শিরোনাম
◈ মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারি ছিলেন জিয়াউর রহমান: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি ◈ টাইমের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা ◈ দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে  ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী ◈ দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েল ফসফসরাস বোমা হামলা ◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ০৬:২৭ সকাল
আপডেট : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ০৬:২৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]ওয়ার্ডবয়দের মারধর দিয়েই মাইন্ড এইড মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা শুরু রোগীর!

ডেস্ক রিপোর্ট : [২]দরজা বন্ধ করা কক্ষের ভেতর অন্ধকার। আলো-বাতাস যাতায়াতের নেই কোনও উপায়। ভেতরে বসে চিৎকার করলেও বাইরে থেকে কেউ শুনতে পাবে না। এমনই একটি বিশেষ কক্ষে চিকিৎসার নামে শুরুতেই সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপনকে আটকে রাখতে চেয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পর্যবেক্ষণের নামে এমন বিশেষ কক্ষে মাদকাসক্ত ও মানসিক স্বাস্থ্যের রোগীদের সপ্তাহখানেক আটকে রাখা হয়। রোগীরা দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে যাওয়ার পর এখান থেকে বের করা হয়। এরপর ওয়ার্ডে বা অন্য কক্ষে দেওয়া হয়। এই কক্ষে কেউ থাকতে না চাইলে তাদের ওয়ার্ডবয়রা মারধর করে, অথবা বিশেষ এক ধরনের জ্যাকেট পরিয়ে ফেলে রাখে, যেটি পরালে রোগীরা হাত-পা ছোটাছুটি করতে পারে না, সোজা হয়ে পড়ে থাকে। ছোট্ট এই কক্ষে একাধিক রোগীকে ফেলে রাখা হয়। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সরেজমিন গিয়ে এবং মাইন্ড এইড মাদক নিরাময় কেন্দ্রের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলা ট্রিবিউন

[৩]নিরাময় কেন্দ্রের স্টাফ রুমা বলেন, ‘ভবনের নিচতলায় মেয়েদের এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় পুরুষদের রাখা হয়। নিচতলায় মেয়েদের জন্য একটি এবং দ্বিতীয় তলায় পুরুষের জন্য একটি বিষেশ কক্ষ রয়েছে। এখানে রোগী এনে রাখা হয়। সপ্তাহখানেক রাখার পর বের করা হয়। সিসি ক্যামেরায় বাইরে থেকে তাদের দেখা হয়।’ কেউ এখানে না থাকতে চাইলে তাদের জোর করেই এই কক্ষে ঢুকানো হয় বলেও জানান তিনি।

[৪]ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মাদক নিরাময় কেন্দ্রের স্টাফ (রান্নার কাজ করেন) শারমীন আক্তার। দু’মাস ধরে তিনি এখানে চাকরি করেন। ভোলার এই তরুণী শারমীন আক্তার বলেন, ‘আমরা সাধারণ রোগী আসলে সামনে যাই না। তবে সোমবার সকালে এএসপিকে নিয়ে আসার পর কেন যেন আমি সামনে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি তিনি ভালো মানুষ। কথা বলছেন। কিছুক্ষণ পর আরিফ মাহমুদ জয় স্যার তাকে উপরে নিয়ে যান। উপরে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই আমরা সিসি ক্যামেরার মনিটরে দেখতে পাই তাকে ঝাপটে ধরে মারধর করছেন স্টাফরা। তিনি মারা গেছেন, এমন খবর হাসপাতালে ছড়িয়ে পড়ে। আনিসুল করিমের ভাই ও বোন এ সময় দ্রুত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে বলেন, তবে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে কোনও অক্সিজেনের ব্যবস্থা ছিল না। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্স এনে তারা এখান থেকে চলে যায়।’

[৫]আনিসুল করিম শিপনকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নেওয়ার পর তাকে দ্রুত উপরে নেওয়া হয়। তিনি যে কক্ষে মারা গেছেন, মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) সেই কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, এটি দোতলার বারান্দাঘেঁষা ছোট্ট একটি কক্ষ। ১০ ফুট বাই ৬ ফুটের কক্ষটিতে ফ্লোরে দুটি ফোমের ম্যাট্রেস ফেলা ছিল। লাইট বন্ধ করলেই অন্ধকার। একটি দরজা, কোনও জানালা বা ভেন্টিলেটর নেই। দরজা বন্ধ করে রাখলে বাইরের আলো-বাতাস সেখানে প্রবেশের কোনও উপায় নেই। বিশেষ কায়দায় তৈরি এই কক্ষের দরজা বন্ধ করলে ভেতরে সর্বোচ্চ শব্দ করলেও বাইরে থেকে কিছু শোনা যায় না। কক্ষে একটি এসি ও সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এই কক্ষটিতেই মারা যান আনিসুল করিম।

এই কক্ষে কি হয় তা জানতে কক্ষের ভেতরে স্টাফ শারমীন জান্নাতকে নিয়ে প্রবেশ করেন প্রতিবেদক। সেখানে বসেই শারমীন বলেন, ‘যারা প্রথম এখানে ভর্তি হয়, তাদের এই কক্ষে এনে আটকে রাখা হয়। প্রস্রাব, পায়খানা সব এখানেই করেন। তা পরবর্তীতে আয়ারা পরিষ্কার করে।’

আটকে রাখা হয় কেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘যারা প্রথম আসে, তারা অনেক চিৎকার ও হই-হট্টোগল করে, তাই তাদের এখানে আটকে রাখা হয়। এক সপ্তাহ পর এখান থেকে বের করা হয়।’ ছোট্ট এই কক্ষটিতে একসঙ্গে চার-পাঁচ জনকেও আটকে রাখা হয় বলে জানান শারমীন।

হাসপাতালের স্টাফ শারমীন বলেন, ‘আমাদের সাধারণত উপরে আসতে দেওয়া হয় না, ওয়ার্ডবয়রা দেখাশোনা করে পুরুষদের। দ্বিতীয় ও তিনতলায় পুরুষ রোগীদের রাখা হয়। ভবনের নিচতলায় নারী রোগীদের রাখা হয়। তবে কখনও রোগীদের খাবার দিতে আসলে তারা মারধরের কথা বলতো।’

রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালের কোনও রকম অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন অফিসার ডা. মইনুল আহসান। তবে কোনও ব্যবস্থা না নিয়েই তিনি চলে যান। কারণ, এর অনুমোদন দেওয়া হয়নি, তাই কোনও ব্যবস্থাও তারা নিতে পারবেন না।

ডা. মইনুল আহসান বলেন, ‘২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাইন্ড এইড হাসপাতাল চালানোর জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। আমরা তখন পরীক্ষা করে দেখেছি হাসপাতালটি চালানোর মতো সুবিধা ও জনবল কিছুই তাদের ছিল না। সেজন্য মার্চ মাসে তাদের আবেদন আমরা পেন্ডিং (স্থগিত) করি। স্থগিত আদেশের পর তারা যদি কোনও চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে থাকে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। তারা এটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র ও পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে চালাচ্ছিল। এসব প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে কিছু ক্লিনিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ও হাসপাতালের ব্যবস্থা রাখতে হয়। যেন জরুরি মুহূর্তে চিকিৎসা দেওয়া যায়। কিন্তু তাদের সে ব্যবস্থা ছিল না।’

এএসপি আনিসুল করিমকে হত্যার পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজে পানি দিয়ে ফ্লোর ধুয়ে ফেলতে দেখা যায়। গ্রেফতার ওয়ার্ডবয়রা জানিয়েছে, আনিসুল করিম বমি করেছিল, পরে পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলা হয়। এদিকে সুরতহালে আনিসুলের নাকে, ঘাড়ে ক্ষত পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়