পূর্বপশ্চিম: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। ঝিনাইদহ-যশোর অংশের ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ব্যয় হবে ৪ হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ ১৭ হাজার টাকা। সে হিসেবে সড়কটি নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি প্রস্তাবিত ব্যয় ৮৬ কোটি টাকারও বেশি। সড়কটি নির্মাণে সময় ধরা হয়েছে পাঁচ বছর।
জানা গেছে, উইকেয়ার ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। যশোর সদর উপজেলা এবং ঝিনাইদহ সদর ও কালিগঞ্জ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। ২০২০ সালের অক্টোবরে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে প্রকল্পটি।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে ১ হাজার ৪৮২ কোটি ৪ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। বাকি ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা পাওয়া যাবে বিশ্বব্যাংকের বৈদেশিক ঋণ হিসেবে।
প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে প্রতিবেশী ভারত ও চীনের তুলনায়ও বেশি অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের এক বিশ্লেষণের তথ্য অনুযায়ী, চার লেন সড়ক নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ বাছাইকৃত কয়েকটি সড়কে ব্যয় করেছে ২৫ লাখ থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ ডলার পর্যন্ত। অন্যদিকে ভারতে প্রতি কিলোমিটার চার লেন সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ১১-১৩ লাখ ডলার। চীনে এর পরিমাণ ১৩-১৬ লাখ ডলার।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬ কিলোমিটার ‘সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। বিদ্যমান দুই লেনের সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে প্রতি কিলোমিটারে খরচ প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৪ কোটি টাকা। হাটিকুমরুল-রংপুর চার লেন সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকার বেশি। জয়দেবপুর টু এলেঙ্গা চার লেন সড়ক উন্নয়ন ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটারে ৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেন প্রকল্পের ক্ষেত্রে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ছিল ২১ কোটি টাকার আশপাশে। সে হিসেবে কিলোমিটারপ্রতি সড়ক নির্মাণে প্রায় সব চার লেন প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয়কে ছাড়িয়ে গেল উইকেয়ার ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পটি।
এ প্রকল্পের প্রধান ব্যয়গুলোর মধ্যে ১৫১ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮১৮ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। এছাড়া পেভমেন্ট নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৩৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।
সড়কের বহুমুখী ব্যবহার ও আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করেই প্রকল্পটিকে সাজানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোরের ঝিনাইদহ-যশোর অংশের সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশের সার্ভিস লেনসহ মোট ছয় লেনে উন্নীত করা হবে, যা করিডোরটির সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনের জন্য পৃথক লেন এবং সড়কের ব্যস্ততম স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মহাসড়কটিকে ‘স্মার্ট হাইওয়ে’ হিসেবে নির্মাণের লক্ষ্যে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল (ওএসি) এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস) স্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা বিভাগের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস পরিকল্পনা কমিশনের মতামত ও সুপারিশ সম্পর্কে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে জানিয়েছিলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোরের ২৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ঝিনাইদহ-যশোর অংশের সাড়ে ৪৮ কিলোমিটার অংশকে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করা হলে পরে ধাপে ধাপে অবশিষ্ট অংশগুলোর উন্নয়ন করা সহজতর হবে। এছাড়া দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে বেনাপোল, ভোমরা স্থলবন্দর ও মোংলা সমুদ্রবন্দর এবং এশিয়ান হাইওয়ে, সার্ক হাইওয়ে করিডোর, বিমসটেক রোড করিডোর ও সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) রোড করিডোরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ প্রকল্প এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করাও সম্ভব হবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সড়কের যে উন্নয়ন লক্ষ্য ধরা হয়েছে, সেটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সওজ অধিদপ্তরের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে।