শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ০৭:১৫ সকাল
আপডেট : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ০৭:১৫ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নিয়ে উত্তীর্ণ করা যাবে না’

আরটিভি অনলাইন: অনলাইনে ক্লাস নিয়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ কিংবা অটোপাসের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। মেডিকেল শিক্ষার্থীকে অটোপাস দিলে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরীক্ষা ছাড়া মেডিকেল শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ সম্ভব নয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে নির্ধারিত ৬০ মাসের এবং বিডিএস কোর্সে ৪৮ মাসের বেশি বেতন না নেওয়া এবং পরীক্ষা ও ক্লাস-সংক্রান্ত সব আদেশের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির দাবি বিবেচনায় নিতে পারে স্বাস্থ্য বিভাগ।

সম্প্রতি, করোনাকালীন সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল এবং কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থীদের অটোপাসের সিদ্ধান্ত বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হচ্ছে। এর সঙ্গে মেডিকেল শিক্ষার্থীরা সেশনজট নিরসনে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার দাবি তুলেছেন।
জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩৬টি সরকারি ও ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে। গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থার চেয়ে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় ভিন্নতা রয়েছে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, করোনাকালীন সময়ে সরকার সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় অটোপাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যদিও গতকাল সোমবার (৯ নভেম্বর) মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে যে, ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে পরীক্ষা নেবে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ও স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা উল্লেখ করেনি। অসম্পূর্ণ বিজ্ঞপ্তি শিক্ষার্থীদের মনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। মেডিকেল কলেজের সকল শিক্ষার্থীর আশা, শিক্ষার্থীদের চারটি দাবি সরকার মেনে নেবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার কথা বলেছে কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে কোনো কিছু পরিষ্কার করে বলেনি। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। এছাড়া কলেজের হলে একটি রুমে তিন থেকে চারজন শিক্ষার্থী বসবাস করে। কমন টয়লেট ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী ব্যবহার করে। একজন শিক্ষার্থী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আলী বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে। করোনাকালীন সময়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের কোনো সুবিধা দেয়া হয়নি। ক্লাস ও হোস্টেল বন্ধ থাকলেও অতিরিক্ত বেতন পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষ চাপ প্রয়োগ করছে।

অনলাইনে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সারোয়ার আলী আরটিভি নিউজকে বলেছেন, মেডিকেল শিক্ষা অন্য শিক্ষার চেয়ে আলাদা। মেডিকেল শিক্ষা হচ্ছে ব্যবহারিক শিক্ষা। একজন মেডিকেল ছাত্রকে রোগীর কাছে গিয়ে শিক্ষা নিতে হয়। সেক্ষেত্রে পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সাধারণ শিক্ষার মতো মেডিকেল শিক্ষায় অটোপাস থাকা উচিত নয়। তাদের পরীক্ষা দিতেই হবে। পরীক্ষা থাকা মেডিকেল শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ সুযোগ নেই- সরকারের এমন উদ্যোগের সঙ্গে একমত পোষণ করেন এই বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলেন, অনলাইনে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্লাস করা খুব কঠিন। মেডিকেল পরীক্ষার মান কিভাবে আরও উন্নীত করা যায় সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। কারণ বর্তমানে অনেক চিকিৎসকদের সনদ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।

ডা. সারোয়ার আলী বলেন, একজন প্রকৌশলী ব্রিজ নির্মাণ করতে ভুল করলে ব্রিজি ভেঙে পড়বে। কিন্তু একজন চিকিৎসক যদি হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণ না করে তাহলে ভুল চিকিৎসা দিয়ে রোগী মেরে ফেলবে।

এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, করোনাকালীন সময়ে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অটোপাস কিংবা অনলাইনে ক্লাস নিয়ে উত্তীর্ণ করেছে বলে জানা নেই। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী আরটিভি নিউজকে বলেন, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় অনলাইনে ক্লাস নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা সম্ভব। কিন্তু মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় অনলাইনে ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ সম্ভব নয়। কারণ মেডিকেল শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে রোগীর কাছে যেতে হবে, হাতে কলমে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। পরীক্ষা দিয়েই মেডিকেল শিক্ষার্থীকে এমবিবিএস পাস করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীরা যখন রাজপথে আন্দোলনে নেমেছে তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আমাদের দেশে আন্দোলন ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। সমস্যা সমাধানে আগেভাগেই সংস্থাগুলোর কোনো পরিকল্পনা নেয় না।
প্রসঙ্গত, গতকাল সোমবার (৯ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। আগামী ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ হতে নিয়মিত/অনিয়মিত ব্যাচের প্রফেশনাল পরীক্ষাসমূহ স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের গাইড লাইন ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। চিকিৎসা শিক্ষা ব্যবস্থা ভিন্নধর্মী হওয়ায় বিদ্যমান বিধিতে পরীক্ষা ব্যতিত অন্য কোনোভাবে একজন শিক্ষার্থীকে পরবর্তী ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার ও সুযোগ দেওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর।

চিকিৎসা শিক্ষার এমবিবিএস/বিডিএস শিক্ষার্থীদের বছরে মে ও নভেম্বর/ফেব্রুয়ারি ও আগস্ট এ দুটি টার্ম এ প্রফেশনাল পরীক্ষা হয়ে থাকে। একজন ছাত্রকে চিকিৎসক হওয়ার পূর্বে ৪টি প্রফেশনাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। কিন্তু করোনার কারণে পরীক্ষা আটকে গেছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের কোনো সুযোগ থাকবে কিনা?

অন্যদিকে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল- ১. করোনা মহামারিতে পরীক্ষা নয়, অনতিবিলম্বে সেশনজট দূর করতে পরবর্তী ধাপের অনলাইন ক্লাস শুরু করতে হবে। ২. বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে নির্ধারিত ৬০ মাস, এবং বিডিএস কোর্সে ৪৮ মাসের (পুরাতনদের ৬০ মাস) বেশি বেতন ফি আদায় করা যাবে না। ৩. পরীক্ষা ও ক্লাস-সংক্রান্ত সব আদেশের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়