শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু, মানতে হবে কিছু নির্দেশনা ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা

প্রকাশিত : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৮:২০ সকাল
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৮:২০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান: জাতিগত ফাটল দূর করতে পারলেই উন্নয়ন টেকসই হবে

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান: ১৬ ডিসেম্বর এলেই কিছু লোক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতার এতো বছরে এসে আমরা কী পেলাম, কী অর্জন করলাম! এজন্যই কি আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আমরা কী স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, এটা নিয়ে বিভ্রান্তি আছে। যারা বাংলাদেশকে সুইজারল্যান্ড কিংবা সৌদি আরবের মতো দেখতে চান, তাদের জন্য বলবোÑ এমন স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সংগ্রাম করেননি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিলো, আমরা আমাদের শাসন করবো। পাকিস্তানি শাসন ব্যবস্থা ছিলো ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন আমলের বর্ধিতরূপ। এই উপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা, বাঙালিত্ব, বাঙালির নিজস্ব জাতীয়তাবোধকে জাগ্রত করে তা সমুন্নত রাখা ছিলো মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য। অন্যের দ্বারা আমরা শাসিত হবো না, এটিই ছিলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার মূল উদ্দেশ্য।

এখন যে ধরনের স্বপ্ন অনেকে দেখছে, সেগুলো তখন মুক্তিযোদ্ধারা কেউ দেখেননি। পদ্মা নদীর উপর সেতু হবে, সেই সেতু দিয়ে রেলগাড়ী এবং বাস-ট্রাক একসঙ্গে চলবে এমন স্বপ্ন নিয়ে কেউ ম্ুিক্তযুদ্ধ করেছে বলে আমার জানা নেই। আসলে একটা দেশ আমরা চেয়েছিলাম যেটা হবে বাঙালি সংস্কৃতির। যে ধর্মান্ধতা, কূপমুণ্ডকতা পাকিস্তানি শাসনের মূল শক্তি ছিলো সেটা থেকে বেরিয়ে এসে একটা উদার, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন। ধর্ম ও গোত্রের কারণে, জন্মস্থানের কারণে কেউ যেন বৈষম্যের স্বীকার না হয়, নারী-পুরুষের বৈষম্য যেন না থাকে এমন একটি বাংলাদেশ আমরা কথা আমরা চিন্তা করেছিলাম। যতো স্বপ্ন এখন মানুষ দেখছে মুক্তিযোদ্ধারা এতো স্বপ্ন দেখেননি, কিছু স্বপ্ন মানুষ এখন দেখছেন। জাতির জনকের স্বপ্নের যে ‘সোনার বাংলা’ সেটা ছিলো অনেক ধনী ও উন্নত বাংলাদেশ না। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ এবং সবাই মিলে একসঙ্গে থাকবো, আমাদের মধ্যে সাম্য ও ভাতৃত্ববোধ থাকবে অর্থাৎ একটা শান্তপূর্ণ বাংলাদেশ যেখানে আমাদের জাতিগত, ধর্মগত বৈষম্য ও লিঙ্গবৈষম্য থাকবে না।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমাদের অর্জন অনেক। আমাদের প্রবৃদ্ধি, আমাদের অর্থনীতি, আয়ুষ্কাল বেড়ে যাওয়া, শিক্ষার হার বেড়ে যাওয়া, দারিদ্রের হার কমে যাওয়া, শতভাগ বিদ্যুতায়িত হওয়া, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন হওয়া ইত্যাদি। আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, নারী শিক্ষার হার এবং নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। আমরা মাছ উৎপাদনে এখন দ্বিতীয়, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, আলু উৎপাদনের পৃথিবীর সাতটি দেশের একটি। গরু উৎপাদনের পৃথিবীতে আমরা এখন ১২ তম স্থানে রয়েছি। ২ কোটি চল্লিশ লাখ গরু রয়েছে এখন আমাদের। গরুতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। গার্মেন্টসশিল্পে পৃথিবীতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছি। আমাদের এরকম অসংখ্য অর্জন এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছি। আমরা যদি পাকিস্তানের অংশ থাকতাম, তাহলে আমরা অনেক দিক দিয়ে পির্ছিয়ে থাকতাম। সামাজিক, অর্থনৈতিক সবদিক দিয়ে আমরা পিছিয়ে থাকতাম। এখন আমরা পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে আছি। কতোগুলো সামাজিক ইনডিকেটরে আমরা ভারত থেকেও এগিয়ে রয়েছি। মাথাপিছু আয়েও আমরা ভারতকে এখন ধরে ফেলছি। বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। পাকিস্তান বা পূর্ব পাকিস্তান আমলে আমরা খেতে পেতাম না। ১৯৭৪ সালে সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অনেকে ভাত খেতে পারেনি। এখন দেশে মানুষ দ্বিগুন হয়ে গেছে কিন্তু কেউ না খেয়ে থাকে না। খালি পায়ে থাকে না। বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যায় না। প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত আমাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয়েছে।

তারপরও আমাদের আরও অনেক কিছু অর্জন করতে হবে। কারণ সাম্যের বাংলাদেশ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ এখনও আমরা অর্জন করতে পারিনি। আমাদের দেশে এখনো বৈষম্য রয়ে গেছে। এই বৈষ্যম্য কমানোর জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অনেক জায়গাতেই আমাদের পিছুটান আছে। বিশেষ করে ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও ধর্মীও উগ্রবাদ এগুলো আমাদের সমাজে রয়ে গেছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে গেছে। সেজন্য একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদেরকে উদার, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের তৈরি করতে হবে। সেটার জন্য আমাদের সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। একদিকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হওয়া ও আরেকদিকে সাংস্কৃতিক মতভেদ কমিয়ে জাতিগতভাবে আমাদের ভেতরে ভেতরে যে ফাটলগুলো রয়েছে, সেগুলো যদি জোড়া লাগাতে পারি, তাহলেই আমাদের উন্নয়ন টেকসই হবে এবং স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের দিকে আমরা এগিয়ে যাবো। অনুলিখন : আমিরুল ইসলাম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়