শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৬:৪০ সকাল
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৬:৪০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ইমতিয়াজ মাহমুদ: পুলিশ আমাকে বলে দেবে কোনটা সুস্থ বিনোদন আর কোনটা অসুস্থ বিনোদন?

ইমতিয়াজ মাহমুদ : [১] যখন একজন অভিজিৎ রায়কে হত্যা করে, তখন আপনার কণ্ঠ খুলে প্রতিবাদ করা প্রয়োজন। প্রয়োজন সেটা আপনার স্বার্থেই। তারা যখন একজনের কণ্ঠ রোধ করে, তখন আপনার প্রতিবাদ করা প্রয়োজন সেটা আপনার নিজের স্বার্থেই। আপনারা সেটা করেন না। কথাটা অপ্রিয় বটে, কিন্তু সত্যি কথা। বইমেলায় যখন এক প্রকাশকের স্টল বন্ধ করে দেয় পুলিশ এসে, প্রকাশককে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় আপনারা তখন চুপচাপ থাকেন। পুলিশ এসে বইমেলায় ঘুরঘুর করে আর সিদ্ধান্ত দেয় কোন বই মেলায় বিক্রি করা যাবে, আর কোন বই বিক্রি করা যাবে না। তখন আপনারা কী করেন? আপনারা প্রতিবাদ করেছেন? করেননি। উল্টো আপনারা কন্টেন্ট বিচার করতে বসে যান। আপনারা প্রতিবাদ করেন কেবল তখনই যখন আপনাদের প্রিয় কারও বা পছন্দের কারও বাক ও চিন্তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হয়। যাদের আপনারা পছন্দ করেন না তাদের বিরুদ্ধে যখন কেউ হামলা করে বা আক্রমণ পরিচালনা করে তখন আপনারা একরকম বিকৃত আনন্দ উপভোগ করেন।

[২] এদেশে টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছে, খবরের কাগজ বন্ধ করা হয়েছে। আপনারা সেসবের প্রতিবাদ করেননি। কারণ আপনারা সেসব টেলিভিশন চ্যানেল বা খবরের কাগজ সেগুলোকে পছন্দ করেন না। একজন সম্পাদককে মাসের পর মাস জেলে আটকে রাখা হয়েছে, আপনারা টু শব্দটি করেননি। কেননা সে সম্পাদককে আপনারা পছন্দ করেন না। শহিদুল আলমকে জেলে আটকে রাখলো পুলিশ, আপনারা কি করেছেন তখন? আমি তো দেখেছি আপনাদের অনেকেই তখন শহিদুল আলমের মামা বা খালু কেউ রাজাকার ছিলো কিনা সেই গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। ভাবখানা যেন শহিদুলের খালু-চাচা মামা বা ফুপা কেউ রাজাকার থাকলে তাকে জেলে আটকে রাখাটা জায়েজ আছে, যান তাহলে শহিদুলের কোনো কথা বলার অধিকার নেই ইত্যাদি। একের পর এক মুক্তমনা লেখকদের হত্যা করা হয়েছে, হামলা হয়েছে তাদের উপর, আসিফ মহিউদ্দিনসহ অনেককেই দেশ ছাড়তে হয়েছে। আপনারা তো সেভাবে প্রতিবাদ করেননি।

আমাদের এফডিসিকেন্দ্রিক সিনেমাওয়ালাদের কথা বাদই দিলাম, যারা নিজেদের ভালো নির্মাতা মনে করেন, দেশে বিদেশে পুরস্কারের জন্য সিনেমা নিয়ে যান, আপনার কে কতোটুকু প্রতিবাদ করেছিলেন? করেননি। সেরকম উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিবাদ আমার চোখে পড়েনি। এ প্রসঙ্গে মনে পড়লো, আপনাদের একজন বড় ফিল্মমেকার তো মুক্তমনা লেখক ব্লগারদের নিন্দায়ও নেমেছিলেন একসময়। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা প্রসঙ্গেই ওই লোকটা ওইসব লেখকের সয়ালচনায় নেমেছিলেন। গাধাটার মাথায় এই কথাটা কেউ চুকায়নি যে লেখার কন্টেন্ট বিবেচনায় লেখকের স্বাধীনতা নির্ধারিত হয় না। আপনারা বাক ও চিন্তার স্বাধীনতার কথা সকলেই জানেন। বাঙালি তো কোটেশন মুখস্ত করার ব্যাপারে খুবই পাকা, ভল্টেয়ারের সেই কথাটাও আপনারা অনেকেউ মুখস্ত জানেন, যে আমি তোমার কথা সমর্থন নাও করতে পারি কিন্তু কথাটি বলার জন্য তোমার যে স্বাধীনতা সেটি রক্ষায় রক্ত ঝরাতে রাজি আছি। কোটেশন মুখস্ত আছে ঠিকই, কিন্তু কাজের বেলায় সেটা দেখা মনে থাকে না আপনাদের। এসবের ফলাফল কি? এসবের ফলাফল ওইটাই এখন একজন সিনেমা পরিচালক আর একজন অভিনেতা জেলে আটক আছে। কেন? সিনেমাতে নাকি পুলিশকে মন্দ রূপে দেখানো হয়েছে, সেই অপরাধে একজন অভিনেতা আর পরিচালক গ্রেফতার হয়ে জেলে আছেন।

[৩] এই সিনেমাটা এফডিসি কেন্দ্রিক পপুলার সিনেমাগুলোরই একটা। সিনেমার নাম নবাব এলএলবি। সিনেমাতে নাকি একজন অসৎ পুলিশ কর্মকর্তার একটা ক্যারেক্টার আছে। এতে করে নাকি বাংলাদেশের পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এ অভিযোগে সিনেমার একজন অভিনেতা শাহিন মৃধা ও সিনেমার পরিচালক অনন্য মামুনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ বলছে, সম্প্রতি ফেসবুকে নবাব এলএলবি ছবির একটি ভিডিও খণ্ডচিত্র ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যায় একজন ধর্ষিতা নারী থানায় এসে পুলিশের কাছে ধর্ষণের বিষয়ে অভিযোগকালে পুলিশ তাকে অত্যন্ত আপত্তিকর ইংগিত ও অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যা সুস্থ বিনোদনের পরিপন্থী এবং জনসাধারণের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে। এমন আপত্তিকর ও অশ্লীল সংলাপ সংবলিত ভিডিও খণ্ডচিত্র তৈরি ও অভিনয়ের জন্য দুইজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। আপনারাই বলেন। পুলিশ আমাকে বলে দেবে কোনটা সুস্থ বিনোদন আর কোনটা অসুস্থ বিনোদন? আর পুলিশের কাছে কোনোকিছু অশ্লীল মনে হলেই পুলিশ সেই সিনেমা নির্মাতাকে গ্রেফতার করবে? এটা কি কোনো সভ্য সমাজের আচরণ হয়েছে? ইন্টারেস্টিং ব্যাপার কী জানেন? এ বিষয়টা নিয়ে আপনি সিনেমার লোকজনকে খুব একটা প্রতিবাদ করতে দেখবেন না। আপনাকে আমি এখনই বলে দিতে পারি, সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি এক হয়ে প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, তাদের মধ্যে এইটা নিয়ে কোনো অসন্তোষই আপনি দেখতে পাবেন না। যদি দুই একজন এইটা নিয়ে বিবৃতি ফিব্রিতি কিছু দেয়ও, তারাও এই শিল্পী ও এই পরিচালকের মুক্তি চাইবে কী বলে জানেন? তারা নাকি সুরে বলবে যে না, নির্মাতা আর অভিনেতা তারা তো পুলিশকে হেয় করতে চায়নি, তাদের উদ্দেশ্য খারাপ না, তারা পুরো পুলিশবাহিনীকে মন্দ বলেনি, প্লিজ ওদের ছেড়ে দিন। বাক ও চিন্তার স্বাধীনতার কথাটা কেউ বলবে না।

[৪] বাক ও চিন্তার স্বাধীনতার কথাটা কেউ বলবে না। কেউ বলবে না যে এই পরিচালক ও অভিনেতাকে গ্রেফতার করা অন্যায় হয়েছে। কেউ বলবে না যে ওদের স্বাধীনতা আছে, যা ইচ্ছা তাই বলার। কেউ বলবে না যে ওরা শিল্পী, ওদের শিল্পকর্মের কন্টেন্ট আপনার পছন্দ নাও হলে আনি, কিন্তু তাদের কণ্ঠ রোধ করার অধিকার পুলিশের নেই। কেন বলবে না? কারণ তারা এরকম একটা সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা মেনেই নিয়ে বসে আছে যেখানে শিল্পীদের স্বাধীনতা থাকবে না, লেখকদের স্বাধীনতা থাকবে না। তারা মেনে নিয়েই বসে আছে যে এ রাষ্ট্রে পুলিশ ঠিক করে দেবে কোন কথাটা বলার অধিকার আছে আর কোন কথাটা বলার অধিকার নেই। একটা স্বাধীন দেশ প্রকৃত অর্থে তখনই স্বাধীন হয় যখন সেখানে মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা থাকে। যে রাষ্ট্রে মানুষকে কথা বলার জন্য শাস্তি ভোগ করতে হয় সেটি কখনোই একটা স্বাধীন আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয় না। এটা একটা মৌলিক নীতি এটা যখন আপনাকে বারবার চিৎকার করে করে বলতে হবে কেন? ভালো লাগে না। মনে হয় অন্ধের দেশে দাসদের মধ্যে বসবাস করছি। অসহায় লাগে। মানুষের বাক ও চিন্তার স্বাধীনতার মত একটা অতি প্রাথমিক ও অতি মৌলিক বিষয় নিয়ে এখনো কে এতো কথা বলতে হবে? এটা কীসের লক্ষণ? ঈষৎ সংক্ষেপিত। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়