মোহাম্মদ রুবেল: বলা হইতেছে, তোমার ধর্ম- মানে খোদ মানবতা বা মনুষ্যধর্ম যদি বাঁচাইতে চাহ তো তোমাকে তোমার মান-মর্যাদা, ইজ্জত-সম্মান, তোমার স্বাধীনতা, তোমার জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, এক কথাটা তোমার ‘আপনকেও মারিয়া ফেলিতে হইবে। এককথায় বলিতে, তুমি যদি এই জীবন লইয়া কী করিবে তাহা স্থির করিতে চাহ, তো ‘এই জীবন লইয়া কি করিবো? -এই প্রশ্নটাই আর করা চলিবে না। ধরা যাক তুমি বলিলে, স্বাধীনতা ছাড়া তোমার তো দিবার আর কিছুই নেই। তোমার সতীত্ব-স্বামীত্ব তো আগেই আমরা কাড়িয়া লইয়াছি।
‘সুখ’ এমন জিনিস যাহা আপনার থাকিতে পারে, নাও থাকিতে পারে। অনেকটা টাকার মতন। এমনকি আপনার প্রাণও এই স্তরের জিনিস।এই আছে এই নাই। অথচ স্বাধীনতা বা ইজ্জত-সম্মান অন্য স্তরের জিনিস। স্বাধীনতা আর মানুষ এই কারণেই সমার্থক শব্দ হইয়াছে। স্বাধীনতা নেই তো মানুষও নেই। স্বাধীনতার জন্যই মানুষ প্রাণধারণ করে। স্বাধীনতার ছায়া মৃত্যুর পরপার পর্যন্ত শুইয়া থাকে। মানুষ যদি স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে পারে, তবেই না সে স্বাধীন মানুষ। আর যে মানুষ প্রাণের জন্য স্বাধীনতা সমর্পন করে সে দাস। যে মানুষ স্বাধীনতার জন্য ন্যায়বিচার বিসর্জন দেয় সে মানুষ স্বাধীনতা ব্যবসায়ী। একই যুক্তিতে, যে মানুষ ন্যায়বিচারের স্বার্থে খোদ স্বাধীনতা পর্যন্ত বিসর্জন দিতে রাজি সে হয়তো স্বৈরাচারী। তার মানে অবশ্যই এই নহে যে স্বৈরাচার মাত্রই ন্যায়বিচার ব্যবসায়ী। স্বৈরাচারীর বন্দুকের নল নানান কারণে নিত্য উঁচা হইয়া থাকে।
‘হয় প্রাণ নয় টাকা’ অথবা ‘হয় স্বাধীনতা নয় মৃত্যু’-এই দুই ধরনের পরীক্ষাই স্বাধীনতা ব্যবসায়িকে নিত্য পাস করিতে হয়। এমনই তাহার কপাল। এক পরীক্ষায় বিশেষ ধরিয়া সামান্য হারাইতে হয়। আর পরীক্ষায় যাহা চাই তাহা পাই না, যাহা পাই তাহা চাই না। এই যে অরক্ষণীয়া রক্ষার সাধনা, এই যে স্বাধীনতা, তাহাই মানুষকে মানুষ করিয়াছে। মানুষ স্বাধীন হইয়া জন্মাইয়াছিল -এই বাক্য না বলিয়া আমরাও একদিন হয়তো বলিতে পারিব, স্বাধীনতাই মানুষ আকারে জন্মগ্রহণ করিয়াছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয় দিবসে ইহার চাইতে বেশি কিছু ব্যক্ত করিবার সাহস মোর ঘটে নেই। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :