শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারী, ২০২১, ০৮:৪৭ সকাল
আপডেট : ০৮ জানুয়ারী, ২০২১, ০৮:৪৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : করোনায় যা ছিলো ইতিবাচক

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা : ২০২০ সালকে এককথায় খারাপ বছরই বলবে সবাই। করোনাভাইরাস নামের এক রোগের বিরুদ্ধে এক ভয়ানক যুদ্ধে জড়িয়েছি আমরা। বছর শেষ হলো, কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয়নি। যুদ্ধের বাকিটা এখনও চলছে। বিশ্বব্যাপী এমন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা শতবর্ষের মধ্যে প্রথম। কিন্তু এ এমন এক যুদ্ধ, যার সামনে সারা পৃথিবীর মানবজাতির জয় ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।
কিন্তু ২০২০ সালটা আসলে কোনো কোনো দিক থেকে ভালোও। এ বছরটাতেই বিশ্বে স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের উন্নতি দেখেছি। দ্রুততার সাথে ভাইরাস মোকাবিলার চিকিৎসা প্রটোকল, ভ্যাকসিন আবিষ্কার এবং সামগ্রিক কর্ম-সংস্কৃতিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তর ব্যবহারকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে। করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় সবক্ষেত্রেই কর্মীদের কাজের ধরন বদলেছে। দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়েছে বাড়ি থেকে কাজ। অতিসাধারণ মানের কর্মীও এতে অভ্যস্ত হয়েছেন। উৎপাদনশীলতা সচল রাখতে শতভাগ কর্মীকে অফিসে আনানোর প্রয়োজন যে নেই সেটা অনেক ব্যবস্থাপকের মাথাতেই ভালো করে ঢুকেছে।
ভালো আমাদের জন্য অন্য কারণেও। আমরা অনেক গল্পে বছরের পর বছর অভ্যস্ত হলেও এবার করোনায় আমাদের স্বাস্থ্যখাতের বেহালদশা আর এর দুর্নীতির চিত্রটা উন্মোচিত হয়েছে, আমরা ভালো করে দেখতে পেয়েছি। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা, চিকিৎসাসেবার ঘাটতিগুলো করোনাভাইরাস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সরকারি বা বেসরকারি খাতের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক ঘাটতিগুলো সরকারের নজরে ঠিকমতো এসেছে কিনা আমরা জানি না।
রোগীকে রাস্তায় ফেলে রাখছে, হাসপাতাল ফিরিয়ে দিচ্ছে, রক্তের সম্পর্কের দায় নিচ্ছে না মানুষ– এমন অবস্থা দেখেছি। একদিকে যেমন কিছু মানুষের লোভের লক লকে জিহ্বা দেখেছি, জাল, জালিয়াতি দেখেছি, লুট করার মানসিকতা দেখেছি তেমনি আমরা অসংখ্য ভালো মানুষও দেখেছি। বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী জীবন দিয়ে লড়েছেন সীমিত সম্পদ, সুবিধা আর কাঠামো নিয়ে মানুষের সেবা করতে। জীবন দিয়ে মাঠে থেকেছেন সেনা ও পুলিশ সদস্যরা, প্রশাসনের কর্মীরা এবং সাংবাদিকরা।
নতুন পাওয়া উপলব্ধি হলো যত ঝুঁকিই থাকুক, মানুষ ঠিকই মানুষের পাশে দাঁড়ায়। মহামারি, কাজ বন্ধ, জীবনযাত্রা স্তব্ধ হলেও এই সময়টা যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষকে টেনে আনতে পারেনি, তার একটা প্রধান কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যিনি সাহস করে জীবনের পাশাপাশি জীবিকা বাঁচাবার চেষ্টা করে সবকিছু খুলে দিয়ে মানুষকে কর্মমুখী করেছেন। তবে অন্য একটি বড় কারণ পাড়ায় পাড়ায় তরুণ আর যুবকদের সাহসী উদ্যোগ। তারা মানুষকে খাবার, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দিয়েছেন। অসুস্থকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন, তাদের ভর্তি করার ব্যবস্থা করেছেন। বিভিন্ন দাতব্য সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠন সরকারের পাশাপাশি প্রায় সমান্তরাল একটি ব্যবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চালু রেখেছিলেন মানুষের জন্য, যার কারণে বড় বিপর্যয় নেমে আসেনি।
অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন নানা কথা। সতর্ক করেছিলেন মন্দা আসছে। কলকারখানা, ব্যবসা বন্ধ থাকায় এর মূল্য দিতে হবে বড় করে। হ্যাঁ, প্রবৃদ্ধি কমেছে, বহু মানুষ রোজগার হারিয়েছেন, বেকার হয়েছেন, দরিদ্র হয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেক কিছুই সামলে উঠা গেছে সাধারণ মানুষের কাজ করার স্পৃহায়। লকডাউন বাংলাদশ সেভাবে করেনি। সাধারণ ছুটির মাধ্যম মানুষের চলাচল ও সমাগম নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা ছিল সরকারের। তবে এলাকাভিত্তিক লকডাউন হয়েছে নানা জায়গায়। প্রতিটি স্তরে অমানবিক দুর্নীতিবাজদের বিপরীতে সাধারণ নাগরিক সমাজ নিজেদের মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন নিরলসভাবে। আমার কাছে মনে হয় এটি এক বড় প্রাপ্তি এই করোনাকালে।
আমি এমন মানুষ দেখেছি যারা অসম্ভব দরদী মন নিয়ে সেসব মানুষকে খুঁজেছেন যারা হাত পাততে পারছিলেন না। এই মানুষগুলো আমাদের চারপাশে, কর্মহীন প্রতিবেশীর আত্মসম্মান অক্ষুণ্ন রেখে চলা সেই মানুষগুলোর হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়েছেন বা চাল-ডাল-সবজির ভর্তি একটা ব্যাগ নিঃশব্দে রেখে এসেছেন তাদের দরজায়। এসব মানুষ ও সংগঠনের কারণেই স্তব্ধ হয়ে থাকা সভ্যতার চাকা আবার সচল হতে পেরেছে স্বল্পতম সময়ে। বাংলাদেশের এই মানবিক দিকটাকেই আমার স্বাভাবিক বলে মনে হয়। আগেও দেখেছি বিপদের সময় কেউ কেউ যখন অর্থ আর সম্পদ লুটে উঠেপড়ে লেগে যায় তখন কিছু মানুষ হাত বাড়ায় বিপন্ন মানুষের দিকে। তারা মানুষ বলেই তাদের মন নিজস্ব গতিতে সেদিকে ধাবিত হয়। এই মনোবল, এই মানবিকতাই হিংসা আর বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
অতীতে কখনও মানুষের সাথে লড়াই কোনো ভাইরাস জিততে পারেনি। পৃথিবীতে আগেও বিপদ এসেছে। মহামারি, বিশ্বযুদ্ধ, আর্থিক মন্দা। কিন্তু বিপদেই আবার মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়। অসংখ্য বাজে দৃষ্টান্তের মাঝে আমরা মানুষের উদারতার মুখটাই মনে রাখতে চাই। ঝুঁকি নিয়ে, ভেদাভেদ ভুলে মানুষের জন্য হাত বাড়িয়েছে। এই অতিমারি থেকেই এটাই বড় শিক্ষা। শিক্ষা এটাই যে, ধর্মীয় বা শ্রেণি ভেদাভেদ না রেখে যদি একসঙ্গে কাজ করি তবে আমরা নিশ্চয়ই যেকোনো বিপদ থেকে উঠে দাঁড়াতে পারব। জাগো নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়