রিপনচন্দ্র মল্লিক: [২] মাদারীপুরে রাজৈর পৌরসভা নির্বাচন ডিসেম্বরে। এতে মেয়র পদপ্রার্থী ৭জন। আওয়ামী লীগ থেকে অংশ নিচ্ছেন ৪জন। এর মধ্যে তিনজনই দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করছেন। বিএনপি থেকে অংশ নিয়েছেন মাত্র একজন। প্রার্থী বেশি থাকায় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অস্বস্তিতে আছেন। এই পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট নেয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে মাদারীপুর জেলায় ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
[৩] জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের সূত্র জানায়, রাজৈর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১২টি ভোটকেন্দ্রে ৭৫টি কক্ষে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন ও কাউন্সিলর পদে ৪৪ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ভোট গ্রহণ করা হবে ১০ ডিসেম্বর।
[৪] স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদারীপুর সদর ও রাজৈর উপজেলা নিয়ে মাদারীপুর-২ আসন। এই আসনের সাংসদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। তাঁর নির্বাচনী এলাকার মধ্যে রাজৈর পৌরসভা। এই পৌরসভায় বর্তমান মেয়র ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজ তাঁর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। শামীম নেওয়াজ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেও মেয়র পদে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমা রশীদ। নাজমা রশীদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
[৫] দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই দুই নেতার মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্ধের কারণে আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, রাজৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতালেব মিয়ার মেয়ে রাজৈর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক গোপা শারমীন, স্থানীয় সাপ্তাহিক সুবার্তা পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিক শেখ মোস্তাফিজুল হক নাদির ও উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লিতা কুদ্দুস মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে গোপা শারমীন ও লিতা কুদ্দুসের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেলেও তারা পরে মনোনয়ন ফিরে পান। এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
[৬] রাজৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইছেন, তাঁরা দলের শত্রু। তাঁরা মূলধারায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন না। আওয়ামী লীগ থেকে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থী পাঁচজনই শাজাহান খানের অনুসারী। এমনকি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়া রাজৈর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতালেব মিয়ার মেয়ে গোপা শারমীনও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শামীম নেওয়াজ বলেন, ‘দল থেকে আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু দলের নীতিনির্ধারকেরা ভুল ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিয়েছেন। একজন মেয়র হিসেবে আমি করোনাকালে মাঠে ছিলাম, এখনো আছি। জনগণ ও পৌরবাসীর অনুরোধেই আমি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে পৌরবাসী দলের চেয়েও ব্যক্তি হিসেবে আমাকেই মূল্যায়ন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
[৭] এবিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নাজমা রশীদ বলেন, ‘আমার বাবা আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী নেতা। আমার পরিবার ও আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিলেও আমি তাতে চিন্তিত নই। কেন না ভোটারদের কাছে আমি জনপ্রিয়।’
[৮] রাজৈর পৌর বিএনপির আহবায়ক পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে রাজৈরে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ইভিএম ভোট এখনো রাজৈরবাসী বোঝে না। তবুও আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। এর আগে রাজৈরে বিএনপি থেকে যারাই কোন নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এরপরও যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’
[৯] জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘জেলায় প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট গ্রহণ নিয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে প্রার্থীদের ইভিএমে ভোট পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছি। ২৪ নভেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী নির্বাচনী গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইভিএমে ভোট নেওয়ার বিষয়টি হাতে-কলমে দেখানো হেেয়ছে। এ ছাড়া নির্বাচনের দুই দিন আগে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে মক ভোটিং অনুষ্ঠিত হবে। আমরা ইভিএমে সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিয়ে শতভাগ আশাবাদী।’ সম্পাদনা: হ্যাপি
আপনার মতামত লিখুন :