নিউজ ডেস্ক: অবাধে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের দিন শেষ হচ্ছে। অবৈধ সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে আরও কঠোর হচ্ছে জ্বালানী বিভাগ। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। এই পরিকল্পনায় অবৈধ ব্যবহারকারীদের ছোট ছোট জোনে ভাগ করে লাগাতার অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
উচ্চমূল্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করছে সরকার। দেশীয় গ্যাসের সঙ্গে এলএনজির দাম সমন্বয় করে গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির সরবরাহ করা গ্যাসের একটি বড় অংশই চুরি হয়ে যাচ্ছে। এখনও সরকারের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ২৯৭ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস লাইন রয়ে গেছে। সরকারী কোন বিতরণ কোম্পানি এই লাইন নির্মাণ না করলেও স্থানীয়ভাবে এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে ঠিকাদাররা মিলে মিশে এই গ্যাসলাইন নির্মাণ করেছে। এখান থেকে সাধারণ মানুষের ঘরে গ্যাসের লাইনও দেয়া হয়েছে। আবার সেখান থেকে নিয়মিত বিলও আদায় করা হয়। কিন্তু সরকারের রাজস্ব আদায়ের ঘরে এই অর্থ জমা পড়ে না। প্রভাবশালীদের পকেটেই প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ চলে যায়।
জ্বালানী বিভাগ বলছে গত নবেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন জায়গাতে তিন লাখ ১৭ হাজার ২৭৫টি অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই লাখ ৫২ হাজার ৪৪৩টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময় ৩৪৪ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস সংযোগের পাইপলাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে এখনও এ ধরনের ২৬৩ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়ে গেছে। যা দিয়ে অবাধে গ্যাস চুরি যাচ্ছে। এখনও ৬৩ হাজারের মতো অবৈধ গ্রাহক রয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্নকরণ টাস্কফোর্সের সভায় ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখন যে অবৈধ সংযোগ বিছিন্নকরণ টাস্কফোর্সের সভায় এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে জ¦ালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আবুল মনসুর জনকণ্ঠকে বলেন, এখন মূলত বেশির ভাগ অবৈধ সংযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জে। অবৈধ সংযোগ বিছিন্ন করার ক্ষেত্রে নানামুখী চাপ উপেক্ষা করে আমাদের কাজ করতে হয়। এজন্য নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে আমাদের কাজ করতে হয়। তবে যাই হোক না কেন আমরা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারব বলে আশা করছি।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিদ্যুত জ¦ালানি মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভায় প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ঢাকার আশপাশে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী এলাকায় অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপিদের বিরোধিতা ও অসহযোগিতার কথা তুলে ধরেন। সভায় কোন রাজনৈতিক চাপের কাছে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কার্যক্রম বন্ধ না করার সিদ্ধান্ত হয়।
সারাদেশে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকাতে চুরির প্রবণতা বেড়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষের সুবিধা বিবেচনায় যার যার এলাকার গ্যাস চুরি বন্ধ করতে দিতে চান না। তারা মনে করেন এতে তাদের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়বে।
কেবল আবাসিকেই নয় গ্যাস চুরি হচ্ছে বাণিজ্যিক, শিল্প এবং সিএনজিতেও। অবৈধ সংযোগ দিয়ে সরকারের শত শত কোটি টাকার গ্যাস বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। জ্বালানী বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বিচ্ছিন্ন করা সংযোগের মধ্যে বাণিজ্যিক খাতের ২০২টি, শিল্প খাতের ৮৭টি, সিএনজি ২২টি এবং ক্যাপটিভ সংযোগ ৪১টি।
গত ৭ সেপ্টেম্বর অবৈধ সংযোগ বন্ধ করার নির্দেশনা দেয় জ্বালানী বিভাগ। দেশের গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় দুই মাসের মধ্যে সব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য জ¦ালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) কে প্রধান করে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। ওই কমিটি সরাসরি মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে গ্যাসসংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজ করছে। মূলত এর পরই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছন্ন করতে গেলে যে প্রতিরোধের শিকার হতে হতো তা কমে এসেছে।
জ্বালানী বিভাগের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে গত কয়েক বছর ধরেই অবৈধ সংযোগের বিস্তার ঘটেছে। এর আওতা এত বিশাল যে মাত্র দু’মাসে সব লাইন কেটে শেষ করা সম্ভব না। এজন্য ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে একটি কর্মপরিকল্পা প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই পরিকল্পনাতে যেসব অবৈধ গ্যাস ব্যবহার জোন রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করা হবে। এরপর ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছন্ন করা হবে।
এখন গ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লস পাঁচ ভাগের একটু বেশি। কিন্তু এই সিস্টেম লসের পুরোটাই আবাসিক সংযোগসহ বেসরকারী ৪০ ভাগ গ্রাহকদের। সার কারখানা ও বিদ্যুত কেন্দ্রসহ সরকারী প্রতিষ্ঠান যে ৬০ শতাংশ গ্যাসের গ্রাহক রয়েছে সেখানে কোন সিস্টেম লস নেই। আবার অন্য বিতরণ কোম্পানিতে তেমন একটা সিস্টেম লস না থাকলেও তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে সব থেকে বেশি সিস্টেম লস হচ্ছে। কোন কোন মাসে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সিস্টেম লসের পরিমাণ ৭/৮ ভাগও হয়ে থাকে। এতে বোঝা যায় ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকাতে বেশি গ্যাস চুরি হচ্ছে। গ্যাস যেহেতু পাইপলাইনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় তাই এত বিপুল পরিমাণ সিস্টেম লস হওয়ার কোন কথা নয়।
জানতে চাইলে জ্বালানী বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ যে কমিটি রয়েছে তারা মনে করছে একবারে বড় এলাকা ধরে এটি করা সম্ভব নয়। এজন্যই একটি বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জ্বালানী বিভাগের নবেম্বরের সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কর্মপরিকল্পনা জ্বালানী মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো।
এখন দেশে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ছাড়াও কর্ণফুলী, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল এবং সুন্দরবন নামে আরও পাঁচটি কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু পাঁচটি কোম্পানি মিলে যা গ্যাস বিতরণ করে তার চেয়ে তিতাস একাই বেশি গ্যাস বিতরণ করে। বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ যে কমিটি রয়েছে তারা মনে করছে একবারে বড় এলাকা ধরে এটি করা সম্ভব নয়। এজন্যই একটি বাস্তবভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জ্বালানী বিভাগের নবেম্বরের সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কর্মপরিকল্পনা জ্বালানী মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো।
এখন দেশে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ছাড়াও কর্ণফুলী, বাখরাবাদ, জালালাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল এবং সুন্দরবন নামে আরও পাঁচটি কোম্পানি রয়েছে। কিন্তু পাঁচটি কোম্পানি মিলে যা গ্যাস বিতরণ করে তার চেয়ে তিতাস একাই বেশি গ্যাস বিতরণ করে। সূত্র: জনকন্ঠ