এস এম সাব্বির : আজ কাশিয়ানী মুক্ত দিবস। ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশ শত্রু মুক্ত হলেও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা হানাদার মুক্ত হয় ১৯ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে এক প্লাটুন সশস্ত্র পাকসেনা ট্রেনযোগে কাশিয়ানীর অদূরবর্তী ভাটিয়াপাড়া ওয়ারলেস সেন্টার দখল করে সেখানে অবস্থান নেয়। স্থানীয় মুসলিম লীগ ও পিডিপি নেতাদের সহযোগিতায় রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং শান্তি কমিটি গঠন করে এলাকায় লুটতরাজ, খুন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরণের অত্যাচার চালাতে থাকে। ১৩ এপ্রিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। ক্রমেই পাকসেনাদের অত্যাচার বাড়তে থাকে। তারা কাশিয়ানী উপজেলার প্রায় ৬ শতাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ধ্বংস ও লুটতরাজ চালায় এবং তাদের হাতে শত শত নারী ধর্ষণের শিকার হয়।
অক্টোবর মাসে উপজেলার ফুকরা লঞ্চঘাট এলাকায় খুলনা থেকে নদীপথে আসা ৩ টি লঞ্চ ভর্তি পাক সেনাদের সাথে মুক্তি বাহিনীর ৬ ঘন্টাব্যাপী মুখোমুখি সংঘর্ষে হয়। এ যুদ্ধে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তি সেনারা পাকবাহিনীর অর্ধশতাধিক সেনা হত্যা করে।
নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ নাগাদ কাশিয়ানীর অধিকাংশ এলাকা শত্রæমুক্ত হয়। শতাধিক পাকসেনা ও রাজাকার ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস সেন্টারে বাঙ্কার করে অবস্থান নেয়। কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস এলাকায় প্রায় ১৫ শ’ মুক্তিযোদ্ধা এবং হাজার হাজার মুক্তিকামী জনতা চতুর্দিক থেকে আক্রমণ করতে থাকে। কিন্তু মাটির নিচে শক্ত বাঙ্কার করে অবস্থান নেওয়ায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে পাকবাহিনীকে পরাস্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে যশোর থেকে ক্যাপ্টেন কে, এন, হুদা এবং ফরিদপুর থেকে লেফটেন্যান্ট কমল সিদ্দিকী তাদের বাহিনী নিয়ে কাশিয়ানীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দিয়ে সম্মিলিতভাবে আক্রমণ শুরু করে। ১৯ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন হুদা ইংরেজী, পাঞ্জাবী ও বালুচ ভাষায় পাকসেনাদের আত্মসর্মপণ করার আহ্বান জানান। শংকরপাশা যুদ্ধে আটক পাকসেনা সদস্য সাব্বির খানকে পাক বাহিনীর ক্যম্পে পাঠানো হয়। সে পাক সেনা কমান্ডারকে বাংলাদেশের বিজয়ের কথা জানায়। ঐ দিন বিকালে ৬৫ জন পাকসেনাসহ শতাধিক রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ৮ নং সেক্টরের অধীনে সর্বশেষ মুক্ত হয় কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া। এ যুদ্ধে ১০২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীন হন। আহত হন ১৬ জন।
একাত্তর সালে ভাটিয়াপাড়া রণাঙ্গণে সম্মুখ যুদ্ধে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সাধুহাটি গ্রামের এ কিউ এম জয়নুল আবেদীন, কাগদী গ্রামের মজিবর রহমান, ডোমরাকান্দি গ্রামের হান্নান শেখ, চরভাটপাড়া গ্রামের অনিল কুমার বিশ্বাস, মুন্সীগঞ্জ জেলার লোহজং উপজেলার মেদিনীমন্ডল গ্রামের মীর মহিউল হক ও ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার মালা গ্রামের মশিউর রহমান সিকদার (হেমায়েত) শহীদ হন।
এ সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান আজও অম্লান হয়ে আছে। ১৯ই ডিসেম্বর কাশিয়ানী মুক্ত দিবসে রণাঙ্গনের সেই ভয়াল স্মৃতি, যুদ্ধদিনের বিবরণ ও গৌরবময় বীরত্ব গাঁথা স্মরণ করে গর্বিত গোপালগঞ্জবাসী।
আপনার মতামত লিখুন :