মোজাফ্ফর হোসেন: গণতন্ত্রে প্রতিটা ভোট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য শতভাগ জনসমর্থন অর্জন করা সম্ভব নয়। সত্তরের নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে শতভাগ ভোট পায়নি। মৌলবাদীরা তখনো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে, অসাম্প্রদায়িক বাংলার সঙ্গে ছিলো না। বর্তমান আওয়ামী লীগকে সেটা মনে রাখতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে ভোট পেয়েছিল, সেটাই একটি রাজনৈতিক দলের সর্বোচ্চ সফলতা। মৌলবাদীরা কোনোদিনই এদেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠী নয়। নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে মৌলবাদী উগ্র মুসলমানরা সংখ্যালঘু। এটা আমি এখনো বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগগে, বঙ্গবন্ধুকন্যাকে, সেই বিশ্বাস হারালে চলবে না। এদেশে কোনো ইসলামি দল দাঁড়াতে পারেনি, পারবে না। জামায়াত ইসলামের জনসমর্থন সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে, আগে যে দুয়েকটা সিট পেতো, এখন তাও পাবে না। হেফাজতে ইসলাম আরও বিচ্ছিন্ন গ্রুপ। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যে বিভিন্ন শাখা উপশাখা আছে তাদের মধ্যেই হেফাজতের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। বছর দশেক আগেও হেফাজতের সারাদেশের কোনো বিষয়ে কিছু বলার অধিকার ছিল না। আওয়ামী লীগই তাদের আপাত পক্ষে টানতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে মেইনস্ট্রিমে দাঁড় করিয়েছে।
মানছি, ক্ষমতায় থাকা একটা রাজনৈতিক দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার জন্য এককভাবে সর্বোচ্চ আসন দরকার, কিন্তু সব আসন না। আওয়ামী লীগ কম্প্রোমাইজ না করে নিজের চরিত্র দিয়েই সেটা পাবে। ইতিহাস তার সাক্ষী। হুজুরদের বাংলাদেশের সংবিধান ছেড়ে দিলেও আওয়ামী লীগ তাদের দল হবে না। কারণ আওয়ামী লীগ তার ইতিহাস বদলাতে পারবে না। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর সাংস্কৃতিক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে অস্বীকার করতে পারবে না। আওয়ামী লীগকে তার স্বরূপে ফিরতেই হবে। অনেক চড়াই-উৎরাই পরীক্ষা-নীরিক্ষার মধ্য দিয়ে দলটা এই বাংলার সকল বর্ণ, ধর্ম, শ্রেণি পেশার মানুষের দল হয়ে উঠেছে। শুধু মুসলমানদের দল হয়ে উঠতে পারে না। প্রায় সত্তর বছর আগেই সেই লেজ কেটে এসেছে। আজ হোক, কাল হোক কোনো বিরোধীদলকে তাদের মোকাবেলা করতেই হবে। ফলে নিজেদের আত্মপরিচয় ও অস্তিত্ব ঝালিয়ে নেয়ার সময় এসেছে। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :