শিরোনাম
◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৭:১৮ সকাল
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৭:১৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আলী রীয়াজ: ইরাক যুদ্ধে এম্বেডেড জার্নালিজম আমি সমর্থন করিনি

আলী রীয়াজ: অফিসে পুরনো কাগজ ঘাটতে গিয়ে অনেক কিছুর মধ্য থেকে উঁকি দিলো যে কাগজটি সেটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দৈনিক পত্রিকা ভিডেটের ২০০৩ সালের একটি সংখ্যা, সযত্নেই রাখা ছিলো ড্রয়ারে এতো যত্নে রাখা ছিলো যে এর কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্ত পত্রিকাই কেবল উঁকি দিলো তাতো নয়। এক ঝলকা স্মৃতি, ১৭ বছরের বেশি সময় আগের। ২০০৩ সালের ৯ এপ্রিলের সংখ্যা। কেন রেখে দিয়েছিলাম তার কথাও মনে পড়লো, মনে পড়লো আরো অনেক কথা। ২০০২ সালের আগস্ট মাসে ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতায় যোগ দিলাম, রাজনীতি ও সরকার বিভাগে। তার আগের বছর কেটেছে সাউথ ক্যারোলাইনাতে। পৃথিবী তখন অস্থির। ক্ষমতায় রিপাব্লিকান দলের জর্জ ডব্লিউ বুশ। ইরাক যুদ্ধের দামামা বাজানো শুরু হয়েছে। আমার জন্যে বরাদ্দ অফিস কক্ষ স্রেডার হলের তিন তলায়। আমার অফিসের কাছেই ইতিহাসের শুভ বসু’র অফিস, তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়া তো ঘণ্টা খানেকের ব্যাপার। একই তলায় আরো অনেকের মধ্যে আছেন ইরানি বংশোদ্ভূত ইতিহাসের অধ্যাপক মোহাম্মদ তাভাকলি, সদাহাস্যমুখ কিন্ত সিরিয়াস গবেষক। তিনি সম্পাদনা করেন একটা নামকরা জার্নাল।
পরিচয়ের গোড়াতেই জানলাম মোহাম্মদ তাভাকলি ব্যস্ত থাকেন প্রতি সপ্তাহের মঙ্গলবার একটি পাবলিক সেমিনারের আয়োজন করা নিয়ে, ঠিক দুপুর বেলা, বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। এই সেমিনারের শ্রোতা শিক্ষার্থীরা, কিন্ত আয়োজক কার্যত একজন মোহাম্মদ তাভাকলি। নিজেই বক্তা যোগাড় করেন, নিজে ফ্লায়ার বানান, সেগুলো নিজেই ঘুরে ঘুরে লাগান। তার সঙ্গে যোগ না দিয়ে উপায় কি? এই সিরিজটার শুরু হয়েছে ২০০১ সালে ১/১১-এর হামলা এবং আফগানিস্তানে মার্কিনি আক্রমণের পরে। উদ্দেশ্য একটাই- শিক্ষার্থীদের কাছে বিকল্প চিন্তা ভাবনা উপস্থাপন করা। মূলধারার গণমাধ্যমে তখন ‘জাতীয়তাবাদী’ চিন্তার জোয়ার, এনপিআর ব্যতিক্রম। পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে সমালোচনা মৃদূ। যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলার লোকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। মিডওয়েস্টের মাঝখানে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিকল্প চিন্তার সাথে পরিচয় করানোর, যুদ্ধের বিরুদ্ধে সচেতন করার কাজে প্রায় একাই মোহাম্মদ তাভাকলি শুরু করেছিলেন ২০০১ সালে, অনিয়মিত সেমিনার।

২০০২ সালের ফল সেমিস্টারে অর্থাৎ আগস্টে- এটাকে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে পরিণত করেছেন মোহাম্মদ তাভাকলি। শুভ আর আমি দু’জন যুক্ত হয়ে পড়লাম তার সঙ্গে। সেমিনারের চেয়ার গোছানো থেকে পিৎজার ব্যবস্থা করা সব আমাদের কাজ, বক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বা একাধিক শিক্ষক, কিংবা কাছে ধারের শহর থেকে অনুরোধে ঢেকি গিলিয়ে কিংবা অত্যুৎসাহী বনের মোষ তাড়ানো লোকদের জোগাড় করি আমরাই। চেষ্টা আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে ভিন্ন পারসপেক্টিভ উপহার দেয়া, এই নিয়ে বিতর্ক। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিলো অকল্পনীয়, উদ্যোক্তা তিন জন এই দেখে উত্তেজিত থাকি, কিন্ত নিজেদের উত্তেজনা কমাতে নিজেদের বলি, ‘আসল কারণ ঐ যে গুটিকয় বিনা মুল্যের পিৎজা সেটাই’। কিন্ত ১৫/২০ জনের জন্যে আনা পিৎজা খেতে দুপুর বারোটায় শতখানেক শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে এক ঘন্টা ধরে আলোচনা শুনবে, প্রশ্ন করবে সেটা যে পিৎজার অজুহাত দিয়ে হবেনা সেটা বুঝি যুক্তি দিয়ে।

২০০৩ সালের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে আগ্রাসন চালালো ২০ মার্চ, তারপরে প্রায় প্রতি সপ্তাহের বিষয় হচ্ছে এই যুদ্ধ প্রসঙ্গ। অধিকাংশ সময়ই আয়োজন হতো প্যানেল আলোচনা। তারই একটি ছিলো গণমাধ্যম নিয়ে। এই ছবি সেই অনুষ্ঠানের। আইএসইউ’তে এটাই আমার প্রথম অনুষ্ঠান। মনে পড়লো সেদিন যোগাযোগ বিভাগের একজন অধ্যাপকের সঙ্গে জমে ওঠা বিতর্কের কথা। ইরাক যুদ্ধ হচ্ছে প্রথম কোনো যুদ্ধ যেখানে সৈন্য বাহিনীর সঙ্গে সাংবাদিকদের যুক্ত করে দেয়া হয়েছিলো যাতে করে তারা রিপোর্ট করতে পারেন। ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৭০ জন সাংবাদিক মার্কিন এবং ব্রিটিশ সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে ছিলেন। এর নাম দেয়া হয়েছিল ‘এম্বেডেড জার্নালিজম’। যোগাযোগ এবং মিডিয়ার লোকজন খুব উত্তেজিত ছিলেন যে একটা ভাল কাজ হচ্ছে। অনেক খবর পাওয়া যাবে। আমার অবস্থান ছিলো বিপরীত, এম্বেডেড সাংবাদকিতা বস্তনিষ্ঠতা হারাবে। ইরাক যুদ্ধকে ‘অবৈধ’ বলায় অনেকের অপ্রিয় হওয়া গিয়েছিলো। এই দিনের কথাবার্তা বিশ্ববিদ্যালয়ে যৎকিঞ্চিত পরিচিতি তৈরি করলো, কিন্ত কেউ কেউ মনে করিয়ে দিলেন এ্যাসিসটেন্ট প্রফেসর হিসেবে আমার টেনিউরের বিষয় মাথায় রাখা দরকার।
এই সেমিনার সিরিজ পরে আরো নিয়মিত হয়ে ওঠে, অন্যান্য বিভাগে শিক্ষকরা আয়োজক হিসেবে যোগ দেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পিৎজার খরচ বরাদ্দ করেন। এক সময় অধ্যাপক তাভাকলি কানাডা পাড়ি জমালেন, শুভ সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেলেন; দুই বছরের বেশি সময় বুধবার দিন এই সেমিনারের আয়োজকের দায়িত্ব কীভাবে যেন আমার ঘাড়েই থাকলো। হাত বদল হয়েছে এই সেমিনারের, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে। কিন্ত কিছু কি হারিয়েছে? পত্রিকা দেখে এই সব মনে পড়লো। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়