শিরোনাম
◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের ◈ বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়লো ◈ রেকর্ড বন্যায় প্লাবিত দুবাই, ওমানে ১৮ জনের প্রাণহানি

প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর, ২০২০, ০৭:১০ সকাল
আপডেট : ০৯ নভেম্বর, ২০২০, ০৭:১০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

হোয়াইট হাউস না ছাড়লে ‘গ্রেপ্তারকৃত অতিথি’ হিসেবে থাকতে হবে ট্রাম্পকে

ডেস্ক রিপোর্ট: নির্বাচনে পরাজিত বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রমেই একা হয়ে যাচ্ছেন। পরাজয়ের আভাস পেয়ে ট্রাম্পের উদ্ভট আচরণের কারণে দূরে সরে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা ও রিপাবলিকান নেতারাও। তবে পাশে কেউ না থাকলেও কিছুতেই থামছেন না ট্রাম্প। কোনোভাবেই হার মেনে নিতে নারাজ তিনি।

জো বাইডেনের বিজয়ের খবর প্রকাশের কয়েক মুহূর্ত পরই ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাইডেন মিথ্যা জয়ের ভাব ধরার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন। ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইনি যুদ্ধ সোমবার থেকে শুরু হবে। ট্রাম্প বলেন, ভোট গণনার ফলগুলো এখনো নির্বাচনী কর্মকর্তারা প্রত্যয়ন করেননি। যে ফল তা আসলে সংবাদমাধ্যমের পূর্বাভাস মাত্র।

এর আগে ট্রাম্প জো বাইডেনের উদ্দেশে টুইট করে বলেন, ভুল করেও প্রেসিডেন্ট পদের দাবি জানাবেন না। আমিও সেই দাবি জানাতে পারি। আইনি প্রক্রিয়া সবে শুরু হয়েছে! শেষ পর্যন্ত আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা মনে স্থান না দেওয়া প্রেসিডেন্টের এই ‘গোয়ার্তুমি’ ছাড়িয়ে তাকে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝাতে পারবে, ট্রাম্পের আশপাশের অনেকেই এখন এমন ‘একজনের’ খোঁজ করছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।

বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘ব্যাটলগ্রাউন্ডগুলোয় বাইডেনের কাছে পিছিয়ে পড়লেও ট্রাম্প এখনো পরাজয় মেনে নেওয়ার বক্তৃতা প্রস্তুত করেননি। শুধু তা-ই নয়, কয়েক দিন ধরে তিনি তার মিত্রদের সঙ্গে আলোচনাতেও নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা এবং দুই ছেলেসহ সবচেয়ে কাছের লোকদের পরামর্শে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে অবস্থান আরও দৃঢ় করেছেন।

ট্রাম্প জুনিয়র ও ওই উপদেষ্টারা আদালতে ভোটের ফল চ্যালেঞ্জ করতে আগ্রাসী চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং অন্য রিপাবলিকানকে ট্রাম্পের পক্ষ নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। সিএনএন জানিয়েছে, চিফ অব স্টাফ মার্ক মিডৌসসহ ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টারা প্রেসিডেন্টকে বাস্তব পরিস্থিতি না বুঝিয়ে উল্টো তার হাতের মুঠো থেকে নির্বাচন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগকে আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রিপাবলিকান প্রার্থীর মন জুগিয়ে চলছেন।

শুক্রবার সকালে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ট্রাম্প টেলিভিশন দেখতে দেখতে তার পক্ষে খুব বেশি মানুষকে না দেখে আরও মুষড়ে পড়েন বলে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি। সেদিন বিকালে দেওয়া লিখিত বিবৃতিতে ট্রাম্প আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ারও ইঙ্গিত দেন। ট্রাম্প বলেন, এটি কেবল একটি একক নির্বাচনের বিষয় নয়। এটি আমাদের সারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতার বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যেন আমাদের সরকারের ওপর আস্থা পায় তা নিশ্চিত করতে আমরা এ প্রক্রিয়াকে আইনের যতগুলো দিক আছে সবগুলোর ভেতর দিয়ে নিয়ে যাব।

এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ট্রাম্প গুয়ার্তুমি করে হোয়াইট হাউস ছাড়তে না চাইলে কী হবে। এ বিষয়ে একটি উদাহরণও আছে। ১৮০১ সালের ৪ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস ১৮০০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী টমাস জেফারসনকে ক্ষমতা হন্তান্তর করতে অস্বীকার করেন। সে সময় কী ঘটেছিল। অ্যাডামস যে অবস্থায় পড়েন ট্রাম্পেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০ জানুয়ারির ‘মধ্যাহ্নের নীতিটি’ এখনো ট্রাম্পের জন্য লেখা হয়নি। সেটি হলো, অ্যাডামস ট্রাম্পের মতোই একগুঁয়েমি করেছিলেন। তিনি অফিস ছাড়বেন না। তাই অফিসই তাকে চলে যেতে বাধ্য করেছিল। কী অবস্থায় হয়েছিল অ্যাডামসের। সেদিন জেফারসন শপথ নিচ্ছিলেন। কিন্তু সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন অ্যাডামস। তিনি বয়কট করেন। সেই মুহূর্তে যারা দায়িত্বরত ছিলেন হোয়াইট হাউসে, মানে সেখানকার কর্মচারীরা তারা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বেয়াড়া ভাড়াটেকে উচ্ছেদের মতোই তারা হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্টের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেন। অ্যাডামসই ছিলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি নতুন সরকারি বাসভবন অর্থাৎ হোয়াইট হাউসের প্রথম বাসিন্দা। প্রেসিডেন্টের জন্য চলমান সব সুরক্ষা তুলে নেওয়া হলো। অফিসিয়াল যোগাযোগ কেটে দেওয়া হলো। হোয়াইট হাউসের সব কর্মচারী অ্যাডামসের নির্দেশনা গ্রহণ বন্ধ করে দেন। অ্যাডামস পরে টের পেলেন, তিনি থেকেও নেই।

তার পর থেকে হোয়াইট হাউসের দায়িত্বপ্রাপ্তরা এ বিষয়টি মনে রেখে চলছেন। বিশেষ করে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের পরাজয়ের খবর পৌঁছামাত্র বাক্সপেটরা, লোটা কম্বল গোছানো শুরু করে দেন। কারও নির্দেশের অপেক্ষা করতে হয় না। কারণ ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্তের মতো রাষ্ট্রের স্বতন্ত্র অঙ্গগুলো আপনাআপনি কাজ শুরু করে দেয়। তাই সম্ভাব্য অপমান বা বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে, হেরে যাওয়ার লক্ষণগুলো দেখলেই তাড়াতাড়ি ছেয়ে যাওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত হন। সেনা, সিক্রেট সার্ভিস, সিআইএ, এফবিআই ও হোয়াইট হাউস কর্মচারী- সবাই একটি আইনের আওতায় কাজ করেন। তারা সবাই একজনের প্রতি অনুগত, জনগণ যাকে বেছে নিয়েছেন, তার প্রতি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ম্যাজিক নম্বর ২৭০ ভোট পাওয়া মাত্রই এবং রিটার্নিং অফিসারদের দ্বারা ঘোষণা হওয়া মাত্রই নিম্নলিখিত বিষয়গুলো ঘটতে থাকে-

গোপনীয় পরিষেবা মানে সিক্রেট সার্ভিসের লোকদের মনোযোগ ভাগ হবে। আগত প্রেসিডেন্টের দিকে তাদের নজর তীক্ষè হয়। সিআইএ উভয় প্রার্থীকে ব্রিফ করে। এটি সাধারণত কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে ট্রাম্পেরই পাওয়ার বিষয় ছিল। সিআইএর কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স টিমও উভয়ের কাছে রিপোর্ট করা শুরু করে। ২০ জানুয়ারির মধ্যাহ্নে হোয়াইট হাউস কর্মীরা সরকারি বাড়ি থেকে ট্রাম্পের সব জিনিসপত্র সরিয়ে নেবেন। এ সময় তারা নতুন প্রেসিডেন্টের জিনিসপত্র নিয়ে আসবেন। এ জন্য কারও নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করেন না। ট্রাম্পের বেতন নেওয়ার ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউসে থাকা বাবদ ভাড়া কাটা বন্ধ হবে জানুয়ারিতে। এর পরিবর্তে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্টের বেতন থেকে হোয়াইট হাউসের ভাড়া জানুয়ারি থেকেই কাটা শুরু হবে।

মেলানিয়া ট্রাম্প ২০ জানুয়ারির মধ্যাহ্ন থেকেই হোয়াইট হাউসের বসগিরি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে ধরে নেওয়া হবে। এর পরিবর্তে ড. জিল বাইডেন ২০ জানুয়ারির মধ্যাহ্নেই হোয়াইট হাউসের নতুন বস হিসেবে মান্য হবেন। ওইদিন সরকারের সব নেটওয়ার্কও ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক কেটে দেবে। পেন্টাগন, সিআইএ, এফবিআই, অ্যাটর্নি জেনারেল তারা আর কথা বলেবেন না ট্রাম্পের সঙ্গে। তবে একটা গোপনীয় পরিষেবার ন্যূনতম যোগাযোগ বজায় থাকবে। কারণ ট্রাম্প তার সারাজীবনই এক্স-প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিরাপত্তারক্ষী পাবেন। ওইদিনই দ্য বিস্ট ও এয়ারফোর্স ওয়ান প্রেসিডেন্টকে শেষবারের মতো অভিবাদন জানাবে এবং বাইডেনের দিকে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়