ডেস্ক রিপোর্ট : মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন দল অং সান সু চির দল এনএলডি সাধারণ নির্বাচনে নিজেদের জয় দাবি করেছে। এনএলডির দাবি, তারা এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ৩২২টি আসনেই জয় নিশ্চিত করেছে। তবে এখনো নির্বাচন কমিশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু ঘোষণা করা হয়নি।
মিয়ানমারে সামরিক শাসন শেষ হওয়ার পর এটিই দ্বিতীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচন। প্রথম দফায়ও জয় পেয়েছিল এনএলডি। দলটি নিজ দেশের মধ্যে জনপ্রিয় হলেও গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী নানা অভিযোগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলটির ইমেজ বেশ খারাপ।
গত রোববারের নির্বাচনে নিজেদের জয় দাবি করে দলটির মুখপাত্র মিও নুন্ট বলেন, অং সান সু চির নেতৃত্বে এনএলডি এরই মধ্যে ৩২২ আসনে জয় লাভ করেছে। এ জন্য আমরা দেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানাই।
মিয়ানমারে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে রবিবার। মিয়ানমারের দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের প্রতিনিধি পরিষদের ৪৪০ এবং উচ্চ কক্ষ জাতীয় পরিষদের ২২৪ আসনের মধ্যে ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত।
দলের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এই জয় অনেক উৎসাহ প্রদান করবে। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই নির্বাচন কমিশনও এনএলডির জয়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে। মিয়ানমারের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ৪২৫ ও উচ্চকক্ষে ১৬১ আসন রয়েছে। ৫০ বছরের বেশি সময়ের সেনাশাসনের কবল থেকে মুক্ত হয়ে ২০১৫ সালে দেশটিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির এনএলডি ভূমিধস জয় পায়। ওই বছর দলটি সংসদের মোট ৩৯০ আসনে বিজয়ী হয়। এবারের সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মিও নিন্ত। নির্বাচনের ফলের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি দেশটির সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি)।
এর আগে এই নির্বাচনের ফল মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির সেনাপ্রধান। এই নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে। মিয়ানমারে নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা তিন কোটি ৭০ লাখের বেশি। দেশটিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও মানুষ ভোট দিতে বের হয়েছিলেন।
বরাবরের মতোই সেনাবাহিনীর সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে হবে জয়ী দলকে। জয়ের খবরে অং সান সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির প্রধান কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক। তারা নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন।
উল্লেখ্য, দেশে অং সান সু চির জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও এক সময়ে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের আইকন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই নেত্রীর আন্তর্জাতিক মর্যাদায় নাটকীয় পতন ঘটে। রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় তিনি যে অবস্থান নিয়েছেন সে জন্য সারা বিশ্ব থেকে তার প্রতি নিন্দা ও ঘৃণা জানানো হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ মার্চ থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নতুন করে নৃশংসতা শুরু করে মিয়ানমারের সেননাবাহিনী। গণধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, নির্যাতনসহ এমন অপকর্ম নেই যা তারা করেনি।
এর ফলে বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ নিয়ে জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা হয়েছে। সেই মামলায় সেনাবাহিনীর হয়ে সাফাই গেয়েছেন অং সান সু চি। বিশ্ব অবাক হয়ে দেখেছে কিভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকারের একজন চ্যাম্পিয়ন তার নিজের মর্যাদাকে মাটিতে লুটিয়ে দিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষে, অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে পারেন।
সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) এই নির্বাচনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছে বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে। মিয়ানমারে অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী ও সেনাসমর্থিত সরকারের অবসান ঘটিয়ে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় এনএলডি। যদিও এখনো সে দেশের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব প্রবল। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর দেখভালও সেনাবাহিনী করে।
জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আহ্বান জানালেও সেখানকার ভোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেখানকার প্রায় তিন লাখের বেশি মুসলিম রোহিঙ্গা ভোট দেয়ার সুযোগ পাননি। বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকে নামে অধিকার গ্রুপ এবারের নির্বাচনকে জাতিবিদ্বেষী নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলছে, মিয়ানমারের নির্বাচন উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হয়নি। দেশটির বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০ লাখ মানুষ ভোটবঞ্চিত হয়েছেন। একসময় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে খ্যাতি অর্জন করা সু চি রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে কার্যত সেনাবাহিনীর অবস্থানেরই প্রতিধ্বনি করেছেন বারবার। রোহিঙ্গা জাতিসত্তা ও গণহত্যার প্রসঙ্গ অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
সূত্র- নয়াদিগন্ত ও দেশরূপান্তর