শিক্ষা ডেস্ক: মহামারীর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সরাসরি ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ। শুক্রবার সকাল ১১টায় রাজধানীর ক্যাম্পাসের বাহিরে আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে থেকে জানা গেছে।
তবে, ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিছুই অবগত নন উপাচার্য এবং দুই উপ-উপাচার্য৷ বিধি বহির্ভূতভাবেই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য প্রশাসনের শীর্ষ ওই ব্যক্তিদের কারও কারও৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “বিষয়টা আমাদের জানানো হয়নি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে জানার পর আমি ডিন সাহেবের সাথে কথা বলেছি। পরীক্ষাটা ক্যাম্পাসে হবে না শুনেছি। তবে এটা কোন ধরনের পরীক্ষা, কাদের পরীক্ষা, কোন পদ্ধতিতে হচ্ছে এই পরীক্ষা, বিষয়গুলো আমি জানতে চেয়েছি। উনি বলেছেন, কাল আমাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন। প্রকৃত তথ্য না জেনে তো কথা বলা কঠিন।”
ভর্তিপরীক্ষার বিষয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০ নভেম্বর শুক্রবার বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের এমবিএ (ইভনিং) প্রোগ্রামের (৪৫তম ব্যাচ) ভর্তি পরীক্ষা ঢাকার আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা গ্রহণের সময় সকাল ১১টা-দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক আব্দুল মঈনকে একাধিকবার ফোন করে এবং এসএমএস পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালের অ্যাকাডেমিক যেকোনও বিষয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়৷ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের মতামত ছাডা়ই সান্ধ্যকোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে৷ যা সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত৷ করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম চলমান থাকলেও পরীক্ষা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে৷ সান্ধ্যকোর্সের পরীক্ষার বিষয়ে আমি অবগত নয়৷ মাননীয় উপাচার্যই ভালো বলতে পারবেন।’
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সান্ধ্যকোর্সের ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন সান্ধ্যকোর্সের বিষয়ে কঠোর হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় বিশ্লেষণ ও বিতর্ক। এরপরই কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সান্ধ্যকোর্স বন্ধের কথা জানিয়েছিলেন। এরপর সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও রাষ্ট্রপতির বক্তব্যকে সমর্থন দেন। তিনি সান্ধ্যকোর্সের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসিকে কঠোর হতে বলেন। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় মার্চ থেকেই সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে৷ এখন করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা শুরু হচ্ছে৷ এরই মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধির কোনও তোয়াক্কা না করেই ভর্তি পরীক্ষার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ৷
সান্ধ্য কোর্স পর্যালোচনা ও যৌক্তিকতা যাচাই কমিটির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩৫টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সান্ধ্যকোর্স আছে।
মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট, ট্রেনিং কোর্সসহ অনিয়মিত এসব কোর্সের সংখ্যা ৬৯। এর মধ্যে ৫১টি মাস্টার্স, চারটি ডিপ্লোমা, সাতটি সার্টিফিকেট আর সাতটি ট্রেনিং কোর্স।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কোর্সের বাইরে ১০৫টি ব্যাচে এসব কোর্সে বছরে সাত হাজার ৩০২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তাদের ক্লাস নেন ৭২৫ জন শিক্ষক।
সবচেয়ে বেশি সান্ধ্য কোর্স আছে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে। এই অনুষদের নয়টি বিভাগের প্রতিটিতেই সান্ধ্য কোর্স আছে। এসব কোর্সে প্রতিবছর ৪৫টি ব্যাচে দুই হাজার ৯৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। ক্লাস নেন ২৩০ জন শিক্ষক।বাংলা ট্রিবিউন, বিডিনিউজ, বাংলাদেশ প্রতিদিন