আফরোজা সরকার :[২] রংপুর অঞ্চলে আলু চাষে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষক। খাওয়া নেওয়া ছেড়ে দিয়ে দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে হিমাগার থেকে বীজ উত্তোলন, জমি তৈরি, আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ করে জমিতে আলু রোপনে কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
[৩] এবারে রংপুর জেলায় এবার আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯১ হাজার একশত ১০ হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগ এই জমি থেকে আলু উৎপাদনের আশা করছেন ১৪ লাখ মেট্রিক টন।
[৪] সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার আট উপজেলায় আলু চাষীদের বীজ রোপনে জমি তৈরী ব্যাস্ততা। রংপুর সদরসহ, তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, পীরগাছা, পীরগঞ্জ, মিঠপিুকুর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে কৃষকরা এখন জমি চাষ, সার প্রয়োগ, আগাছা পরিষ্কার করছেন। আবার অনেকেই প্রস্তুতকৃত জমিতে আলুর বীজ রোপণে ব্যাস্ত সময় পার করছেন।
[৫] বদরগঞ্জ উপজেলার কৃষক ফজলু হক বলেন, বিঘা প্রতি ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। আমাদের কিষান খরচ দিয়ে বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা করে লাভ হবে। তবে আলুতে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা লাভ করেন। আমরা যে সময় আলু তুলি সেই সময় আমরা আলুগুলো সংরক্ষণ করতে পারি না। তাই খুব অল্প মূল্যে আলু বিক্রি করে দিতে হয়।
[৬] তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে উদ্যোগ বা ব্যাক্তিগত কোন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আল্প খরচে আলু সংরক্ষনগার (হিমাগার) গুলেতে রংরক্ষন করা হলে কৃষক উপকৃত হবে।
[৭] তারাগঞ্জ উপজেলার কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আমি ১০ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। বিঘা প্রতি আমার খরচ হয়েছে, ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টাকা। তবে গত বারের চেয়ে এবারে আলু বীজের দাম অনেক বেশি। অন্যদিকে ভাল বীজ না পাওয়ায় একই জমিতে দুই চার বার বীজ বুনতে হয়েছে। তিনি দাবী করে বলেন, এতে বীঘা প্রতি খরচ বেড়েছে দুই হাজার টাকা। এবারে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছি।
[৮] রংপুর সদর থানার মমিনপুর এলাকার কৃষক আইয়ুব আলী বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে আলু রোপণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আশা করি, আবহাওয়া ভালো থাকলে দুই-একদিনের মধ্যে জমিতে আলু রোপণ করতে পারবো। এলাকায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাই জমি প্রস্তুত হওয়ার পরও আলু রোপণে দেরি হচ্ছে। এবার অতিরিক্ত খরচ হওয়ার আশঙ্কা করছি। তবে বাজারে দাম ও ফলন ভালো হলে খরচের টাকা পুশিয়ে নেওয়া যাবে।
[৯] কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানি জমি থেকে নামতে দেরি হওয়ায় আলু রোপণ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। তবে চলতি মৌসুমে ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে চাষিদের মাঝে। এদিকে, উঁচু শ্রেণির জমিতে আগাম জাতের আলু উত্তোলন শুরু হয়েছে।
[১০] রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সরোয়ারুল আলম জানান, রংপুর জেলায় এবার আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯১ হাজার একশত ১০ হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগ এই জমি থেকে আলু উৎপাদনের আশা করছেন ১৪ লাখ মেট্রিক টন। আর এ পর্যন্ত আগাম জাতের আলু উত্তোলন করা হয়েছে এক হেক্টর জমি থেকে। আলু চাষে এখন পর্যন্ত অর্জনকৃত জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৯৭০ হেক্টর।
[১১] কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মাদ আলী বলেন, এখান কার মাটি আলু চাষে খাঁটি। পলি ও বেলে দোঁয়াশ মাটিতে আলুর বাম্পার ফলন হয়। এবার আবহাওয়া অনকূলে থাকায় আগাম জাতের আলুসহ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এ পর্যন্ত দেড় হেক্টর জমি থেকে আগাম জাতের আলু উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :