মঞ্জুরুল হক : আর লিখতে ইচ্ছে করে না। অনেক লিখেছি। কয়েকটা বিষয়ে গত ২৫ বছর ধরে লিখেছি। ফলাফল মস্ত বড় শূন্য। এই যে শীতকাল এলেই বস্তিতে আগুন জ্বলে। কেন জ্বলে? এর সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা আছে। বিস্তারে যাবো না আগেই বলেছি। ব্যাখ্যাটা সিম্পল। এই সময়ে বস্তির টিনের, তেরপলের, পলিথিনের ছাপড়া ঘরগুলো শুকনো খটখটে থাকে। আগুল লাগলেই দপ করে জ্বলে ওঠে। পুড়ে ভস্ম হতে খুব বেশি সময় নেয় না। সে জন্য বস্তির জমি দখল, দখলিকৃত জমির মালিকানা বদল, সরকারের জমি উদ্ধার, টাইকুনদের চেইনশপের জন্য জায়গা দখল সবই এই শীতকালে।
ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবরা যখন বুলডোজার নিয়ে জমি উদ্ধারে হামলে পড়েন, সেটাও এই শীতকালে। এর পেছনে একধরনের মর্ষকামিতা আছে। বিজাতীয় স্যাডিজম মেশানো সুখ। এই বস্তিপোড়া, বস্তিভাঙা ছিন্নমূল মানুষগুলো রিয়েল গিনিপিগ। শাটলকর্ক। পোড়া ছাই হাতে রাস্তায় নামার পর এনজিওগুলো মলম নিয়ে হাজির। মানবাধিকার চেয়ারম্যান বোকাবাক্সে হাজির। সরকারের কর্মকর্তার স্পিচ- ‘তদন্ত করে দেখা হবে, সরকার পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করবে ফান্ড এলেই।’ অতঃপর নটে গাছটি মুড়োবে। এসব চিরায়ত সূত্রমতে এবারও পর পর দুটো বস্তিতে আগুন লাগলো।
মোহাম্মাদপুরের বিহারি পল্লী আর মহাখালির সাততলা বস্তি। মহাখালির বস্তি সরকারি জায়গায়। সুতরাং এটা যে ‘অগ্নিকাণ্ড’ নয় তা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। পেড়াপুড়ি নিয়ে শেষ কথা : চাইলে সব বস্তি পুড়িয়ে দিতেই পারেন। আমরা জানি, এই শহরের অন্তত হাজার কয়েক কোটি পতির টাকার উৎস এইসব আগুনে পোড়া মাটি।
আমরা আরও জানি, সেইসব কোটিপতিদের অনেকেই সংসদ সদস্য, নেতা, পাতি নেতা, অফিসার, গাউস-কুতুব। তবে মুলকিল কী জানেন? প্রায় ২ কোটির এই শহরে কমপক্ষে ৩০-৪০ লাখ দিনমজুর এবং নানাবিধ মজুর আপনাদের লাগবে। লাগবেই। তারা চলে গেলে আপনারা জাস্ট মারা পড়বেন। তাই মানবেতর বাঁচিয়ে রাখছেন। আর তাকেই বলছেন উন্নয়ন। ছো : আফসোস : তাদের কোনো সংগঠন নেই। কোনো সংগঠন এদের জন্য প্রকৃত দায়িত্ব নেয় না। আর কুড়িটা বছর।
আপনার মতামত লিখুন :