সাদ্দাম হোসেন: [২] আজ ০৩ ডিসেম্বর ২০২০। ঠাকুরগাঁও পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস স্বসস্ত্র সংগ্রামের পর আজকের এই দিনে বীরদর্পে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবেশ করে মুক্তিযোদ্ধারা। জনমানব শুন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন এই ঠাকুরগাঁও শহর ছিল সেদিন মানুষের শোক আর হাহাকারে ভরা । পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নিপীড়ন নির্যাতন আর ধ্বংশযজ্ঞের চিহ্ন যেন শহরের আনাচে কানাচে।
[৩] ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে পাক হানাদাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সহজ সরল মানুষের ওপর। এ সময় হানাদাররা গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠণ ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এরপর ১৫ই এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও। ঠাকুরগাঁওয়ের ইসলামনগর থেকে ছাত্রনেতা আহাম্মদ আলী, ইয়াকুব আলী, মাজারুল, দবিরুল ইসলাম, নুরুজ্জামান ও সিরাজউদ্দীনকে ধরে এনে পাক হানাদার বাহিনী ঠাকুরগাঁও ক্যাম্পে আটক করে রাখে।
[৪] সদর উপজেলার ফাড়াবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধার পিতা শেখ শহর আলী ও তার ভাই শেখ বহর আলীসহ ১৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে হত্যা করে তাদের মরদেহ আব্দুর রশিদ ডিগ্রি কলেজের পাশের একটি পানির কূপে ফেলে দেয়। হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা গণহত্যা চালায় সদর উপজেলার জাঠিভাঙ্গা গ্রামে।
[৫] সেখানে স্থানীয় কিছু লোকের সহায়তায় আশ-পাশের অনেক গ্রামের প্রায় তিন হাজার নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এনে পাকবাহিনী গুলি করে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করে তাদের মরদেহ মাটি চাপা দেয়।
[৬] জেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক স্থানে গণহত্যা চালায় পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা। এরই মধ্যে সুসংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামি মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলে দুর্বার প্রতিরোধ।
[৭] ঠাকুরগাঁও তখন ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এ মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শক্রমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাত ছাড়া হওয়ার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। এরপর তারা প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁওয়ে।
[৮] ২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে প্রচন্ড গোলাগুলি শুরু হয়। ওই রাতেই শক্রবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর ভোররাতে ঠাকুরগাঁও শহর শক্রমুক্ত হয়।আর এ সময়টাতে মুক্তিযোদ্ধাদের শহরে প্রবেশ যেন প্রাণ ফিরে আসে সাধারণ জনগনের মাঝে । ধীরে ধীরে জড়ো হতে থাকে স্বজন হারা নির্যাতিত নিপিড়ীত মানুষ । সকাল হতে দুপুর গড়াতে গড়াতে জনসমুদ্রে পরিণত হয় এই জনপদ । ফুলেল শুভেচ্ছা আর বীরত্বগাঁথায় বরণ করে নেয় মুক্তিযোদ্ধাদের ।
[৯] দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় স্বরণ করে রাখার জন্য জেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচীর আয়োজন করে। সম্পাদনা: সাদেক আলী
আপনার মতামত লিখুন :