ডেস্ক রিপোর্ট: শস্য ভান্ডারখ্যাত দেশের বৃহত্তর চলনবিল। আর বিলজুড়ে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে এ বছর শুরু হয়েছে বিনাচাষে রসুনের আবাদ। রসুনের বীজ রোপণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নারী-পুরুষ, কিশোর ও কিশোরীরা। সাধারণত বিলের পানি কার্তিকের শেষে নদীতে নেমে যায়। অগ্রহায়নের শুরুতে বিলের পলিমাটি শুকিয়ে যায়। তখন কৃষক কোনো রকম হালচাষ ছাড়াই রসুন রোপণ করেন।
এ বছর সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় প্রায় ৪৪০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হওয়ার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্য বিনাচাষে ২০ হেক্টর জমিতে রসুন লাগানো হয়েছে। তাছাড়া বীজ রোপণের মাধ্যমে ৪০০ হেক্টর লাগানো হচ্ছে।
অপরদিকে, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর।
জানা যায়, এ বছর চলনবিলের সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমিগুলোতে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে কয়েক সপ্তাহ পূর্বে। এখন আমন কাটা শেষে বিনাচাষে রসুন রোপণের ধুম পড়েছে চলনবিল এলাকার উপজেলাগুলোতে। এসব উপজেলার সর্বোচ্চ অর্থকারী ফসল বিনাচাষে রসুনের বাম্পার ফলনের কারণে প্রতি মৌসুমে এলাকার কৃষকরা রসুন রোপণ করেন।
তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা যায়, চলনবিলের পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকের মাঝে চলছে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা। চলনবিলে এখন চলছে রসুন রোপণের ভরা মৌসুম। বিলের যেদিকে চোখ যাবে সেদিকেই দেখা যাবে নারী-পুরুষ ও পাশাপাশি ছোট ছেলেরা-মেয়েরা মিলে জমিতে লাইন ধরে বসে রসুনের কোয়া রোপণ করছেন।
তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউপির মহিষলুটি গ্রামের কৃষক আব্বাস আলী জানান, প্রতি বছরের মতো এবারো ৩ বিঘা জমিতে রসুন লাগিয়েছেন। এরমধ্য বিনাচাষে ৩ বিঘা জমিতে রসুন লাগানো হয়েছে।
উপজেলার নাদোসৈয়দপু গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম জানান, কার্তিক মাসের শেষে বিল থেকে পানি নেমে গেলে পলি জমা কাদা-মাটিতে বিনা হালে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণ করেছি।
বিনা হালে যেভাবে উৎপাদন করা হয়: কার্তিক মাসের শেষে বিল থেকে পানি নেমে গেলে পলি জমা কাদা মাটিতে বিনা হালে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণ করা হয়। রোপণ শেষে খড় বিছিয়ে দেয়া হয়। এর আগে জমিতে প্রতি বিঘা ২৫/৩০ কেজি টিএসপি, ২৫ কেজি পটাশ, ২০ কেজি জিপসাম ও ২ কেজি বোরন সার প্রয়োগ করা হয়। রোপণের ২৫/৩০ দিন পর বিঘা প্রতি ১৫/২০ কেজি ইউরিয়া সার দিয়ে পানি সেচ দেয়া হয়। ৫০ দিন পর আবার দ্বিতীয় দফা ১২/১৫ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। রোপণের ৯৫/১০০ দিন পর ফাল্গুন মাসের ১৫ তারিখ থেকে চৈত্র মাস পুরো চলে রসুন তোলার কাজ। রসুন মাঠ থেকে তুলে এনে উঠোনে বা খোলায় চড়া রোদে শুকোনো হয়। তারপর কৃষক রসুন গাছসহ ঝুটি বা বিয়েনী বেঁধে ঘরে সংরক্ষণ করেন।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ লুৎফুন্নাহার লুনা জানান, চলনবিল এলাকায় বর্ষার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই কাদা মাটিতে কৃষক বিনাচাষে রসুন আবাদ করে থাকেন। এটি বেশ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর রসুন আবাদে আগ্রহী কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে। ডেইলি বাংলাদেশ
আপনার মতামত লিখুন :