শিরোনাম
◈ সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ ◈ থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ ◈ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় ◈ শিক্ষক নিয়োগ: ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ ◈ বিদ্যুৎ-গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না ◈ রোববার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান  ◈ নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি ◈ উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যর্থ হলে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ক্ষুণ্ন হতে পারে: সিইসি ◈ ভারতের রপ্তানি করা খাদ্যদ্রব্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পেয়েছে ইইউ ◈ ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা বিলে জো বাইডেনের স্বাক্ষর

প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ০৬:৪৬ সকাল
আপডেট : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ০৬:৪৬ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]কোভিড সিনট্রম এবং একটা অন্তহীন অপেক্ষা…

বাণী ইয়াসমিন হাসি : একটা পারিবারিক প্রোগ্রামে গত বুধবার চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। ঢাকার তুলনায় ওখানে বেশ ঠান্ডা। রাতে এসি-ফ্যান ছাড়াই ঘুমাতাম। একদিন মাঝরাত পর্যন্ত পতেঙ্গায় ছিলাম। বেশ ঠান্ডা বাতাস। আরেকদিন দুপুরে এবং সন্ধ্যায় সিএনজিতে বের হয়েছিলাম। আমার প্রচন্ড ডাস্ট এলার্জি। চট্টগ্রামের বাতাসেও বেশ ধুলাবালি। ঢাকায় ফিরেই প্রচন্ড সর্দি। নাক দিয়ে পানি পড়া সাথে প্রচন্ড কাশি। গতকাল কয়েক ঘণ্টার জন্য অফিস করেছি। কিন্তু আজ সারাদিনই বিছানায় শোয়া। খাবার টেবিলেও অন্যদের সাথে বসিনি। একরকমের আইসোলেশনেই আছি। প্রচন্ড মাথাব্যথার কারণে চোখেও ব্যথা। মনিটরের দিকে তাকাতে কষ্ট হচ্ছে তাই ফোন, ফেসবুক, হুয়াটসআপ সবকিছু থেকে দূরে আছি আপাতত।

সন্ধ্যায় বাসায় বড় ভাই এসেছেন। ডাক্তারের সাথে কথা বলে কাশির সিরাপ পাল্টে দিলেন। সাথে দুইটা ওষুধ যোগ করে দিলেন। খুব ক্লান্ত লাগছিলো; শুয়ে ছিলাম। শারমিন আপুর ফোন, কই রে তুই? অফিসে আছিস? আমি একটু আসবো। আপুকে বললাম; আমার শরীর ভালো নেই। অফিসে যাইনি। সারাদিন বাসায়। আপু বললেন, আমি তাহলে তোর বাসায়ই আসি। আমি বললাম, আমার সর্দি কাশি। সকালে বাসায় স্যাম্পল নিতে আসবে ল্যাবএইড থেকে। আপনার কি বাসায় আসা ঠিক হবে? আইসেন না আপু। টেস্ট টা করাই আগে, রিপোর্ট আসুক; তারপর দেখা হবে। কি খাবি তুই; থাক আমি আসতেছি। এসব ভয় পায় না আমি। আল্লাহ ভরসা কিছু হবে না তোর। মিনিট বিশেকের মধ্যে একব্যাগ খাবার নিয়ে আপু আমার বাসায় হাজির।

কোভিড সিনট্রম দেখা দিলে আপনজনদের চেহারাও পাল্টে যেতে দেখেছি। নিজে লিখেছি, বিবার্তায় অসংখ্য নিউজও করিয়েছি। অনাত্মীয় এইসব ভাই-বোনদের উষ্ণতা বেশ ছুঁয়ে যায়। শরীর খারাপ থাকলে সাধারণত আমার মনও ভীষণ খারাপ থাকে। নিজের জীবনের দিকে তাকিয়ে আজ মনে হচ্ছে; আমার অর্জনও নিছক কম নয়। এই যে এত মানুষের ভালোবাসা; একজীবনে এটা কম কিসে?
সন্ধ্যায় ভাইয়া ল্যাবএইডে কথা বলে সকালে বাসা থেকে স্যাম্পল কালেকশন কনফার্ম করলেন। তারপর থেকে অনেককেই জিজ্ঞেস করলাম, স্যাম্পল কালেকশনের সময় ব্যথা লাগে কিনা। সবাই আশ্বস্ত করলেন তারপরও গুগোল করে নিজের চোখে দেখলাম। কেমন জানি একটা অস্বস্তি কাজ করছে। আমি জানি আজ সারারাত আমি স্যাম্পল কালেকশন বিষয়ক স্বপ্ন দেখবো। যেমন পরীক্ষার আগের রাতে আমি স্বপ্ন দেখতাম, সিট খুঁজে পাচ্ছি না, পরীক্ষার হলে ঢুকেছি দেরি করে। এডমিট কার্ড এবং কলম নিতে ভুলে গেছি। ইত্যাদি ইত্যাদি। পরীক্ষার আগের রাতের মতনই টেনশন হচ্ছে আমার।

সর্দি কাশি মাথাব্যথা এবং দূর্বলতা ছাড়া অন্য কোন উপসর্গ নেই। প্রতিবছর আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়টাতে আমি সর্দি কাশিতে ভুগি। প্রতিবারের হিসেব আর এবারের হিসেব তো একদম আলাদা। কোথাও যেয়ে একটা কাশি দিলে নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হয়। আজ সব কাজ থেকে ছুটি নিয়েছি। আমার বিশ্বাস আমার সর্দি কাশিটা সিজন্যাল ফ্লু ই। তারপরও আশেপাশের সবার নিরাপত্তার কথা ভেবে টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

গতবছর ডেঙ্গুর যখন খুব প্রকোপ। আমার সেসময়ে দিনের অনেকটা সময় কাটতো বিভিন্ন হাসপাতালের ডেঙ্গু সেলগুলোতে। সেখানে বসে থাকা অবস্থায় প্রতিদিনই মশার কামড় খেতাম। আমি মশারির মধ্যে ঘুমাতে পারি না। একারণে বাসা সর্বোচ্চ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখি যাতে ঘরে মশা জন্মাতে না পারে। কিন্তু আশপাশের কারণে মশা ঘরে আসেই এবং আমাকে কামড়ায়ও। হ্যাঁ জ্বর হয়েছিলো কিন্তু ডেঙ্গু টেস্টে রেজাল্ট নেগেটিভই এসেছিলো। আমি কোন শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে পারি না; অল্পতেই কাতর হয়ে পড়ি। কিন্তু প্রয়োজন হলে না খেয়ে , না ঘুমিয়েই টানা সার্ভিস দিতে পারি। আমার মনের জোর গড়পড়তা মানুষের চেয়ে বেশি।

অসুখ বিসুখে মানুষ যতটা কাবু হয় তারচেয়ে ঢের বেশি ভেঙে পড়ে মনের জোর হারালে। মানুষের ইচ্ছেশক্তির চেয়ে বড় কোন শক্তি পৃথিবীতে নেই। সৃষ্টিকর্তা যার জন্য যতটুকু নির্ধারণ করে রেখেছেন, তার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা আমাদের কারো নেই। ক্ষয় লয় জয় যেটাই সামনে আসুক না কেন সেটাকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি টা জরুরি।

কোভিড সিনট্রম: এবং একটা অন্তহীন অপেক্ষা। আজকের রাতটা খুব বাজে যাবে আমার। নিজের জন্য চিন্তা করি না; কিন্তু আশেপাশের প্রিয়জনেরা ভাবনার অনেকটা জুড়ে থাকে। পৃথিবীর অসুখ কবে সারবে জানি না। মাস্কে বন্দী জীবন কবে শেষ হবে সেই উত্তরও মিলছে না কোথাও। আমার মাঝে মাঝেই মনে হয় প্রকৃতি আমাদের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে। পৃথিবীটা একদিন ঘাস ফুল লতাপাতা আর বোবা প্রাণীদের ছিল; আমরা গায়ের জোরে সেটা দখল করে নিয়েছি। হয়তো ওরা ওদের দখল ফিরে পেতে চায়ছে।

লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়