শিরোনাম
◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ০৭:৪৪ সকাল
আপডেট : ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ০৭:৪৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

এম আবুল হাসনাৎ মিল্টন: বাংলাদেশ কার কাছ থেকে কোভিড ভ্যাকসিন নেবে?

এম আবুল হাসনাৎ মিল্টন: চলমান গবেষণার ফেজ-থ্রির অন্তর্বর্তীকালীন বিশ্লেষণে (ইনটেরিম এনালিসিস) সম্প্রতি দেখা গেছে, ফাইজার কোম্পানির কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা প্রায় নব্বই শতাংশ। চলমান বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে খবরটি সবার জন্য নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কোভিডআক্রান্ত পুরো পৃথিবীই এই সংবাদে নড়ে-চড়ে উঠেছে। এতোদিন আমরা অক্সফোর্ডের কোভিড ভ্যাক্সিনের কথা বেশি শুনছিলাম, মাঝখানে দুয়েকজন অংশগ্রহণকারীর উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কারণে কিছুদিনের জন্য ট্রায়ালটি বন্ধ ছিল। এই দুটো ভ্যাক্সিনের বাইরেও চীনা কোম্পানির ভ্যাক্সিনসহ আরো কয়েকটি ভ্যাক্সিনের ফেজ-থ্রি পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তিন কোটি অক্সফোর্ডের কোভিড ভ্যাক্সিন কিনবে বলে চুক্তি করেছে। ভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে এই প্রক্রিয়ার সাথে বেক্সিমকোও জড়িত আছে। বেক্সিমকো আগে থেকেই উৎপাদনকারী কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে ভ্যাক্সিনটি বাংলাদেশে বিপণনের ব্যবস্থা করেছে। এখানে বেক্সিমকো না হয়ে বাংলাদেশের অন্য যেকোনো কোম্পানিই হতে পারতো।

তিন কোটি ভ্যাক্সিন বেক্সিমকো সরাসরি সরকারকে দিচ্ছে। কিনে নেবার পর সরকার সব ভ্যাক্সিনই বিনা মূল্যে জনগণকে সরবরাহ করবে। এখন ফাইজারের কোভিড ভ্যাক্সিন সফল হলে সেটাও বাংলাদেশে আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ফাইজারের বাংলাদেশি এজেন্টই উদ্যোগী হবেন। পত্রিকায় দেখলাম, ফাইজারের এদেশীয় এজেন্টের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সরকারের কাছে ভ্যাক্সিন সরবরাহের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকার নিশ্চয়ই বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবে। প্রতিজনকে এই ভ্যাক্সিনের দুটো করে ডোজ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ষোল কোটির বেশি মানুষের দেশে কমপক্ষে বিশ কোটি কোভিড ভ্যাক্সিন শুরুতেই প্রয়োজন। সুতরাং, অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিনের পাশাপাশি কার্যকর প্রমাণিত হলে সরকারকে অন্য কোম্পানীর কোভিড ভ্যাক্সিনও কিনতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার দুই কোটি ষাট লাখ মানুষের জন্য ফাইজারসহ চারটা কোম্পানির সাথে সরকার দশ কোটির বেশি ভ্যাক্সিন ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সবাই এখন অপেক্ষা করছে ভ্যাক্সিনের সাফল্যের উপর। কার্যকর প্রমাণিত হলেই দেশে দেশে ভ্যাক্সিন প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়ে যাবে। ভ্যাক্সিন দেবার পরে যে প্রশ্নটা মুখ্য হয়ে দেখা দেবে, সেটা হলো, এর ফলে সৃষ্ট এন্টিবডি মানবদেহে কতোদিন থাকবে?

উল্লেখ্য, শরীরে সৃষ্ট এই এন্টিবডিই নোভেল করোনা ভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আপাতত ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত শরীরে এন্টিবডি এক বছর বা তার বেশি থাকবে। সে ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিনটি প্রতিবছর দুই ডোজ করে নিতে হবে। তবে এন্টিবডি শরীরে কতোদিন থাকবে, সেই প্রশ্নের উত্তর সময়ই সবচেয়ে সঠিকভাবে দিতে পারবে। ভ্যাক্সিন গ্রহিতার একাংশের শরীরের এন্টিবডি নিয়মিত পরীক্ষা করে আমরা দেখতে পারবো, শরীরে তৈরি হওয়া এন্টিবডির স্থায়িত্ব কতোদিনের? ভ্যাক্সিনের দাম দেশ ভেদে একেকরকম হবে বলে ধারণা করছি। ধনী দেশগুলোতে স্বভাবতই দাম বেশি হবে। ভ্যাক্সিন কেনার জন্য নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে বন্ধু রাষ্ট্র, দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহ কী ধরনের অর্থনৈতিক সহায়তা দেবে সেটা নিয়েও নানান পর্যায়ে আলোচনা চলছে।

ভ্যাক্সিনের দাম নিয়েও অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। তবে একটা জিনিস মানতেই হবে। শুরু থেকেই ভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বানিজ্যের চেয়ে মানবিকতাই প্রাধান্য দিচ্ছে। সুতরাং, কোনোপক্ষই মনে হয় না ভ্যাক্সিনের গলাকাটা দাম রাখবে বা বিশাল বানিজ্য করবে। ভ্যাক্সিনের সংরক্ষণ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাত্রার তাপমাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। ফাইজারের কোভিড ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রে মাইনাস সত্তর ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভ্যাক্সিনটি সংরক্ষণ করতে হবে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্যই এই তাপমাত্রায় কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন সংরক্ষণ করা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা হলো, ফাইজারের ভ্যাক্সিন বহন করবার জন্য এক ধরণের বিশেষ ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে, যার সাথে কিছু ড্রাই আইস মিশিয়ে চৌদ্দদিনের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় এই ভ্যাক্সিন বহন করা যাবে। এছাড়াও, কীভাবে মাইনাস সত্তর ডিগ্রি তাপমাত্রা বজায় রাখা যায় বা কমানো যায়, সে ব্যাপারেও বিস্তারিত চিন্তাভাবনা-গবেষণা চলছে।

লোকমুখে শুনেছি, বাংলাদেশের দুটো ওষুধ কোম্পানি নাকি দেশেই কোভিড ভ্যাক্সিন বানানো যায় কি না, সে ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। এছাড়া গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসও কোভিড ভ্যাক্সিন বানানোর চেষ্টা করছে। কোভিড ভ্যাক্সিন দেশে আনার ব্যাপারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাবে বলে আমার ধারণা। আমি নিজেও এ ধরনের কিছু কাজের সাথে বর্তমানে সম্পৃক্ত। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে স্বনামধন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থাও করা যাবে। বাংলাদেশে কোভিড ভ্যাক্সিন আনা এবং আনার পরে কিভাবে সংরক্ষণ ও পরিবহন করা হবে, প্রাথমিক পর্যায়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাদের ভ্যাক্সিন দেওয়া হবে, এসব নিয়ে বিস্তারিত কৌশল নির্ধারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছে। এসময়ে আমাদের সবার দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত। প্যানডেমিক একা আসে না, সাথে ইনফোডেমিকও আসে। ফেসবুকের কল্যানে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে ভুল তথ্য এবং অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। এতে করোনা পরিস্থিতি উন্নয়নে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। আজ দুপুরে আমেরিকা থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন সহপাঠী, বন্ধু ডা. নাভিদ সামাদ ফোন করেছিল। অনেকদিন পরে দীর্ঘক্ষণ কথা হলো। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা বললো সে। ‘বাংলাদেশ এখন অনেক ভাল করছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকায় এসেছিলাম। খুব কাছে থেকে এদেশের সবকিছু দেখলাম তো, সেই তুলনায় বলা যায়, বাংলাদেশ আসলেই অনেক বদলে গেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যাদু জানেন। শি ইজ সো স্মার্ট’। নাভিদের শেষ কথার সাথে মিল রেখে আমিও বলতে চাই, এই করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মানুষ যাতে দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক ভ্যাক্সিন পায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি, তিনি নিশ্চয়ই সফল হবেন। বিশ্বে তিনি নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু ব্যর্থতা ও অব্যবস্থাপনা বাদ দিলে এককথায় বলা যায়, শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে-তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ অনেক ভালোভাবেই করোনা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। ফেসবুক থেকে

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়