শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:০১ দুপুর
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:০১ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বডিবিল্ডার রেনি ক্যাম্পবেল নারীর শরীর সম্পর্কে ধারণা পাল্টাতে চান

রাশিদ রিয়াজ : দুই সন্তানের মা বডিবিল্ডার রেনি ক্যাম্পবেল দেখাতে চান নারীর শারীরিক কাঠামোর শক্তিশালী ও ক্ষমতার দিকটি। সমাজ নারীর শরীর নিয়ে যে চিন্তা করে তার বিরুদ্ধেই রেনি। শক্তিশালী পেশীর সমন্বয়ে গড়ে তোলা নারীর শরীর তিনি ধারণ করেছেন দিনের পর দিন কঠিন পরিশ্রম করে। তবে তা করতে যেয়ে রেনিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিরাট চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছে। শরীরের ওজন বাড়াতে হয়েছে ৮৫ পাউন্ড। ব্রিটেনে স্বীকৃত নারীর শারীরিক কাঠামো ৮ থেকে ১৪ এর বাইরে চলে গেছেন রেনি। নিজেও তার শরীর নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। ব্যক্তিত্বের অভিব্যক্তি তো দূরের কথা ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে নিয়ে রেনি ছিলেন অনেকটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কিন্তু ৪৪ বছরে এসে রেনি এখন দুশ্চিন্তার ভার মুক্ত। তিনি নিজেকে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেছেন তা ধারবাহিক প্রেরণার মধ্যে দিয়েই সম্ভব হয়েছে।

সিএনএন স্পোর্টসকে রেনি বললেন মিডিয়ার মাধ্যমে অনবরত চাপের মধ্যে পড়েছিলাম নারীকে ঠিক সমাজের ঠিক করে দেয়া অবয়ব ও শারীরিক কি ধরনের কাঠামোর মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু শরীর চর্চার মধ্যে দিয়ে আমি উপলব্ধি করলাম সমাজের মানুষের মধ্যে নারীর শরীর নিয়ে এই ধারণার একটা বিহিত হওয়া প্রয়োজন। ঠিক পেশীর সমন্বয়ে এক নারী। কিছু দিনের জন্যে আমাকে ক্ষুধামন্দার সঙ্গে লড়তে হয়েছিল। নিজেকে স্লিম রাখতে কি কষ্টই না করতে হয়েছে। সাময়িকীর প্রচ্ছদে দেখা মেদহীন নারীর মত হালকা ছিপছিপে আর টানটান ধনুকের মত শরীর পেতে ওজন কম রাখতে কি যে কষ্টই না করেছি।

এরপর একদিন নারীদের শরীরচর্চা অনুষ্ঠানে গিয়ে রেনির ধারণাই পাল্টে গেল। তার ভাষায় নিজের মধ্যে আস্থা ফিরে পেলাম। বলেন আমি এখন নিজের মতই পেশীবহুল এক নারীকে পছন্দ করি। এজন্যে নিষ্ঠুরতা সহ্য করতে হয়। এমনকি আমাকে নারীর টয়লেট থেকে বের হয়ে যেতে বলা হয়েছে। অনেক সময় অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। কারণ মানুষের মন অনেক পুরাতন কিছুর ওপর এখনো নির্ভর হয়ে আছে। আমি এর বিরুদ্ধেই দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এবং দাঁড়িয়ে আছি। মানুষের মধ্যে এত সমালোচনা কেন যে নারীর শরীর পেশীবহুল হতে পারবে না। অথচ তা আমাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে যথেষ্ট আস্থা এনে দিয়েছে, প্রেরণার সৃষ্টি করেছে।

রেনি বলেন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ে আমাকে থমকে যেতে হয়েছে কিন্তু থেমে থাকিনি। টয়লেট পরিবর্তন করার পরও আমি তাদের বুঝাতে চেয়েছি সুন্দর করে যে আমাকে দেখতে পুরুষের মত হলেও আসলে আমিও নারী। তাই দিন শেষে অন্য নারীর মত আমারও তাদের টয়লেট ব্যবহার করার অধিকার রয়েছে। আমার আবেগ, নিজেকে উৎসর্গ ও আবেশের মধ্যে খুব ঘনিষ্ট একটা সম্পর্ক ছিল। নারী বডিবিল্ডারদের ওপর পড়াশুনা করেছি। এক দশক ধরে সমাজবিদ ড. তানিয়া বানসেল নারী বডিবিল্ডারদেরকে নিয়ে গবেষণা করছেন। তাকেও জেনেছি। বানসেলকে যখন ফোন করে এসম্পর্কে আরো জানতে চাই বলেছি, সাথে সাথে তিনি বলেছেন বিষয়টি সুখকর নয়।

ক্যানটারবারি ক্রাইস্ট চার্চ ইউনিভার্সিটির স্পোর্টস এন্ড এক্সারসাইজ বিভাগের প্রভাষক ড. বানসেল বলেন হ্যা সমাজে মানুষের মধ্যে নারী ও পুরুষের শরীর নিয়ে পেশীর ব্যাপার নিয়ে অবশ্যই একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। যা অতিক্রম করলে নারীর শরীরটি সংক্রামক হয়ে ওঠে এবং তা নিয়ে মানুষ অনবরতভাবে নানা প্রশ্নের অবতারণা করে। উত্তেজিত করে তোলে নানা ধরনের উস্কানিমূলক প্রশ্ন দিয়েও। যদিও নারীর এমন পেশীবহুল শরীরের একটা বাজার আছে, কিন্তু তাদের ফিগার সম্পর্কে সামাজিক ধারণা স্থির করে দেয়া আছে যে নারীর কোমর হবে সরু, পশ্চাৎদেশ হবে ঢেউ খেলানো ও পা হবে সরু ধরনের যা একেবারেই তথাকথিত।

কিন্তু রেনি যখন ব্যায়াম শুরু করলেন তখন তাকে প্রচুর খাবার খেতে হতে যা রীতিমত তার জন্যে ছিল শকিং। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেল। পেশীবহুল হয়ে শরীরের বৃদ্ধিতে ভয় পেয়ে গেলেন রেনি। থামেননি। গরম বোধ লাগত। প্রচুর খেতে হত। কিন্তু এই পর্যায় কেটে গেলে উপলব্ধি করতে থাকলাম নিজের শরীর এক বিস্ময়কর যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। এবং যন্ত্রের খাদ্য হিসেবে তেল ভর্তির মতই শক্তি যোগানোর জন্যে আরো খাবার গ্রহণ করতে থাকলাম। যে কোনো এ্যাথলেটদের দিকে তাকান তাদেরকেও এসব কঠিন পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। বিখ্যাত ফটোগ্রাফার ম্যাক্স এলিস রেনির ছবি তুলতে যেয়ে বলেন তার শরীর আমার কাছে ‘ওয়ার্ক অব আর্ট’। রেনি সারাটা জীবন পরিশ্রম করেছে এ পর্যায়ে আসতে। তুমি যদি নারী হওয়া তাহলে উজানে সাঁতার কাটতেই হবে। রেনি তা করেছে। প্রচলিত সব কিছু ভেঙ্গে তোমাকে সামনে আগাতে হবে।

তবে শরীরচর্চার অন্ধকার দিক হচ্ছে স্টেরয়েডস নেয়া। যা পেশী সৃষ্টিতে সাহায্য করে। রেনির কপাল ভাল ডোপ টেস্টে সফলতার মধ্যে দিয়েই উৎরে গেছেন। জানান ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ বডিবিল্ডিং এন্ড ফিটনেসের নারী কমিটির চেয়ারপারসন ওয়ান্ডা টিয়ারনি। রেনি বলেন স্টেরয়েডস অন্যান্য খেলাধূলা ও সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সবচেয় বড় কথা একজন নারী হিসেবে শরীরচর্চা আমাকে মানসিকভাবে মজবুত অবস্থান এনে দিয়েছে। করেছে দৃঢ় চিত্তের অধিকারী।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়