‘মেয়েই আমার সংসারটা চালাত। মুহূর্তেই সংসারটা কানা করে দিয়ে গেল ঘাতক ট্রাক। আমি এখন কীভাবে সংসার চালাব, কোনো কূলকিনারা দেখতে পারছি না।’ কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন আশার মা পারভিন আক্তার। মিনিট খানেক কান্নার পর বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘আমার আশা কই গেল। কই গেলি মা আশা।’ পাশ থেকে সমস্বরে দুই-তিনজনের কান্নার শব্দ শোনা যায়। ধারণা করা যায়, তাঁরা আশার ছোট তিন বোন মিম, তিশা ও তিথি। বড় বোনকে হারিয়েছে, পড়াশোনা কীভাবে শেষ করবে তারা, নিজেরাও জানে না।
তিন বোনকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি স্বপ্ন দেখতেন বড় বোন আশা। যেখানেই থাকুক, প্রতিদিন তিন থেকে চারবার ফোনে ছোট বোনদের খবর নিতেন তিনি। চার বোন একত্রে আড্ডা দিতেন, খেতেন, ঘুরতে যেতেন। বড় বোন শুটিংয়ের কাজে বাইরে থাকলে অন্যরা জেগে তাঁর জন্য অপেক্ষা করত।
২ জানুয়ারি আশা চৌধুরী অভিনয় করেন ‘দ্য রিভেঞ্জ’ নাটকে। এই নাটকেই প্রথমবারের মতো প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন আশা। তাঁর সহশিল্পী ছিলেন সালাহউদ্দিল লাভলু ও আনিসুর রহমান মিলন। নাটকটির পরিচালক ছিলেন রুমান রুনি।
ছোট তিন বোন ছিল আশার ভীষণ আদরের। তাদের পড়াশোনাসহ সব খরচ দিতেন আশাই। আশার ছোট সুমাইয়া আক্তার মিম মিরপুর রূপনগর মডেল কলেজে পড়াশোনা করে। আশার সবচেয়ে আদরের ছিল সে। পরিবারের টানাপোড়েনের কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে মিম। আশা তাকে সব সময় বলত, যেন চিন্তা না করে। সাহস দিত, ভবিষ্যতে তাকে বড় ইঞ্জিনিয়ার বানাবেন। সব সময় মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে বলতেন। সেই বোনকে হারিয়ে এখনো কান্না থামছে না মিমের। বোনের মরদেহ বাড়িতে যাওয়ার পর কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারাচ্ছিল মিম। বোনের শোকে কাঁদতে কাঁদতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাকে মিরপুরের একটি হাসপাতালে নিতে হয়। কান্নাজড়ানো কণ্ঠে মিম জানায়, বড় বোনের সঙ্গে সে ঘুমাত। পরীক্ষা বা শুটিংয়ের সময় সে নিজে বোনের ব্যাগ গুছিয়ে দিত। মিম বলে, ‘আপা আমাকে মন দিয়ে পড়তে বলত। টাকাপয়সা নিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করত। সেই বোনকে শেষবারের মতো দেখতেও পারলাম না’।
আপনার মতামত লিখুন :