শিরোনাম
◈ চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু ◈ আইনজীবীদের গাউন পরতে হবে না: সুপ্রিমকোর্ট ◈ তীব্র গরমে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা আরও ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা ◈ সিরিয়ায় আইএসের হামলায় ২৮ সেনা নিহত ◈ সরকার চোরাবালির ওপর দাঁড়িয়ে, পতন অনিবার্য: রিজভী  ◈ সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম নালিশের রাজনীতি করছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ বুশরা বিবিকে ‘টয়লেট ক্লিনার’ মেশানো খাবার খাওয়ানোর অভিযোগ ইমরানের ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৫:২৪ সকাল
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৫:২৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

আরিফুর রহমান : অনেক ভয় পেয়েছিলি মরতে তাইনা? এখন তো দেখলি মরা কত সহজ!

আরিফুর রহমান : আমি সব সময় বেশি কথা বলি আবার লিখিও লম্বা। কিন্তু শফিকের মৃত্যু আমার কথা বলার শক্তিকে রুখে দিয়েছে, সকাল থেকে লেখার চেষ্টা করেও লিখছি রাতের বেলা এখন।   সহপাঠী ডাক্তার শফিক শিকাগোতে নিজের বাসা থেকে বের হয়নি কোথাও গত কয়েক মাস। সারাক্ষন কোভিডের ফাইজার ভ্যাকসিন টিমের সাথে গবেষণামূলক কাজ করতো ঘরে বসেই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কে 29 এর হোয়াটস এপ আড্ডাতে কোভিড নিয়ে আপডেটেড বৈজ্ঞানিক তথ্য দিতো আমাদের প্রতিদিন।

সহপাঠী ডাক্তার মাসুদের কোভিড আইভারমেকটিন প্রিভেনশন পলিসি নিয়ে চলতো তর্ক- বিতর্ক। মাত্র পরশু ফাইজার ভ্যাকসিনের কঠিন এলার্জিক প্রতিক্রিয়া নিয়ে শফিক জানালো, ফাইজারের প্রধান উপস্থাপক উইলিয়াম গ্রুবার এবং এফডিএর উপদেষ্টা প্যানেল চেয়ারম্যান ডাক্তার আর্নল্ড মন্টো মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগে শফিকের অধ্যাপক ছিলেন। আরো জানালো, প্রফেসর মাসাব যিনি ফ্লু স্ট্রেইন এবং ফ্লু ভ্যাকসিনের প্রধান আবিষ্কারক, তিনি সিরিয়ার বংশোদ্ভূত ছিলেন এপেলের স্টিভ জবের মতো।

মরার কয়েক ঘন্টা আগে শফিক জানালো, পেরুর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১২০০০ স্বেচ্ছাসেবকের উপরে চীনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষা স্থগিত করেছে। চীনা ভ্যাকসিন জনিত স্নায়বিক প্রতিকূল ঘটনার একটি গুরুতর প্রতিক্রিয়া তারা তদন্ত করছে। চীনারা ভ্যাকসিনের ভিত্তি হিসাবে ক্ষুদ্র ভাইরাস ব্যবহার করে। চীনে খুব কম রোগের হারের কারণে তারা কিছু আরব দেশের মানুষের ওপর তাদের স্টাডি করছে। শফিকের এটিই ছিলো আমাদের ফোরামে সর্বশেষ তথ্য-পোস্ট।

মুক্তিযোদ্ধা শফিক Syed Islam তাঁর ফেসবুকে ১৯৭১ নভেম্বর মাসের যুদ্ধের গল্প শুনিয়েছে আমাদের। জিন্জিরার মোটর কোম্পানির গ্যারেজে অবস্থানরত পাক বাহিনীকে আক্রমণ করার সম্মুখ যুদ্ধে তার সাথী ওমর শাহাদাত বরন করেছিলেন। সে লিখেছে, "নভেম্বরের ২০ ঈদ উল ফিতরের দিন ছিলো। আমি আমাদের কমান্ডার বাবরকে বলেছিলাম, আমার বাবাকে হাসপাতালে দেখতে ঢাকায় প্রবেশ করতে চাই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩০ নম্বর কেবিনে বাবাকে আমাদের যুদ্ধ ও মিশনের কথা বললাম। বাবা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন কিন্তু কিছু বললেন না। এরপর ঢাকার বাইরে মুক্তিযোদ্ধা দলের সংগে যোগ দিলাম। ২ ডিসেম্বর বাবাকে আবার দেখতে গিয়ে দেখলাম অক্সিজেন নিচ্ছেন আর সংবাদ পড়ছেন। 'ভারত দ্বারা অল আউট আক্রমণ' শিরোনামটি এখনো স্পষ্ট মনে আছে।

আমি বাবাকে আমাদের মিশনের গল্প বললাম, তিনি আমার দিকে তাকিয়ে সবটা শুনলেন। মৃত‍্যু পথযাত্রী বাবার চোখে আমি মুক্তিযোদ্ধা ছেলের জন্য গর্ব দেখেছি। পরের দিন সকালে বন্ধু ডাক্তার আশরাফ আলী টিপুর বাড়ির পিছনে বালির নীচে অস্ত্র পুঁতে ফেলার পরেই আমার কাজিন অন্য একজন মুক্তিযোদ্ধা এসে বলেছিলেন "আমার সাথে এসো, তোমার বাবা এক ঘন্টা আগে মারা গেছেন।"
সেদিন রাত আটটায় বাবাকে কবর দিতে আজিমপুর গেলে কেউ আমার কানে ফিসফিস করে বললেন "আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। কবরস্থান থেকে সরে যান দয়া করে।"

আমি আর টিপু লালবাগের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেই। সেদিন রাত ১২ টার দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনী ঢাকা আক্রমণ করতে শুরু করে। পুরো শহরটি ট্রেসার রাউন্ডে আলোকিত হয়েছিল। পরের দিন সকালে সজিবের যোদ্ধাদল আমাকে জানালো যে তারা ভারতীয় বিমানবাহিনীর অফিসারকে উদ্ধার করেছে যার বিমানটি ভুপাতীত হয়েছিল। তাদের একজন প্রমান স্বরুপ একটা কার্ড আমাকে দিল তাতে লেখা ছিল Sqadron Leader K.D Mehra. কয়েকদিন আগে সজীব জানালো সেই ভারতীয় বীর পাইলট দুই বছর আগে মারা গেছেন।

মুক্তিযুদ্ধ আমার প্রাণপ্রিয় বাবার জন‍্য আমাকে শোক পালন করতে দেয়নি। দেশ স্বাধীন হল। আমি এখন কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন। সেই থেকে চলেছে জীবনের সংগ্রাম। বিধবা মা পিতৃহারা তিনটি ছোট ছোট ভাই। আঠারো বছরের একজন পিতৃহারা তরুনের জীবন সংগ্রামের কাহিনী না হয় নাই বললাম। কিন্তু ৩ নভেম্বর আসলেই এই সব কথাগুলি আমার এমনিতেই মনে পড়ে যায়।"

শফিক করোনা আক্রমণে মারা গেলে কষ্ট পেতাম কিন্তু অবাক হয়েছি সে আল্লাহর কাছে ফিরে গেছে ম্যাসিভ হার্ট এটাকে, এম্বুলেন্স আসার সময় দেয়নি, অথচ সে একজন বড় ডাক্তার, একজন বিজ্ঞানী।
শফিকের হটাৎ মৃত্যু নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। সে আমাকে অবাক করে চুপ করিয়ে দিয়েছে।

কেন যেন মনে হচ্ছে মৃত্যুর দরজায় আমাদের বাকী সবাইকে ওয়েলকাম করার জন্যে আগে যেয়ে দাঁড়িয়ে আছে শালায় মৃত্যুর পৃথিবীতে।
মনে হচ্ছে মরলেই দেখবো, শফিক হাসিমুখে বলছে, অনেক ভয় পেয়েছিলি মরতে তাইনা? এখন তো দেখলি মরা কত সহজ! আমি কেমন করে হটাৎ মরে গেলাম! আয় যাই চল, আজরাইল ভাইর দোকানে চা খেয়ে আসি, ওখানে সব সহপাঠী বন্ধুরা অপেক্ষা করছে, চিকা ফারুক, আবুল হোসেন, দিদার, ফরিদী, দারুল, মাহবুব, শামীম চাচী, মনোয়ারা, শাকিল, নূর ইসলাম। স্বপ্না রক্ষিতও আছে বুঝলি!
হে আল্লাহ, শফিককে আপনি ক্ষমা করুন,রহম করুন, জান্নাত নসীব করুন।
সূত্র- ফেসবুক থেকে

আমি সব সময় বেশি কথা বলি আবার লিখিও লম্বা। কিন্তু শফিকের মৃত্যু আমার কথা বলার শক্তিকে রুখে দিয়েছে, সকাল থেকে লেখার চেষ্টা...

Posted by Arifur Rahman on Monday, December 14, 2020

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়