শর্মী ভৌমিক: অন্ধের দেশে আলো কোনো কাজে আসে না, তবুও প্রদীপের বৈশিষ্ট্য আলো দিয়ে যাওয়া। বিশ্বের সেরা ফুটবলার ডিয়াগো ম্যারাডোনা, যাকে ফুটবলেশ্বর বলতে দ্বিধা নেই পুরো বিশে^র। তার মৃত্যুতেও শোক প্রকাশ করতে ভাবতে হচ্ছে একদল মানুষের। কারণ ম্যারাডোনা বিধর্মী, অমুসলিম। আর অমুসলিম মানেই কাফের, মুশরিক ইত্যাদি এবং তারা নাকি নিশ্চিত জাহান্নামীও। কী অদ্ভুত ব্যাপার, তাই না? এগুলো তাদের নিজের কথা নয়, মূল্যবান ধর্মগ্রন্থেরই কথা। ইসলাম ধর্ম সৃষ্টি হয়েছে সকল ধর্মের পরে এবং এটি একটি রূপান্তরিত ধর্মও বটে। অন্য ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে এ ধর্মে যোগ দিয়েছে বিশে^র অন্যান্য ধর্মের মানুষ। তাই তো ইসলামে যোগ দেওয়ার জন্য দাওয়াতের রীতিও রয়েছে। তো আমার কথা হলো, বিধর্মী বা অমুসলিমরা কী মানুষ নয়? আর মুসলিমরাই বা এলো কোথা থেকে। অন্য ধর্ম থেকে এসে তারা ভীনগ্রহের কেউ হয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে অন্য ধর্মের মানুষদেরকে কাফের, মুশরিক, না-পাক এসব উপাধিতে ভূষিত করতে আরম্ভ করে দিলো, অবাক হবার মতো কথা নয় এগুলো। ধর্মীয় ভাষায়ও যদি বলি তাহলেও বিধর্মী বা অমুসলিমরা কোনোভাবেই ইসলামের জান্নাত বা জাহান্নামে যাবে না।
তারা তাদের ধর্ম মতে স্বর্গ, নরক, হ্যাভেন, হেল ইত্যাদি স্থানগুলোতে যাবে। তো এ নিয়ে চিন্তা না করলেও তো চলে, তাই না। কে কাফের, কে মুশরিক, কে পাক, কে না-পাক এগুলো অন্য ধর্মের বেলায় প্রযোজ্য নয়। এগুলো যার যার ধর্মেই প্রযোজ্য হওয়ার কথা। কেন মানুষকে এভাবে আলাদা করে দেওয়া! ডিয়াগো ম্যারাডোনারা তো এ বিশ্বের সবার ধর্ম, বর্ণের অনেক ঊর্ধ্বে তাদের অবস্থান। তারা অমূল্য সম্পদ সারা বিশ্বের। উদারতা না থাকলে মানুষই মানুষকে ভালোবাসে না, আর ধর্মকে ভালোবাসবে কেমন করে। ধর্মের মূল উদ্দেশ্য কী, বলুন তো? নিশ্চয়ই মানুষের কল্যাণ সাধন করা। তাহলে সেই মানুষকেই অবমূল্যায়ন করা কেন, মানুষের অন্তরে ঘৃণার বীজ বপন করে কখনো কী ধর্ম পালন হয়। আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি দরকার মানবিক মানুষ হওয়া। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর এখন মানবতাই বেশি প্রয়োজন। মানবতা লঙ্ঘিত হলে ধর্মের কোনো মূল্যই থাকবে না জগতে। আসুন, মানুষ হই! ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :