে থাকা। ছয়মাস এক বছরে হয়তো একবার দেখা হয়। এসব কথা আপনি কাদের সঙ্গে বলবেন? যাদের সঙ্গে আপনার একটা ভালো সম্পর্ক আছে। যাদের সঙ্গে আপনি আপনার একান্ত বিষয়গুলো ভাগাভাগি করেন। তাদের সঙ্গেই না আপনি এসব বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। তাছাড়া কেউ একজনের দুর্বলতা যখন আপনি জানেন, কোনো দুঃখে সেটা আপনি তাকে মনে করিয়ে দেবেন? আমরা বাংলাদেশিরা মনের আনন্দে সেটা করে বেড়াই। এতো বছর এই দেশে থাকি। আমার এই দেশি সহকর্মীরা আমাকে আজ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করেনি তুমি কার সঙ্গে থাকো? তুমি কি একা? তোমার কি গাড়ি আছে? ইত্যাদি। এর মানে কি ইউরোপিয়ানরা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে না? অতি অবশ্যই করে। যার সঙ্গে আপনার সে রকম সম্পর্ক আছে। যার সঙ্গে আপনি নিজ থেকে এসব বিষয় ভাগাভাগি করছেন কিংবা যাকে আপনি কাছের ভাবছেন; তাদের সাথে বন্ধু তারাও আলোচনা করে। আর আমরা যে কারও সঙ্গে এমন আলোচনা জুড়ে দিই। ধরুন আপনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তো অন্য একজন বাংলাদেশি এসে বলবে আরে এসব দেশে তো ডাক্তারের কাছে গেলেই হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়, অর্থাৎ, আপনি যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সেটাও আর এমন কি। বিশ্বাস করুন, এসব আমি হাজারও বার শুনেছি। আমার সব সময়ই মনে হয়, আমরা বাংলাদেশিরা ছোট থেকে বড় হতে থাকি অন্যকে ছোট করার এক অদ্ভুত শিক্ষা নিতে নিতে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :