শিরোনাম
◈ সাতক্ষীরায় এমপি দোলনের গাড়িতে হামলা ◈ চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি এখন মরুভূমির মতো, তাপমাত্রা ৪১ দশমিক  ৫ ডিগ্রি ◈ ফরিদপুরে পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে ২ ভাই নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১ ◈ মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ◈ ভারতে লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোট পড়েছে ৫৯.৭ শতাংশ  ◈ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী ◈ দাম বেড়েছে আলু, ডিম, আদা ও রসুনের, কমেছে মুরগির  ◈ প্রার্থী নির্যাতনের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে, হস্তক্ষেপ করবো না: পলক ◈ ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি কূপ খনন শেষ করতে চায় পেট্রোবাংলা ◈ বিনা কারণে কারাগার এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী

প্রকাশিত : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ০৫:৫০ সকাল
আপডেট : ১১ নভেম্বর, ২০২০, ০৫:৫০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

[১]পোশাক খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর পথে নতুন শঙ্কা

ডেস্ক রিপোট : [২]বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাপী মহামারীর ধাক্কায় মুখ থুবড়ে পড়া দেশের পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, বছরের শেষে বড়দিন ঘিরে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়লে বাংলাদেশের রপ্তানিতেও গতি আসবে বলে উদ্যোক্তারা আশা করছিলেন, কিন্তু সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রপ্তানিকারকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে।

[৩]গত অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির খবর এসেছিল পোশাক খাত থেকে; অক্টোবর মাসে এসে সেই ধারায় ছেদ পড়েছে।

[৪]কারখানা মালিকরা বলছেন, পণ্যমূল্য কমে যাচ্ছে, উৎপাদন খরচ যাচ্ছে বেড়ে। রপ্তানির পরিমাণও কমে যাচ্ছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের জন্য নতুন কার্যাদেশ এসেছে আগের বছরের তুলনায় কম।

ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতে পড়তে শুরু করেছে বলে মনে করছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা।

পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, “সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা উদ্বিগ্ন। বেশ সতর্কতার সাথে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।”

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশের মত।

অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের ঋণ সহায়তা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাহস করে কারখানা চালু করাসহ আরও কিছু কৌশল নিয়ে বাংলাদেশে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। এখন যেহেতু নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে, আগের পদক্ষেপগুলো মূল্যায়ন করে নতুন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া উচিত।

রপ্তানি পরিস্থিতি

গত বছরের শেষে চীন থেকে নতুন করোনাভাইরাস পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। সেই ধাক্কা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে স্পষ্ট হয় মূলত মার্চ মাসের শুরুতে। ২০১৯ সালের মার্চে যেখানে ২৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, চলতি বছরের মার্চে তা ২২৫ কোটি ৬২ লাখ ডলারে নেমে আসে। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো ছিল কার্যত বন্ধ। এমনকি পণ্য জাহাজিকরণও অনেকটা থমকে ছিল। এই পরিস্থিতিতে এপ্রিল মাসে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব হয়; যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম।

তবে ইউরোপের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি এবং দেশের পোশাক কারখানাগুলো খুলতে শুরু করার পর ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এ খাত। মে মাসে ১২৩ কোটি এবং জুন মাসে ২২৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানির মধ্য দিয়ে ধাক্কা অনেকেটা সামলে ওঠা সম্ভব হয়।

জুনে পোশাক রপ্তানিতে ৬ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও পরের তিন মাসের (জুলাই, অগাস্ট, সেপ্টেম্বর) পরিস্থিতি কারখানা মালিকদের মনে সাহস ফিরিয়ে আনে। কিন্তু অক্টোবরের ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি আবার নতুন করে শঙ্কা জাগাচ্ছে।

সরকারি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও পোশাক রপ্তানিকারক সমিতির তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে উভেন পোশাক রপ্তানি খুব ভালো করতে না পারলেও নিট পোশাকের রপ্তানি ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। সব মিলিয়ে জুলাই মাসে পোশাক রপ্তানিতে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, এরপর অগাস্ট মাসে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়।

কিন্তু অক্টোবর মাসে এসে আগের বছরের ওই মাসের চেয়ে রপ্তানি কমে গেছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর আগেই দেশের তৈরি পোশাকের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপের দেশগুলোতে লকডাউন শুরু হয়েছিল। ফলে মার্চের শুরু থেকেই একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করতে শুরু করেন পশ্চিমা ক্রেতারা।

এই পরিস্থিতিতে পোশাক খাতে অস্থিতরা দেখা দেয়। একদিকে চলতে থাকে ছাঁটাই, অন্যদিকে বকেয়া বেতনের দাবিতে রাস্তায় নামেন কর্মীরা।

লকডাউনের কারণে কিছুদিনের জন্য কারখানাগুলো বন্ধ থাকলেও লোকসান কমাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আবার কাজ শুরু করেন মালিকরা। বিদেশি ক্রেতাদের স্থগিত করা অনেক কাজও আবার ফিরতে শুরু করে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক মাঠ জরিপে দেখা যায়, এপ্রিল মাসে পোশাক খাতের পুরুষ কর্মীরা গড়ে মাত্র ৪৩ ঘণ্টা এবং নারী কর্মীরা ৪২ ঘণ্টা কাজ করেন। মে মাস থেকে কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং অগাস্ট সেপ্টেম্বরে তা আবার ২০১৯ সালের মত মাসে ২৪৬ ঘণ্টায় ফিরে আসে।
কর্মীদের বেতন পরিশোধের জন্য সরকারের দেওয়া স্বল্প সুদের ঋণও পোশাক কারখানা মালিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় রসদ যোগায়।

শ্রমিকদের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন পরিশোধ করতে ৪ শতাংশ সুদে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় পোশাক খাতে। মালিকদের আবেদনে পরে জুলাই মাসে দেওয়া হয় আরও প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, মহামারীর সঙ্কট মকাবেলায় সরকার যে প্রণোদনামূলক ঋণ দিয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকটাই নিয়েছেন পোশাক কারখানার মালিকরা।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকরাও নতুন করে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন। বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, “রপ্তানির আকার বিবেচনা করলে এই খাত গত ২/৩ মাস ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর পর্যায়ে রয়েছে। তবে এই সময়ে পণ্যমূল্য নিয়ে আমাদেরকে বেশ ছাড় দিয়ে এই পরিস্থিতি ধরে রাখতে হয়েছে।”

তিনি তথ্য দেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পোশাকের রপ্তানিমূল্য গত বছরের একেই সময়ের তুলনায় কমেছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ।

আর কেবল সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানিমূল্য কমেছে আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।

“বর্তমানে পণ্যমূল্যে কমে যাওয়াটাই রপ্তানিকারকদের বেশি বিপদে ফেলছে,” বলেন রুবানা।

তিনি বলেন, “এখন আবার পশ্চিমা দেশগুলোতে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ফলে রপ্তানির ভলিউম আবার কমে যেতে পারে। ক্রেতারা তাদের অর্ডার স্থগিত করে দিতে পারেন। এসব ঘটনা ঘটলে কারখানাগুলোতে আবারও কর্মহীনতা সৃষ্টি হবে।”

ঢাকা ইপিজেডের একজন কারখানা মালিক বলেছেন, জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে পূর্ণ সক্ষমতায় (৮০ শতাংশ) কাজ চালাতে পেরেছেন তারা। কিন্তু নভেম্বরে এসে কাজ কমে গেছে। প্রত্যেক শ্রমিকের দৈনিক গড় কাজের সময় ১০ ঘণ্টা থেকে কমে আট ঘণ্টায় নেমে এসেছে।

মহামারীর প্রথম ধাক্কায় অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়া আর্থিক সক্ষমতায় নতুন করে কোনো সঙ্কট এলে মোকাবেলা করা ‘কঠিন হবে’ বলেই মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা। বিডিনিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়