নিউজ ডেস্ক : ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে ফ্রান্সবিরোধী বিক্ষোভে ঢাকার রাজপথ উত্তপ্তের চেষ্টা ছিল আগে থেকেই। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভাস্কর্য নির্মাণবিরোধী দেশীয় ইস্যু। স্পর্শকাতর এসব বিষয় নিয়ে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন রাজপথে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের চেষ্টা চালাতে পারে বলে মনে করছে সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তবে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কঠোর অবস্থানে না গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কৌশলী হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাদের প্রতিবেদনে। এরই মধ্যে প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে কোণঠাসা জামায়াতে ইসলামী এরই মধ্যে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছে। তবে দলটির নতুন নেতৃত্ব রাজপথে কোনো ধরনের শোডাউন করতে পারেনি। সেক্ষেত্রে ধর্মীয় স্পর্শকাতর ইস্যুকে কাজে লাগাতে পারে দলটি। যদিও রাজধানীর দোলাইরপাড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণের সঙ্গে ধর্মকে যুক্ত করে বিরোধিতায় ঘোর আপত্তি ক্ষমতাসীনদের।
রাজধানীতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের পরিবর্তে আল্লাহর ৯৯ নামসংবলিত স্মৃৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ইমাম ও মুসল্লি ঐক্য পরিষদ গত ১২ অক্টোবর দোলাইরপাড় উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে গণসমাবেশ করে। পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি পেশ করা হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পরিবর্তে আল্লাহর ৯৯ নামসংবলিত মিনার তৈরির প্রস্তাব যুক্ত রয়েছে। যদিও ইমাম ও মুসল্লি ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে গণসমাবেশ কর্মসূচি পালিত হলেও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক নেতারা ওই গণজমায়েতের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় যুক্ত ছিল।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে ইসলামী দলগুলোর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ও কর্মী-সমর্থক থাকায় নেতিবাচক গুজব ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়ে যায়। এমন হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
ঢাকার ২৩টি মসজিদ ও মাদ্রাসা নিয়ে অনুসন্ধানের পর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, অধিকাংশ মসজিদ ও মাদ্রাসার জমিসংক্রান্ত তথ্য, গ্যাস-পানি-বিদ্যুতের সংযোগ ও বিলের বিষয়ে কোনো না কোনো ত্রুটি রয়েছে। ত্রুটির বিষয়গুলো উঠে আসায় ইমাম ও মুসল্লি ঐক্য পরিষদ অস্বস্তিতে ভুগছে। এর মধ্যেও ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলন এগিয়ে নিচ্ছে সংগঠনটি।
গতকাল জুমার নামাজ শেষে রাজধানীতে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় মুসল্লিদের একটি অংশ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট দিয়ে রাজপথে নামে। আরেকটি অংশ মসজিদের সিঁড়ির ওপর অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ সেখান থেকে মুসল্লিদের চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলে ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করে। রাজপথে নামলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে মসজিদের ভেতর অবস্থানকারী মুসল্লিরা মিনিট দশেক ভাস্কর্যবিরোধী এবং নাস্তিকদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দিয়ে অবস্থান নেন।
পুলিশ জানায়, বিক্ষোভে অংশ নেয়াদের মধ্যে অধিকাংশ সাধারণ মুসল্লি। তাদের ওপর চড়াও না হয়ে কৌশলে তাদের মোকাবেলার নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রথমেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করা হয়। এর পরও পল্টন অভিমুখে মিছিল শুরু হলে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়। তবে এ সময় কোনো মুসল্লি আহত বা গ্রেফতার হননি।
এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল জোনের এডিসি এনামুল হক বলেন. আগে থেকে অনুমতি ছাড়া যেকোনো কর্মসূচির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর পরও জুমার নামাজ শেষে একদল মুসল্লি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। অনুমতি না থাকায় পুলিশ তাদের পল্টন অভিমুখী মিছিল থামিয়ে দেয়।
এর আগে বুধবার ভাস্কর্যবিরোধী গণজমায়েত ঠেকাতে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। নির্দেশনায় বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি না নিয়েই ইদানীং বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন সভা, সমাবেশ, গণজমায়েতের কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছে। তাদের কর্মসূচি পালন করতে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় যান ও জন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। বিদ্যমান আইনে বৈধ কোনো দল বা গোষ্ঠীর সমাবেশের স্বাধীনতা থাকলেও সাধারণ জনগণের নাগরিক সুবিধা অক্ষুণ্ন রাখা, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে এ ধরনের কর্মসূচি পালন এবং শব্দযন্ত্র ব্যবহারের জন্য ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুসারে কমিশনারের পূর্বানুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা পালন করতে হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এএআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, প্রত্যেক মানুষের কাছেই নিজের ধর্ম অত্যন্ত সম্মান এবং শ্রদ্ধার একটি বিষয়। তাই সবার উচিত অন্যের ধর্ম বা ধর্মবিশ্বাসকে আহত না করা। যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের বিষয়ে সচেতন থাকা। বণিক বার্তা-
আপনার মতামত লিখুন :