শিরোনাম
◈ সন্ত্রাসী অপরাধে গ্রেপ্তারদেরও নিজেদের কর্মী দাবী করছে বিএনপি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ গাজীপুরে হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু  ◈ বিশৃঙ্খলার পথ এড়াতে শিশুদের মধ্যে খেলাধুলার আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী ◈ তাপপ্রবাহের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও বন্ধ ঘোষণা ◈ সোনার দাম কমেছে ভরিতে ৮৪০ টাকা ◈ ঈদযাত্রায় ৪১৯ দুর্ঘটনায় নিহত ৪৩৮: যাত্রী কল্যাণ সমিতি ◈ অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল বন্ধে বিটিআরসিতে তালিকা পাঠানো হচ্ছে: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ◈ পাবনায় হিটস্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ জলাবদ্ধতা নিরসনে ৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে এডিবি ◈ ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ০২ জানুয়ারী, ২০২১, ০৯:২২ সকাল
আপডেট : ০২ জানুয়ারী, ২০২১, ০৯:২২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রভাষ আমিন: একুশ হোক এগিয়ে যাওয়ার

প্রভাষ আমিন: কিছু কিছু সময় থাকে, মানুষ যেটা ভুলে যেতে চায়। বিশ্ব তেমনি ভুলে যেতে চাইবে ২০২০ সালকে। সভ্যতা বিকাশের উৎকর্ষতার এই সময়ে এমন মহামারি এবং সেই মহামারির পথ ধরে আসা মন্দা একটু অভাবনীয়ই বটে। করোনাজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির পুরোটা এখনও জানা যায়নি। আর এই ধাক্কা কবে শেষ হবে, তাও কেউ জানে না। তবে প্রাথমিক হিসাবে বিশ্ব অর্থনীতির ২৮ ট্রিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে অন্তত ৩ শতাংশ। এই ক্ষতির ধাক্কা শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেটা এখনো বলা কঠিন। করোনার ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে। বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতিও তার গতি হারিয়েছে। টানা ৬৬ দিন সবকিছু বন্ধ ছিলো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ। তারপরও বাংলাদেশের অর্থনীতি যতটা আশঙ্কা করা হচ্ছিলো, ততটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি। কেন হয়নি, এটা নিয়ে নানান গবেষণা হবে।

তবে আমি মনে করি, এটাই এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা। তবে শেখ হাসিনার সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত ও মানবিক নেতৃত্বই বাংলাদেশকে অনেক ঝড় থেকে রক্ষা করেছে। সময়মত প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা, বিভিন্ন খাতকে সহায়তা দেওয়া, ঘরবন্দী মানুষদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে করোনা দুর্যোগটা শেখ হাসিনা পার করছেন দারুণ মানবিকতায়।

শুরুর দিকে করোনা টেস্ট ও চিকিৎসা নিয়ে চরম অব্যবস্থাপনা থাকলেও পরে সামাল দেয়া গেছে। শেখ হাসিনা করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় খুবই কৌশলী ছিলেন। জীবনের কথা যেমন ভেবেছেন, ভোলেননি জীবিকার কথাও। দারুণ ভারসাম্যে তিনি সামাল দিয়েছেন পুরো পরিস্থিতি। তার ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। সবাই যখন বিষাক্ত ২০২০ সালকে ভুলে যেতে চাইবে, তখন বাংলাদেশ মনে রাখবে অর্জনের বছর হিসেবে। বিশ্বের বাঘা বাঘা অর্থনীতির দেশে যখন নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তখন ইতিবাচক ধারায় থাকা অল্প কয়েকটি দেশের একটির নাম বাংলাদেশ। মাথাপিছু গড় আয়ে সূচকে বাংলাদেশ বিশাল ভারতকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে এবার। এটা বাংলাদেশের দাবি নয়, এডিবির পূর্বাভাস। এটা ঠিক আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ যতো দ্রুত এগোতে পারে, এগিয়ে থাকা দেশগুলো ততো দ্রুত পারে না। কারণ তারা তাদের সামর্থ্যের অনেকটাই ব্যবহার করে ফেলেছে। তবুও মাথাপিছু গড় আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়া সেলিব্রেট করার মতো উপলক্ষ্য বটে।

করোনায় গোটা বিশ্বেই স্থবিরতা ছিলো। প্রবাসী শ্রমিকদের অনেকেই দেশে ফিরে এসেছেন। অনেকে দেশে এসে আটকা পড়েছেন। তারপরও থামেনি রেমিটেন্সের স্রোত। বাংলাদেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ভেঙ্গেছে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আনপ্রেডিক্টেবল। সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত এটাকে বলেছিলেন, ফাটকাবাজার। ১৯৯৬ এবং ২০১০ সালের দুটি বিপর্যয়ই ঘটেছিলো আওয়ামী লীগ আমলে। ২০১০ সালের পর থেকে পুঁজিবাজার চলছিলা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বছরের শেষ ভাগে এসে খুঁড়িয়ে চলা ঘোড়া এখন পাগলা ঘোড়া। পুঁজিবাজারও রেকর্ড ছুঁয়েছে। করোনার ডামাডোলেও থেমে থাকেনি পদ্মা সেতুর কাজ। বিজয়ের মাসে পদ্মার দুই পাড়ের সংযুক্তি সমৃদ্ধির পথে এক দারুণ অগ্রগতি। মাতারবাড়িতে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম মাদার ভেসেল ভিড়েছে। যা আগামীতে অনেক সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে। তবে বছরের শেষ প্রান্তে এসে দুটি বড় খবর আমাদের গর্বিত করেছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) ২০২০ সালের দ্য হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট প্রতিবেদনের মানব উন্নয়ন সূচকে গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এরপরের খবরটি নিয়ে আমি অনেক বেশি উৎফুল্ল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ-সিইবিআরের নতুন প্রতিবেদন বলছে, সব ঠিকঠাক থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। আহা ততোদিন বেঁচে থাকি যেন।

বলা হয়, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। এটা সব অর্জনের জন্যই সত্য। শুধু কোনোরকমে চূড়ায় ওঠা নয়, সেখানে স্থির হয়ে থাকাটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন মাথাপিছু গড় আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে গেলেও তা টেকসই হবে না। পরের বছরই ভারত আবার ছাড়িয়ে যাবে। তবে বাংলাদেশ ঠিক রাস্তায় থাকলে ভারতের সাথে পাল্লা দিয়েই চলবে মাথাপিছু আয়। এই যে বারবার বলা হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ টানা ১২ বছর যে ক্ষমতায়, এটা গণতন্ত্রের জন্য খারাপ, উন্নয়নের জন্য ভালো। ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ অনেক অপকৌশল করেছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক জায়গা সঙ্কুচিত হয়ে গেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত। একের পর প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। তারপরও আওয়ামী লীগ টানা একযুগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়।

দেশে যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে, উন্নয়নটা হলো তার ডিভিডেন্ট। আমরা এই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতো। ২৫তম হতে হয়তো ২০৩৫ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না। তারপরও উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রকে বিসর্জন দেওয়ার কোনো নেই।

উন্নয়ন না গণতন্ত্র, এই বিতর্কটি অর্থহীন। আমাদের গণতান্ত্রিক পথেই উন্নয়নের দিকে যাত্রা করতে হবে। আমরা উন্নয়ন তো চাইই, সাথে অবশ্যই চাই গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, প্রতিবাদ করার সুযোগ। তাছাড়া উন্নয়নের সঙ্গে টেকসই এবং কোয়ালিটিও খুব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেনতেনভাবে উন্নয়নের পথে যাত্রা করাটাই শেষ কথা নয়। সেটা টেকসই হতে হবে এবং মানসম্পন্নও হতে হবে। উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিরও ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। সুশাসনের ঘাটতি পদে পদে। ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়ার সংস্কৃতি অনেক পুরোনো, সেটা আরও বেড়েছে। ব্যাংকের টাকা মেরে কানাডায় বাড়ি বানানোর গল্পও সবার জানা। ব্যাংক আর শেয়ারবাজারে লুটপাটের গল্পও অজানা নয়। তাই তো শেয়ারবাজারের সূচক লাফ দিলে আমাদের ভয় লাগে। আবার না কারসাজি হয়। ২০২০ সালে এতো অন্ধকারের মধ্যেও যে তীব্র আলোর দেখা আমরা পেয়েছি, ২০২১ সালে সেই আলোর পথে শুরু হোক আমাদের যাত্রা। তবে উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সুশাসন নিশ্চিত করেই যেন আমরা এগোতে পারি। যাতে অগ্রযাত্রার পথে কেউ আমাদের থামাতে না পারে। বাংলাদেশের উন্নয়ন যেন হয়, টেকসই এবং মানসম্পন্ন। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট। জাগরণ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়