শিরোনাম
◈ ইরানের ইস্পাহান ও তাব্রিজে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা, ৩টি ভূপাতিত (ভিডিও) ◈ জাতিসংঘে সদস্যপদ প্রস্তাবে মার্কিন ভেটোর নিন্দা ফিলিস্তিনের, লজ্জাজনক বলল তুরস্ক ◈ স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গল্প-প্রবন্ধ নিয়ে সাময়িকী প্রকাশনা করবে বাংলা একাডেমি ◈ দক্ষিণ ভারতে ইন্ডিয়া জোটের কাছে গো-হারা হারবে বিজেপি: রেভান্ত রেড্ডি ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংসদে আইন পাশ করব: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান

প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর, ২০২০, ০৩:৩৭ রাত
আপডেট : ০৯ নভেম্বর, ২০২০, ০৩:৩৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দীপক চৌধুরী : জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও জামায়াতের অপচেষ্টা থাকার পরও শেখ হাসিনার সুবিশাল অর্জনে সমৃদ্ধ রাজনৈতিক জীবনকে থামাতে পারেনি

দীপক চৌধুরী:সবসময়ই যে কথাটি মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে প্রমাণ হচ্ছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর বাঙালিকে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউই এতটা আপন করে ভালোবাসেনি। দ্বিতীয় কথা, জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা শক্তিগুলো চিরকালই আওয়ামী লীগ বিরোধী। ইতিহাসে এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টোপথে হাঁটতে শুরু করে। সংবিধান থেকে বাতিল করা হয় রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক স্তম্ভ ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’। একদিকে জাতির পিতার খুনীদের দায়মুক্তি দিয়ে জারি করা হয়েছিল কুখ্যাত ইনডেমেনিটি অধ্যাদেশ, অন্যদিকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ধর্মভিত্তিক ও যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। পঁচাত্তর পরবর্তী দীর্ঘ সময়ের সেনাশাসনে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অসাম্প্রদায়িক চরিত্রকে ছিন্নভিন্ন করা হয়। সেটি এক দীর্ঘ ইতিহাস, অতীত ও দুঃসময়। জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ, খালেদা জিয়ার রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ছিল। জিয়ার দেখিয়ে দেওয়া পথ ধরেই এরশাদের যাত্রা ও ক্ষমতারোহন। সুতরাং এরশাদের জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগকে দুশমন মনে করতো। যতভাবেই তারা এখন ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলুক না কেন-- বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দিয়ে দল গঠন করেছিল জাতীয় পার্টি। পরবর্তীকালে এসেছে খালেদা জিয়ার শাসন। এটি কীভাবে দুঃশাসন হয়েছিল তাও আমরা দেখেছি। তারা কেউই ‘খুনীদের দায়মুক্তি’ নিয়ে শব্দ করেনি। অথচ কতগুলো বছর ক্ষমতায় ছিল কেন্টনমেন্ট থেকে গড়ে তোলা তাদের দল। ২১টি বছর।

’৭১-এর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে খালেদা জিয়া তার স্বামীর ধারাবাহিকতায় দেশ শাসন করেছেন। মোটাদাগে বলতে গেলে তারা কখনো অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে পছন্দ করেনি। এদেশের রাজনীতিতে তাদের কারণেই অপশক্তি গ্রাস করতে পেরেছে। ১৯৭৫ সালে পাকিস্তানিদের এদেশীয় প্রেতাত্মারা দলটিকে ধূলোয় মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল। আর এখন ’৭৫-এর পটপরিবর্তনের অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী প্রতাপশালী বিএনপি শেখ হাসিনার সামনে দাঁড়াতে পারছে না, তার কারণও এখানেই নিহিত। রাজনীতি এখন মানবতা কেন্দ্রিক, উন্নয়ন কেন্দ্রিক, অগ্রগতি কেন্দ্রিক।

অবশ্য এখন নানারকম গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে কীভাবে ‘নাস্তানাবুদ’ করা যায় এ স্বপ্ন দেখছে ওরা। গুজব নামে ‘অস্ত্র’টি ছড়ানোর সাহস পাচ্ছে এখন। ধর্মীয় গুজব, নারী ধর্ষণের বা ছেলেধরা গুজব। এক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
মেধা-মনন, সততা, কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে শেখ হাসিনার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। এ দেশের রাজনীতিতে তিনি এক আদর্শবাদী দূরদর্শীসম্পন্ন নেত্রী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র, এদেশের গণতন্ত্র হত্যাকারী, গণতন্ত্রের বিরোধিতাকারী সামরিক স্বৈরাচার ও স্বৈরশাসন, তথা জীবন থেকে নেওয়া বহু বিষয় নিয়ে তিনি বিপুল সংখ্যক গ্রন্থ লিখেছেন।

নারীর সমতা, স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন আর অধিকার নিয়ে এদেশে শেখ হাসিনাই সর্বপ্রথম কথা বলেছেন এবং তা বাস্তবায়ন হয়েছে। সর্বত্র ভুলে ভরা এক ধারণাকে লালন করে চলেছিল এদেশের সামরিক ও স্বৈরাচার শাসকরা। নারীদের সামনে ইচ্ছে করেই রাখা হতো শুধুই অন্ধকার। নারীর ক্ষমতায়নের ধারণাগুলো যখন দেশের অপশক্তিগুলো নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতো ঠিক সে সময়ই বঙ্গবন্ধুকন্যা সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন এই বলে যে, নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলা কঠিন।

সুবিশাল অর্জনে সমৃদ্ধ শেখ হাসিনার কর্মময় জীবন। এক কথায় বলতে গেলে তিনি জীবন সংগ্রামী একজন জননেতা। বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও আস্থার জায়গা। এদেশের মানুষের একমাত্র আশা-ভরসার স্থান। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নতুন পর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেধা-মনন, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা আজ প্রমাণিত। এটা এখন তো পরিষ্কার যে, শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর শুধু রক্তের উত্তরাধিকার নন, তিনি আদর্শেরও যথার্থ উত্তরাধিকার। বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতি এক ও অভিন্ন সত্তা।

১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক কাউন্সিল অধিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশ-মাতৃকার হাল ধরার। সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনোকিছুই তাঁকে টলাতে পারেনি এক বিন্দু। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর ধরে সামরিক জান্তা, স্বৈরশাসন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে চলে একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬-২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় ’৭৫ পরবর্তী সময়ের স্বর্ণযুগ হিসেবে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অর্জিত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন চতুর্থাংশের বেশি আসন। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। গঠিত হয় মহাজোট সরকার। দেশরত্ন শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ও শক্তিশালী ভীত রচিত হওয়ায় জনপ্রিয়তার অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যান শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৮-এর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অবিশ্বাস্য বিজয়লাভ করে সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। ২০০৯ থেকে বিগত বারো বছরে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের বিনির্মাণের অভিযাত্রায় যুক্ত হয়েছে অজস্র সাফল্যভরা ইতিহাস রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জটিল ইস্যু ছিটমহল সমস্যার সমাধান, ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নতুন নতুন উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলারে উন্নীত, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.২ শতাংশে উন্নীত করা, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছাড়িয়ে যাওয়া, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঘাতকদের শাস্তি হয়েছে, ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, দেশের বাইরে থাকা কয়েক ঘাতককে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ-সুবিধার আওতায় আনা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, স্বাক্ষরতার হার ৭৩.৯ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন, প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারী নীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, প্রযুক্তির ব্যবহার চালুসহ অসংখ্য ক্ষেত্রে কালউত্তীর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

লেখক : উপসম্পাদক, আমাদের অর্থনীতি, সিনিয়র সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়