ফজলুল বারী: রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে বুঝদার মানুষের অবুঝের মতো মন্তব্য দেখে হতাশ লাগে। যা বলবেন সাথে একটা প্রতিকার বলবেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী কী বাংলাদেশ দাওয়াত করে এনেছে। বাংলাদেশ কী কোনো আশ্রয় নেবার মতো দেশ। তাহলে প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশি দেশ ছাড়ছে কেন? নিরাপদ অভিবাসনের সুযোগ যদি থাকতো তাহলে প্রতিদিন আরও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি দেশ ছেড়ে যেতেন। বিদেশে অনেক কষ্ট। কিন্তু মানুষের মর্যাদা আছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশ একটা পরিস্থিতিতে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে। ভারত চীনসহ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মিত্ররা রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ায়নি। সোজা সাফটা একটা কারণ তারা ধর্মে মুসলিম। মুসলিমদের নিয়ে বিশ্বজুড়ে এখন নানা স্পর্শকাতর অবস্থা চলছে। কিছু হিন্দু রোহিঙ্গাও এসেছিলো ঢলের সঙ্গে। ভারত চুপচাপ তাদের মিয়ানমারের বাড়ি ঘরে বসিয়ে দিয়ে এসেছে। শরণার্থীরা যখন এলো তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার বোন শেখ রেহানার অনুরোধে তিনি তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। শেখ রেহানা তাকে বলেছেন ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারো, তাদেরও পারবে। আসলে শেখ রেহানার আগে সীমান্তে তাদের রিসিভ করছিলেন তার পুত্রবধূ।
রেহানাপুত্র ববির স্ত্রী জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কর্মকর্তা। তিনিই সীমান্তে পলায়নপর শরণার্থীদের রিসিভ করেছিলেন। তাদের তখন গ্রহণ না করে উপায় ছিলো না। পানিতে ডুবে মরছিলেন অনেক নারী ও শিশু। শরণার্থীদের আগমন নিয়ে বাংলাদেশে বিশেষ একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কারণ বাংলাদেশ শরণার্থী জাতি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো। ভারতের মানুষকে এর জন্য শরণার্থী কর দিতে হয়েছে। যেটা বাংলাদেশের মানুষকে দিতে হয়নি। উল্টো প্রথম কয়েক মাস সারাদেশের মানুষের দেওয়া ত্রানে শরণার্থীদের খাওয়ানো হয়। বাংলাদেশের নানাকিছু নিয়ে চুরিচামারির অভিযোগ শোনা যায়। কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে কোনো অভিযোগ নেই। সামরিক বেসামরিক প্রশাসন মিলে এক অনন্য দক্ষতায় বাংলাদেশ এ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে চলেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কিছু খেতাব পেয়েছেন যা এর আগে বাংলাদেশ পায়নি। বাংলাদেশ এমন সব আন্তর্জাতিক ফোরামে এখন দাওয়াত পায় যা আগে কখনো পেতো না। কিন্তু প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। শরণার্থীদের মাধ্যমে ধ্বংস হয়েছে কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ জনপদ। কারণ শুরুতে তাদের ত্রান দেওয়া হয়েছে জ্বালানি দেওয়া হয়নি।
রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা চলছে। আপনি স্বীকার করুন না করুন রোহিঙ্গাদের উৎস নিয়ে মিয়ানমারের দাবিটি একেবারেই অন্তসার শূন্য নয়। চট্টগ্রাম এক সময় আরাকানের অংশ ছিলো। আরাকানের ওই অংশ ছিলো সমৃদ্ধ। শরৎচন্দ্র চাকরির জন্য রেংগুন যেতেন। বহু বছর আগে এপারের লোক ওপারে গিয়ে বসতি গড়েছে। কিন্তু ওপাশের মূলধারার সঙ্গে মিশতে পারেনি। রোহিঙ্গা মুসলমানই রয়ে গেছে। একদিন বিশ্বের দেশে দেশে বাংলাদেশিদের নিয়ে একই সমস্যা হবে। বাংলাদেশিরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে একখণ্ড বাংলাদেশ করছে। মূলধারার সঙ্গে মিশছে না। মিশতে পারছে না। এগুলোর মাশুল একদিন রোহিঙ্গাদের মতো গুনতে হতে পারে। পাকিস্তান বাংলাদেশ থেকে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের একজনকে নেয়নি। তাদের মাঝে বাংলাদেশের নাগরিক করে নেওয়া হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার নেবে না এই বাস্তব ধারণা থেকে বাংলাদেশ তাদের নিয়ে গেছে ভাসানচরে। কিন্তু কার্যত রোহিঙ্গারা ভাসানচরে থাকবে না। সারা পৃথিবীতে যতো রোহিঙ্গা আছে তাদের বড় অংশ সমুদ্রপথেই বাংলাদেশ থেকে গেছে। ইউরোপে অস্ট্রেলিয়ায় উঠতে পারলে তারা আশ্রয় পায়। কারণ সবাই জানে তারা প্রকৃত শরণার্থী। তাদের কোনো দেশ নেই। রোহিঙ্গা যারা চলে যেতে চায় তাদের সহায়তার পথ বের করতে হবে। তারা এটম বোম হবে এই হবে সেই হবে এসব ফালতু কথা বলে লাভ নেই। বাংলাদেশের সামর্থ্য নিয়ে যাদের আস্থার অভাব তারাই এমন ফালতু মন্তব্য করতে পারেন। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :