শিরোনাম
◈ ভুটানের রাজার সঙ্গে থিম্পু পৌঁছেছেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ চট্টগ্রামের জুতার কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত : ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ০২:৪৯ রাত
আপডেট : ১৮ নভেম্বর, ২০২০, ০২:৪৯ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী: আইজিপির ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ উদ্বোধন, একটি জরুরি ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ

দীপক চৌধুরী: সাইবার জগতে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের উদ্যোগে ‘ পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ সেবা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার অধীনে এই সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সাইবার অপরাধের শিকার নারীরা যে কতটা অসহায় তা বলে বোঝানো যায় না। এখন সারাবিশ্ব এ বিষয়টির ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কিন্তু এই অসাধারণ ও সময়োপযোগী কাজটি করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। তবে এটি যারা হ্যান্ডল ও তদারকি করবেন তাঁদের দায়িত্বও কম নয়। সঠিকভাবে এর কাজ করা জরুরি। বিষয়টি স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল। দেশ, জনগণ ও সমাজ সম্পর্কে আইজিপির চিন্তা-ভাবনা ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রয়েছে। সুতরাং বিষয়টি শতভাগ যাতে সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করতে হবে কর্মরতদের। তাঁদের তত্ত্বাবধান ও দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বা কর্মভার ঠিকভাবে সম্পাদন করাই হবে জরুরি।

দারুণ মেধাবী, স্পষ্টবাদী ও সুযোগ্য সর্বোচ্চ পুলিশ কর্মকর্তা ড. বেনজীর আহমেদ বর্তমান সমাজ বাস্তবতার চিত্র অকপটে স্বীকার করেছেন। এক আদর্শবাদী ও দূরদর্শীসম্পন্ন আইজিপি হিসেবে তিনি সুপরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত। পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী নিয়ে তাঁর চমকপ্রদ নেতৃত্ব জনগণকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।

বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে সাইবার অপরাধ ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্তরায়ের সৃষ্টি করছে। এই অপরাধ রোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারসহ সাইবার নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থ হয় তবে তা ভয়াবহ সঙ্কটের সৃষ্টি করতে পারে। এই অপরাধটি শুধু নারীর ক্ষতি বা নারীর সঙ্গে প্রতারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অর্থ, ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য চুরির উদ্দেশ্যে অপরাধীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচওর নাম ও পরিচয় ব্যবহার করছে।
সোমবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম একটি বৈশ্বিক সমস্যা।’ জাতিসংঘের একটি পরিসংখ্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সাইবার অপরাধের শিকার ভিকটিমের চার ভাগের তিন ভাগ হল নারী। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও সাইবার স্পেস নিরাপদ রাখতে পুলিশের এই উদ্যোগ। নতুন এই ইউনিট এর বিশেষত্ব হলো এখানে যারা সেবা দেবেন, তদন্ত করবেন, তারা সবাই পুলিশের নারী সদস্য। যার ফলে ভিকটিমরা নির্দ্বিধায় তাদের সমস্যাগুলো বলতে পারবেন।’ বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, “বাংলাদেশে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, পর্নোগ্রাফি কন্ট্রোল অ্যাক্ট, আইসিটি অ্যাক্ট, টেলি-কম্যুনিকেশন অ্যাক্ট---এসব আইনে এ পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৯৯টি মামলা হয়েছে, এর অধিকাংশ ঘটনার ভিকটিম বা শিকার নারী।” বেনজীর আহমেদ বলেছেন, “সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা তাদের ওপর ঘটে যাওয়া অপরাধ সম্পর্কে অভিযোগ করেন না। তারা যাতে নির্দ্বিধায় অভিযোগ করতে পারেন, সেজন্য একটা অল-উইমেন ইউনিট করেছি আমরা।" কিভাবে কাজ করবে এ ইউনিট এরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইজিপি।

“পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন”--এটি মূলত একটি তথ্য জানানোর সেবা, যেখানে অভিযোগ গ্রহণ, তদন্ত এবং পরামর্শ প্রদানসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকবেন পুলিশের নারী সদস্যরা। এক্ষেত্রে অভিযোগকারী নারী নিজের পরিচয় গোপন রেখেও নিজের ওপর সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে তথ্য দিতে এবং প্রতিকার চাইতে পারবেন। ভুক্তভোগী নারীকে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়তা করবে পুলিশ। সেই সঙ্গে তাকে সাইবার সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হবে।” আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হলে, সেক্ষেত্রেও অভিযোগকারীর পরিচয় প্রকাশ না করার ক্ষেত্রে পুলিশ সর্বোচ্চ গোপনীয়তার আশ্বাস দিয়েছে। কী কী অপরাধ সম্পর্কে অভিযোগ জানানো যাবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ বলছে, বাংলাদেশে নারীরা যত ধরণের সাইবার অপরাধের শিকার হন তার মধ্যে বেশিরভাগের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর। অভিযোগের বড় অংশটি হয় অনলাইনে নানা ধরণের প্রতারণা অথবা ব্ল্যাকমেইলিং এর। নতুন সেবার অধীনে সাইবার জগতে যত ধরণের অপরাধের মুখে পড়বেন নারীরা তার সবকটি সম্পর্কেই অভিযোগ জানাতে পারবেন।

নতুন এই কার্যক্রমের সেবা দেওয়ার জন্য একটি হটলাইন নাম্বার (০১৩২০-০০০৮৮৮) চালু করা হয়েছে। এছাড়াও ই- মেইল([email protected]) ও ফেসবুক পেইজে ((URL: https://m.facebook.com/PCSW.PHQ/)

মেসেজ করে ভুক্তভোগী নারীরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। এছাড়া কোনো ভিকটিম চাইলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।

সাইবার জগতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে এক নির্দেশনায় আইজিপি বলে দিয়েছেন, এর ঝুঁকি সমন্ধে ব্যবহারকারীদের সচেতন হতে হবে। তিনি সবাইকে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের নির্দেশনা দেন।

যে সব অপরাধের ক্ষেত্রে এখানে অভিযোগ করা যাবে তা হল, ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া, সোশ্যাল মিডিয়ার আইডি হ্যাক করা বা হ্যাক করার মাধ্যমে প্রতারণা, ছবি বা ভিডিও এডিট করে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি, কারও ছবি ব্যবহার করে আপত্তিকর কন্টেট দিয়ে ফেইক আইডি তৈরি করা, ফোন নম্বর বিভিন্ন খারাপ পোস্টে বা সাইটে ছড়িয়ে দেয়া, সাইবার বুলিং ও হ্যারেসমেন্ট, অনলাইনে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও অথবা তথ্য ফাঁস করার হুমকি দিয়ে অর্থ দাবি করা এবং যৌন হয়রানিমূলক মেসেজ বা মেইল অথবা লিংক পাঠানো।

অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিপি (এঅ্যান্ডও) ড. মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, এসবির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মীর শহীদুল ইসলামসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রযুক্তিবিদদের মতে, সাইবার স্পেস বা সাইবার জগতে অনেক ধরনের অপরাধ হয়। এর মধ্যে হ্যাকিং শব্দটার সঙ্গে সবাই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পর্নোগ্রাফি সাইবার জগতের একটি বড় ধরনের অপরাধ। এ ছাড়া তথ্য চুরি, অনুমতি ছাড়া ছবি কিংবা তথ্য ব্যবহার করে হেনস্তা করার চেষ্টা, ই-মেইল বম্বিং অর্থাৎ অপ্রয়োজনীয় ই-মেইল পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেয়াও এক ধরনের অপরাধ। আরেক ধরনের অপরাধ আছে- সাইবার বুলিং। ব্ল্যাকমেইল তো নিত্যদিনের ঘটনা।

বিষয়গুলো এরকম ঃ
ফেসবুক আইডি হ্যাক
ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি
ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে অর্থ আদায়
ব্লাকমেইলিং
ছবি বা ভিডিও এডিট করে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি
সুপার ইম্পোজ ছবি
পর্নোগ্রাফি
ছবি দিয়ে আপত্তিকর কনটেন্ট বা ফেইক আইডি তৈরি
সাইবার বুলিং
ফোন নম্বর ছড়িয়ে দেওয়া
হয়রানিমূলক এসএমএস, মেইল বা লিংক পাঠানো

নতুন এই ইউনিটে অভিযোগ জানাতে হলে একজন ভুক্তভোগী দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ইমেইল করে বা হটলাইন নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

আমরা জানি, সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার আতঙ্কের কারণে বিশ্বের অনেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই ইন্টারনেট ব্যবহার করা কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া অনেক ব্যবহারকারীই এখন আর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে চান না। অনলাইনে পণ্য ক্রয় করাও কমিয়ে দিয়েছেন অনেকে। এমনকি অনলাইন ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রেও অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেক ব্যবহারকারী।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়