ফজলুল বারী: মূর্তি আর ভাস্কর্য কোনটা সহি, কোনটা সহি নাÑ এ নিয়ে বিতর্ক এখন বাংলাদেশে তুঙ্গে। মুহূর্তে লাখ লাখ শব্দ লেখা হচ্ছে অনলাইনে। আরে মিয়া সবটাই আপনাদের মনের বাঘ। সিডনিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর একটা আবক্ষ মূর্তি আছে। ওয়েস্টারন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় সেটা করেছে। এটার নাম কেউ আবক্ষ ভাস্কর্য লিখে না। কিন্তু সেটার কেউ পূজা করতে যায় না। শ্রদ্ধা দেখাতে ফুল দিতে পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পারলে নিজেকে মর্যাদা সম্পন্ন মনে হয়। গৌরব বোধ হয় সিডনির মতো প্রাচীন শহর, যেখানে পৃথিবী বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য আছে সেখানে বাংলাদেশের জাতির জনকের নামেও এমন একটা স্থাপনা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাও সিডনিতে এসে সেই আবক্ষ মূর্তি দেখতে ফুল দিতে সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন। এখানেও মুসলমান আছেন। তারা সেখানে ছুটে তেড়ে যাননি। কারণ তাদের অনেক কাজ আছে। আসলে আপনাদের মনের মধ্যে পাকিস্তান, জাতির পিতার আবক্ষ মূর্তিটাও আপনার কাছে কুফরি মনে হয়। মরেন গিয়া আপনারা। কে আপনাদের বাধা দিয়েছে।
আসলে বাংলাদেশের পাকিস্তানিদের এই সমস্যাটা নতুন না। আগে বিষয়টি শহীদ মিনারের ওপর দিয়ে যেতো। শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মৃতির সম্মানে ফুল দেয় বাঙালি। এর জন্য পাকিস্তানিরা বহুবার এটি ভেঙেছে। রাতের আঁধারে দেশের বিভিন্ন অংশে এটি ভাঙে, ভেঙেছে বহু বাংপাকি। প্রাণের শহীদ মিনার আবার গড়ে ওঠে। শহীদ মিনারে কেউ নামাজ পড়তে যায় না। নামাজের জন্য মসজিদ আছে। আপনাদের যারা শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াটা কুফরি মনে হয় ভাষা শহীদদের জন্য নামাজ পড়ে তো প্রতিদিন দোয়াও করেন না। বাংলায় কথা বললেও আপনাদের মনের ভেতর তো উর্দু প্রেম। মাদরাসার অনেক বই এখনো উর্দু। এসব বাংলায় রূপান্তর করলে কী ধর্মের অসম্মান হবে। আরব দেশে নাজিল হওয়ায় কোরআনের ভাষা আরবি। কোরআন তো আর পাকিস্তানে নাজিল হয়নি।
এই বাংপাকিদের এমন সমস্যার প্রকাশও বাংলাদেশে নতুন নয়। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ হলো। আপনি এই ফাঁসির পক্ষে না বিপক্ষে সেটা না বলে হঠাৎ শুরু করলেন আস্তিক-নাস্তিক বিতর্ক। এখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে নানান অনুষ্ঠান হচ্ছে, এসবের কোথাও আপনাদের কোনো অংশগ্রহণ নেই, জাতির পিতার জন্য কোথাও একটা দোয়া মাহফিলের আয়োজনও করেননি। উল্টো আপনারা নেমেছেন ভাস্কর্য বিতর্কে। আপনাদের ভেতরের পাকিস্তান মনটার মৃত্যু নেই, এ সমস্যা আপনাদের। বাংলাদেশ কীভাবে চলবে তা ঠিক হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে। সেই যুদ্ধের হারু পার্টি আপনারা। তখন পলাইছিলেন। কোনো পাকিস্তানি হারু পার্টির টাকায়-কথায় বাংলাদেশ চলবে না। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :