ডেস্ক রিপোর্ট: স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূল আওয়ামী লীগের মাঠ সরগরম। অন্য দলের অবস্থান দৃশ্যমান না থাকায় নিজেরাই নিজের প্রতিপক্ষ। যে যার অবস্থান পোক্ত করতে উত্তাপ ছড়ানোর পাশাপাশি কোনো কোনো জেলা-উপজেলায় নেতাকর্মীরা জড়াচ্ছেন সহিংসতায়ও। প্রায় এক বছরে এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক এবং প্রাণ ঝরেছে অন্তত ১৩ নেতাকর্মীর। আর এসব কারণে বেশ বিব্রত কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রায় ৩০টি সাংগঠনিক জেলায় দলের কমিটি ইস্যুতে এমপি ও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের অভিযোগ তীব্রতর হচ্ছে। যার প্রভাব পড়বে স্থানীয় নির্বাচনেও।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা অবশ্য বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহীদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। ইতোমধ্যে তৃণমূল আওয়ামী লীগে ওই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আবার তৃণমূলের অভিযোগও আসছে কেন্দ্রে। সমাধান কিংবা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দপ্তর থেকে সেগুলো প্রতিটি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শিগগিরই সারাদেশের জেলা-উপজেলার নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তারা। তিনটি সাংগঠনিক জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি জেলাতেই দলীয় কোন্দল রয়েছে। এর জের ধরে সারাদেশে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও কেন্দ্র থেকে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী মোকাবিলা করাই কঠিন হয়ে যাবে দলের পক্ষে।’
আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা দৃশ্যমান হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা না নেওয়ার মানে হচ্ছে দলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল জিইয়ে রাখা। আর সেই কোন্দল জিইয়ে রাখলে কাদের লাভ হয়, দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে কারা এই কাজটি করে যাচ্ছেন- সে বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা অবগত। সুতরাং দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যাতে কেউ সুবিধা নিতে না পারে, সে বিষয়ে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আরও কঠোর হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতিমন্ডলী ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবদুর রহমান বলেন, ‘আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে নিয়মানুযায়ী তিনি দলীয় বিধিভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন। আর যখনই এ ধরনের অভিযোগ আসবে তখনই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘দলীয় প্রার্থী হতে হলে তাকে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কের বাইরে থাকতে হবে। যারা ভোটারের মন জয় করে নির্বাচিত হওয়ার মতো যোগ্য, কেবল তাদেরকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। আর তৃণমূল নেতাদের উচিত হবে যথাসম্ভব মানুষের পাশে থেকে তাদের জন্যই রাজনীতি করা।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের অধীনে আগামী সব নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও ত্যাগী প্রার্থীরাই মনোনয়ন পাবেন। নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী হলে তাদের বুঝিয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এ ক্ষেত্রে যদি কেউ দলীয় প্রতীকের বিপক্ষে দাঁড়ায়, তা হলে তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সৎ, ত্যাগী, নিষ্ঠাবান, সাহসী ও দুঃসময়ের নেতা- যারা জনগণের সঙ্গে মিশে কাজ করতে পারেন; এমন ব্যক্তিকেই এবারের পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কোনো অসাধু, বিতর্কিত, চাঁদাবাজ, জমি দখলকারী, মাদক বিক্রেতা, অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী তথা যাদের প্রতি মানুষের আস্থা নেই- তারা কোনোভাবেই দলীয় টিকিট পাবেন না।’ আবার যারা অন্যায়কারীর পৃষ্ঠপোষক, তারাও মনোনয়ন পাবে না বলেও দৃঢ়ভাবে অভিমত ব্যক্ত করেন বাহাউদ্দিন নাছিম।
একটু ভিন্ন স্বরে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ। রাগ-অভিমান থাকলেও সময়মতো শেখ হাসিনার প্রতিনিধিকে বিজয়ী করতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন
আপনার মতামত লিখুন :