শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ জিয়াউর রহমানের সময়ই দেশে বিভেদের রাজনীতির গোড়াপত্তন হয়: ওবায়দুল কাদের  ◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী 

প্রকাশিত : ০১ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৭:৩১ সকাল
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর, ২০২০, ০৭:৩১ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ডা. আরমান রহমান: কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের হালনাগাদ

ডা. আরমান রহমান: অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ডের তৈরি কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন নিয়ে যে ধোয়াশা তৈরি হয়েছে তা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। নিজেদের প্রিলিমিনারি ডেটা উপস্থাপন করতে যেয়ে মূলত এ বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন। প্রথমে ঠিক করেছিলেন ৬০ হাজার মানুষের উপর এই ভ্যাকসিনের ৩য় পর্যায়ের পরীক্ষাটি করবে। এখানে প্রথম এগারো হাজার (১১৬৩৬) মানুষের উপর করা সমীক্ষার উপাত্ত দেখিয়েছেন। এই ট্রায়াল করা হয়েছিলো ইংল্যাণ্ডে এবং ব্রাজিলে। তারা বলছেন, এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ এর মতো। কিন্তু ট্রায়ালের শুরুতে ভুল করে ২৭৪১ মানুষকে প্রথম ডোজ টি হিসেবের অর্ধেক দেওয়া হয়েছিলো। দেখা যায়, এই ২৭৪১ মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ। বাদবাকি ৮৮৯৫ জন মানুষে এর কার্যকারিতা ৬২ শতাংশ, গড় কার্যকারিতা দেখিয়েছে ৭০ শতাংশ। কিন্তু কম ডোজ দেওয়ায় কেন এরকম হলো সেটা এখনো পরিষ্কার জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যেহেতু এই ভ্যাকসিনটি বানানো হয়েছে শিম্পাঞ্জির একধরণের ভাইরাসকে বাহক হিসেবে ব্যবহার করে, আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেম বেশি ডোজের ভ্যাকসিনের এই বাহকে শুরুতেই অকার্যকর করে দেয়। যার জন্য গোটা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে আসে। কিন্তু শুরুর ডোজ টি কম দিলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম এই বাহককে ধ্বংস না করে এর মধ্যে বসানো করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে তার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। যাইহোক, এখন এস্ট্রাজেনেকা চেষ্টা করছে তাদের সব ট্রায়াল এই ডোজ অনুযায়ী করার, তারা আমেরিকাতে ৩০ হাজার মানুষের উপর এই পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এখানে উল্লেখ্য যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের প্রিলিমিনারি ডেটা সেভাবে প্রকাশ করেছে, তাতে বিজ্ঞ পরিসংখ্যানবিদরা ও খুশি হতে পারেন নি। সেখানেও অনেক পরিসংখ্যান গত ত্রুটি রয়েছে। আশা করা যায়, তারা তাদের ভুলভ্রান্তি কাটিয়ে অচিরেই যেই ডোজে ২৭০০ মানুষের উপর পরীক্ষা হয়েছে। সেটা আরও বড় আকারে করে তার তথ্য উপাত্ত আমাদের সামনে তুলে ধরতে পারবে। তারা বলেছেন, এই ভ্যাকসিন যে ৯০ শতাংশ কার্যকর হয়েছে তা শুধুমাত্র ৩৫-৫৫ বছর মানুষের জন্য, তাহলে বয়ষ্ক মানুষের জন্য এই ভ্যাক্সিন কি কার্যকর নয়? এরকম আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর নতুন করে করা ট্রায়ালে জানা যেতে পারে। তাহলে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক, আমরা কেন তাদেরকে নতুন ট্রায়ালের এই সুযোগ দিতে চাই-এর বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এক এস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিনের দাম ৩ ডলার, তারা এই ভ্যাকসিনটি মুনাফা করার জন্যে তৈরি করছে না। এই ভ্যাকসিন স্বল্প উন্নত দেশে দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার যে ব্যবস্থা তারা করেছে তা অন্য কোনো ভ্যাকসিনের বেলায় দেখা যায় না। মডার্নার ভ্যাক্সিনের দাম ২০ ডলার, দুই ডোজ ৪০ ডলার এবং ফাইজারের ভ্যাকসিনের দাম ২৫-৩৭ ডলার, দুই ডোজের দাম এর দ্বিগুণ। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে এই দামের ভ্যাকসিন দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়। দুই এই ভ্যাকসিনটি যে তাপমাত্রায় বহন এবং ব্যবহার করা যাবে, তা আমাদের দেশের জন্য কার্যকর। অন্যান্য ভ্যাকসিন গুলি (যেমন মডার্না, ফাইজার তাদের -২০ থেকে -৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় না রাখলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়)। তাই আমি মনে করি আমাদের উচিত অপেক্ষা করে দেখা যে অক্সফোর্ডের নতুন ডোজের ট্রায়েলের রেজাল্ট কবে আসে। সেটা কি আমাদের জন্য আদৌ ভালো হবে কিনা? সেই সঙ্গে অন্যান্য সেসব ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট আছে তাদেরকেও খতিয়ে দেখতে হবে। যেমন জনসন একটি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে যেটির মাত্র একটি ডোজেই অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ফলাফল তারা পেয়েছেন, এই ভ্যাকসিনটির দাম ১০ ডলার, স্বাভাবিক ঠাণ্ডা তাপমাত্রা (২-৮ ডিগ্রি) এটি বহন করা যাবে।

চাইনিজ ভ্যাকসিন এবং রাশান ভ্যাক্সিনকেও ভালো করে পরীক্ষা করে দেখতে হবে আমাদের দেশের জন্য তা কার্যকরী কিনা। মনে রাখতে হবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা একটি ভ্যাকসিনের শেষ কথা নয়, এটিকে সাধারণ মানুষের হাতে না পৌঁছা পর্যন্ত কাগজে কলমে ৯৫ শতাংশ ইফেক্টিভ ভ্যাকসিন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে শুধুই গালগল্প। এর সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জানার জন্য ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে বাংলাদেশে বড় আকারে সমীক্ষা চালানো অত্যন্ত জরুরি।

লেখক: ডাবলিন, আয়ারল্যান্ডে কর্মরত চিকিৎসক ও গবেষক

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়