শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০৫ জানুয়ারী, ২০২১, ০৯:৫৩ সকাল
আপডেট : ০৫ জানুয়ারী, ২০২১, ০৯:৫৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মুনমুন শারমিন শামস্: নারী সমাজ কোন অন্ধকারে পড়ে আছে!

মুনমুন শারমিন শামস্: আমার বাসার বুয়ার নাম শাহানাজ। তিনি টুকটাক ইংরেজিতে কথা কন। যেমন ধরেন, বাসায় ঢুকেই বলবে, গুড মর্নিং ম্যাম! হাউ আর ইউ? এরপর ধরেন আমি শাড়ি টাড়ি পইরা বাইরে যাইতেসি, সে ছুটে এসে বলবে, ইউ ভেরি বিউটিফুল ম্যাম। তারপর ধরেন, অতনকে বলবে, বেবি প্লিজ সাইড স্ট্যান্ড। ক্লিনিং.. আই অ্যাম। তো, শাহানাজের ম্যালা গুণ। সে পার্লারের কাজ জানে, সালোয়ার কামিজ ব্লাউজ বানাইতে পারে। আমাকে বলসে, ম্যাম, আই ক্যান মেক ব্লাউজ। ইন্ডিয়ান কাট। আমারে দেবেন, আমি সব সিলামু। শাহানাজের বয়স ৩০ (তার ভাষ্যমতে), ওজন ৭০ কেজি। সে রোজ হাঁটে যাতে ওজন কমে। আগে ওজন ছিলো ৯০ কেজি। শাহানাজের তিন ছেলেমেয়ে। স্কুলে পড়ে। তো আজ কথায় কথায় শাহানাজ বলে, ইস, আপনার মায়ের বাসাটা কাছে হইলে, আমিই তাদের বাসায় রাতে থাকতাম, দেখাশোনা করতাম। তো আমি বললাম, তোমার বাচ্চাকাচ্চা আছে, জামাই আছে। সংসার আছে। তুমি রাতে ক্যামনে থাকবা? -তো কী হইসে। বাচ্চারা বাপের কাছে থাকতো। আর হ্যাদের বাপের লগে তো আমি ঘুমাই না। হ্যা আলাদা ঘুমায়। - ক্যানো? -আমার তো জরায়ু নাই। জরায়ু না থাকলে ঘুমামু (শারীরিক সম্পর্ক বুঝাইসে) ক্যামনে হ্যার লগে?

জিন্দেগিতে এমুন আজব কথা শুনি নাই- জরায়ু না থাকলে সেক্স করা যায় না, এমন অদ্ভুত ধারণা একটা ৩০ বছর বয়সী মহিলা, যে ১৫ বছর ধরে ঢাকায় থাকে, যে ফটর ফটর কইরা কথা কয়, যার স্মার্টনেসের জ্বালায় অস্থির- তার মাথায় এই অদ্ভুত তথ্য এমন গেঁড়ে বইসে যে আমার টানা ২০ মিনিটের লেকচারেও তার কোনো উত্থান পতন হইলো না! আমি তারে বিজ্ঞানের ভাষায় সহজ করে বুঝাইলাম, তার জরায়ুর সমস্যার কারণগুলো নিয়াও কইলাম, জরায়ুর কাজ, যৌনাঙ্গ যোনী ইত্যাদি নিয়ে যতোটা পারি জ্ঞান দিলাম, কিন্তু তার মুখ দেখেই বুজলাম, যে লাউ সেই কদুই আছে। শাহানাজ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, জরায়ু নাই মানে সে আর নারী নাই, সে বাতিল। তার জীবন শেষ। অতএব জামাইরে সে আলাদা বিছানা দিসে। জামাই এখন অন্য নারীতেই চাহিদা মিটায়ে বেড়াচ্ছে। কারণ তাদের দুজনেরই বিশ্বাস, শারীরিক সম্পর্কে যাওয়ার সব ক্ষমতা শাহানাজের শেষ হইসে। আমি চিরকাল বাসার গৃহ সহকারি, মালি, সুইপার, মিস্ত্রি, দারোয়ানদের সঙ্গে গল্প করতে ভালোবাসি। যতো গল্প, ততো বিস্ময়, ততো নতুন কিছু। কিন্তু সব বিস্ময় আনন্দের না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তীব্র বিষাদে মন ছেয়ে যায়।

একটা দেশের নারী সমাজ কোন অন্ধকারে পড়ে আছে যে নিজের শরীরটা নিয়েও বিন্দুমাত্র শিক্ষাদীক্ষা জ্ঞান কিসুই তাদের নাই। তারা কোনো যত্ন পায় না, কোনো আদর পায় না। নোংরা কাপড় ব্যবহার করে করে জরায়ুতে ইনফেকশন বাধায়, ক্যান্সায় হয়, মরে যায়। জীবনযুদ্ধ করা শাহানাজের জরায়ু নিচের দিকে নেমে গেছিলো, ডেলিভারির পরপরই দুইবেলা দীর্ঘ বাসযাত্রা করে করে। এই মেয়েরা সন্তান জন্ম দেয় একটা মেশিনের মতো। তাদের কোনো বাড়তি আদর জোটে না। ভালোবাসা সহমর্মিতা জোটে না। যা জোটে তার নাম বঞ্চনা, অবহেলা, কুসংস্কার আর চরম অযত্ন। ফটর ফটর করা শাহানাজদের মনের ভেতরে কোনো তীব্র বেদনা আর কষ্ট লুকায়ে থাকে, কোনো কোনো শারীরিক যন্ত্রণা সঙ্গে নিয়ে তারা পথ চলে- কেউ তার খবরও রাখে না! ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়