শিরোনাম
◈ প্রাথমিক স্কুলে অ্যাসেম্বলি বন্ধ রাখার নির্দেশ ◈ গাজায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল ◈ পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার ২৭ বস্তা টাকা, গণনা চলছে ◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা

প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ০৬:৩৪ সকাল
আপডেট : ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ০৬:৩৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জমজ পাঁচ বোন পায়নি মায়ের ভালোবাসা, বাবা করত যৌন নির্যাতন

ডেস্ক রিপোর্ট: জমজ শিশু সবাই পছন্দ করে। তবে সবাই এতোটা ভাগ্যবান হন না। জমজ শিশুদের নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। অনেকেই জানতে চায় এর রহস্য। তবে জমজ সন্তান নিয়ে রহস্যের বা গবেষণার কিছু নেই। গর্ভে একের অধিক সন্তান ধারণ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রে বংশগত কারণে এটি হতে পারে যেমন-মা বা নানি, যদি পূর্বে জমজ সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন। এটি প্রকৃতি প্রদত্ত বলা যায়। ডেইলি বাংলাদেশ

এখনকার সমাজে এক সঙ্গে দুই তিন বা তারও বেশি শিশু জন্ম নেয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে আগেকার সময়ে এটিকে স্বাভাবিক মনে করা হত না। পাপের ফল বা দুর্ভাগ্য মনে করা হত। এজন্য একসঙ্গে একাধিক শিশু জন্ম নিলে তাদের জঙ্গলে রেখে আসা বা মাটিতে পুতে ফেলা হত। আবার অনেক সময় এদের অলৌকিক ভেবে পূজা করত অনেকেই।

[caption id="attachment_1244968" align="aligncenter" width="969"]পাঁচ কন্যার জন্ম হয় পাঁচ কন্যার জন্ম হয়[/caption]

সময়টা ছিল ১৯৩৪ সালের ২৮ মে। এলিজায়ার ডিওন নামের একজন নারী একসঙ্গে পাঁচটি কন্যা শিশু জন্ম দেন। এলিজায়ার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কারণ তার এর আগে আরো পাঁচটি মেয়ে আছে। এবার এদের কীভাবে সে বড় করবে। কোথা থেকেই বা সে আর তার স্বামী এতোগুলো বাচ্চার ভরনপোষণের অর্থ যোগাবে।

এলিজায়া ওই অবস্থাতেই চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। আর বলতে থাকে এই শিশুগুলো তার না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে অন্য বাচ্চা দিয়ে দিয়েছে। হাসাপাতালের চিকিৎসকরাও অবাক হন। কারণ এমন ঘটনা অনেকেই তার পেশার জীবদ্দশায় দেখেননি। একসঙ্গে একাধিক শিশু জন্ম নেয়া প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া।

[caption id="attachment_1244967" align="alignnone" width="844"] দুর্ভাগ্য ভেবে পাঁচ কন্যাকে মেনে নেয়নি বাবা-মা[/caption]

একসঙ্গে পাঁচ শিশু জন্ম নেয় ৫৫ মিলিয়নে একটি। এদেরকে বলা হয় কুইন্টুপলেট। এই শিশুগুলো জন্ম নেয় কানাডার উত্তর অন্টারিওর কার্বিল গ্রামে। ডিওন দম্পতি পাঁচ কন্যার নাম রাখেন অ্যানেট, এমিলি, ইভোন, ক্যাসিল এবং মেরি। পাঁচ শিশুর ওজন ছিল মোট ছয় কেজির মতো। সবচেয়ে কম ওজনের শিশুটি ছিল মাত্র এক পাউন্ডের কাছাকাছি।

শিশুগুলো গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিল। তাদের বাঁচানো ডাক্তারদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। স্থানীয় ডাক্তার অ্যালান রায় ড্যাফো শিশুদের জন্মের সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি এই অবহেলিত পাঁচ শিশুর অকাল মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তাই নিজেই এদের সেবা করতে থাকেন। নিজের কাছে যা সরঞ্জাম ছিল তাই দিয়েই শিশুগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাতে থাকেন।

[caption id="attachment_1244966" align="alignnone" width="834"]ডাক্তারের কোলে পাঁচ বোন ডাক্তারের কোলে পাঁচ বোন[/caption]

ডাক্তার অ্যালান শিশুদের একটি ফার্মহাউজে নিয়ে আসেন। সেখানে ঘরের ভেতর চুলা জ্বালিয়ে গরম পানির বোতল রেখে ঘরকে গরম রাখতেন। কাপড়ের মধ্যে মুড়িয়ে শিশুদের উষ্ণ রাখতে চেষ্টা করতেন। ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে শিশুগুলো। জলপাইয়ের তেল দিয়ে ম্যাসেজ করার জন্য একজন নার্স নিয়োগ দেন। যেহেতু শিশুরা মায়ের দুধ পাচ্ছিল না। তাই তাদের গরুর দুধ, জীবাণুমুক্ত পানি এবং কর্ন সিরাপ খাওয়ানো হয়।

উত্তর আমেরিকা জুড়ে অলৌকিকভাবে পাঁচ শিশুর একসঙ্গে জন্মের খবর ছড়িয়ে পড়ে। এটিই প্রথম একসঙ্গে দুইয়ের পর পাঁচ শিশু জন্মের ঘটনা। সাংবাদিক এবং ফটোগ্রাফার থেকে শুরু করে শহরে হাজারো দর্শকের ভিড় জমতে থাকে। তারা ফার্মহাউসের বাইরে জড়ো হয়ে জানালা দিয়ে উঁকি মারত শিশুদের। অনেকেই শিশুদের ফেলে যাওয়ার জন্য এদের বাবা মা কে উপহাস করেছিলেন। আবার অনেকেই শিশুদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল।

[caption id="attachment_1244965" align="aligncenter" width="816"] নিবিড় পরিচর্যায় তারা বড় হতে থাকে[/caption]

এক দম্পতি এই কুইন্টুপলেট শিশুদের হাজার হাজার ডলার আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন। শিশুদের জন্য সুন্দর নরম বিছানাও উপহার দেন তারা। হাসপাতাল থেকে সারাক্ষণ শিশুদের পর্যবেক্ষণের জন্য দুইজন নার্সকে পাঠানো হয়। একবার শিকাগো ওয়ার্ল্ড ফেয়ারের এক প্রদর্শনীতে বাচ্চাদের প্রদর্শন করার জন্য বাবার অলিভা ডিওনের কাছে প্রস্তাব আসে। অলিভা সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। কারণ সেসময় তার অর্থের প্রয়োজন ছিল।

অর্থাভাবে হতাশায় দিন কাটত অলিভা ও এলিজায়ার দম্পতির। তারপরও অলিভা পরামর্শের জন্য গ্রামের পুরোহিতের কাছে যান। পুরোহিত অলিভাকে প্রস্তাব গ্রহণ করতে নিষেধ করেন। তিনি অলিভাকে তার নিজের ব্যবসায়ের ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেয়ার প্রস্তাব করেন। অলিভা তখন এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। তবে শিকাগো ফেয়ারের প্রবর্তকরা অলিভার নিষেধ মানতে চাননি। নানা হুমকি দিতে থাকে তারা।

[caption id="attachment_1244964" align="alignnone" width="985"] উত্তর আমেরিকা জুড়ে তাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে[/caption]

আইনজীবীর পরামর্শে অলিভা এবং এলজিয়ার ডিওন রেড ক্রসকে তাদের শিশুদের রক্ষা করতে অনুরোধ জানান। রেড ক্রস শিশুদের দুই বছর দেখভালের চুক্তি করে। বিনিময়ে তারা ফার্মহাউস থেকে পুরো রাস্তা জুড়ে একটি নার্সারি তৈরি করেছিল। এর থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই ভরণ-পোষণ হবে শিশুদের। তারা শিশুদের ঠিক রাজকন্যার মতো আদর যত্নে বড় করতে থাকে। শিশুদের দেখভালের জন্য সার্বক্ষণিক নার্স ছিল। এসময় এলজিয়ার এবং অলিভাকে শিশুদের সঙ্গে তেমন দেখা করতে দেয়া হত না।

কয়েক মাস পরে, সরকার একটি বিল পাস করে। যেখানে এই শিশুদের ১৮ বছর বয়সী না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত দায়িত্ব তারা নেয়। পাঁচ বোন ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। তাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছিল। ফার্মহাউজে পাঁচ বোনের খেলার জন্য তৈরি করা হয়েছিল বিশাল এক মাঠ। তিনজন নার্স, একজন গৃহকর্মী এবং দুইজন পার্টটাইম দাসীর ব্যবস্থা করা হয়। তিন পুলিশ সদস্য সর্বদা তাদের পাহারা দিতেন।

[caption id="attachment_1244963" align="alignnone" width="978"]পাঁচ বোনকে দেখতে হাজারো মানুষের আগমন ঘটত পাঁচ বোনকে দেখতে হাজারো মানুষের আগমন ঘটত[/caption]

পুরো এলাকাটি সাত ফুট লম্বা কাঁটাতারের বেড়া দ্বারা ঘিরে দেয়া হয়। চারদিকে ঝুলিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন সতর্ক সাইনবোর্ড। ‘দয়া করে সহযোগিতা করুন; নীরবতা বজায় রাখার অনুরোধ করা হলো।’ ‘বাচ্চাদের কোনো ছবি তোলার অনুমতি নেই’ এমনই শিশুদের সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেয় স্থানীয় সরকার।

সেখানে মেয়েদের কঠোর নিয়মের মধ্যে দিয়ে বড় করা হয়। ভোর সাড়ে ছয়টায় ঘুম থেকে উঠেই কমলার রস খেতে হত। এতে তাদের লিভার ভালো থাকবে। এরপর প্রার্থনা শেষে সকালের নাস্তা। সকালের খাবার খাওয়ার পর তারা ৩০ মিনিট মাঠে খেলে। ১৫ মিনিট বিরতি নিয়ে নয়টায় তাদের প্রতিদিনের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। এভাবে দুপুরে খাওয়া বিকেলে খেলা, সন্ধ্যায় প্রার্থনা, পড়াশোনা শেখা এবং রাত নয়টায় ঘুমোতে যাওয়া। এভাবে তারা একটি শৃঙ্খলার মধ্যে বড় হয়ে উঠছিল।

[caption id="attachment_1244969" align="aligncenter" width="592"]তারা হলিউড সিনেমায় কাজও করেছে তারা হলিউড সিনেমায় কাজও করেছে[/caption]

এই মেয়েগুলো বড় হয়ে বেশ সুন্দরী হয়ে উঠে। এজন্য বিভিন্ন কেচাপ, ক্যান্ডি, সাবান, আইসক্রিমসহ বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনের জন্য ডাকা হত। সেসময় তাদের একসঙ্গে তোলা ছবি খুব জনপ্রিয় ছিল। বিভিন্ন স্টুডিওতে বেশ দাম দিয়েই বিক্রি হত এসব ছবি। তাদের ছবিযুক্ত ফটোগ্রাফ, কাপ, প্লেট, ফলক, ক্যান্ডি বার, বই, পোস্টকার্ড এবং পুতুল বিক্রি হয়েছিল।

অলিভা নিজেই নার্সারির বিপরীতে একটি স্যুভেনিরের দোকান চালাত। এই মেয়েরা তিনটি হলিউড মুভিতেও অভিনয় করে। নয় বছর তারা কুইন্টল্যান্ড এ কাটায়। সেসময় সেখানকার পর্যটন আয়ের ৫০ মিলিয়নের বেশি অর্থ ছিল শুধুমাত্র তাদের দেখতে আসা পর্যটকদের। যা নায়াগ্রা জলপ্রপাতকে ছাড়িয়ে যায়।

[caption id="attachment_1244971" align="alignnone" width="987"]পাঁচ বোন পাঁচ বোন[/caption]

১৯৪৩ সালে, নয় বছর দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের পর অলিভা এবং এলজিয়ার ডিওন তাদের বাচ্চাদের ফিরে পেয়েছিল। তবে পুনর্মিলন খুব একটা খুশি ছিল না। সম্পদ পরিবারকে পরিবর্তিত করেছিল। এলিজায়ার তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করত।

তাদের অর্থ উপর্জনের জন্যই শুধু নিজের কাছে রেখেছিলেন। নিয়মিত তাদের অপমান আর শারীরিক নির্যতন করা হত। এমনকি তাদের বাবা তাদের যৌন নির্যাতন শুরু করেছিলেন। ১৮ বছর বয়সে তারা উচ্চশিক্ষার জন্য কুইবেক চলে যায়। আর সেখানেই স্থায়ী হয়।

[caption id="attachment_1244972" align="alignnone" width="974"] বর্তমানে এই দুই বোন বেঁচে আছে[/caption]

পাঁচ বোনের এক বোন এমিলি ২০ বছর বয়সে মারা যায়। আরেকজন মেরি তার মস্তিস্কের রক্ত জমাট বাঁধিয়া মারা যান ১৯৭০ সালে। বাকি তিনজন ১৯৯৯ সালে সরকারের কাছ থেকে চার মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার পেয়েছিল। ২০০১ সালে ইয়োভন মারা যায়।

২০১২ সালে, ক্যাসিলের ছেলে তার সব টাকা নিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে ভর্তি থাকেন কিছুদিন। এখন তিনি আর অ্যানেট একটি সরকারি নার্সিংহোমে থাকেন। বাবা মায়ের অবহেলাতেই হয়তো এতো ভালো পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছিলেন এই পাঁচ বোন। তারাই প্রথম কুইন্টুপলেট। যারা জন্মের পর এতো বছর বেঁচে ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়