শিরোনাম
◈ এলডিসি উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়ার প্রস্তুতি নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য দুঃখজনক: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে

প্রকাশিত : ০৯ নভেম্বর, ২০২০, ১১:০৬ দুপুর
আপডেট : ০৯ নভেম্বর, ২০২০, ১১:০৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তুষার আবদুল্লাহ: ভোটের আড়ালের যুক্তরাষ্ট্র

তুষার আবদুল্লাহ: স্বপ্ন ভঙ্গের দেশের ভোট নিয়ে এদেশের সবার ঘুম উধাও। আমি জানি ওদেশের আম মানুষ কফি, ডোনাট আর নরম-কঠোর পানীয় নিয়ে মেতে আছে। ভোট নিয়ে তাদের ভাবনা নেই। ডোনাট, বার্গার আর পানীয়ের দাম না বাড়লেই খুশি। কেউ কেউ কান পেতে রাখছে, নতুন অভিবাসী এসে আবার তার কাজে না ভাগ বসায়। এবারের মার্কিন ভোট নিয়ে আফসোস আছে আমার। অতিমারির প্রতি ফুঁসে আছি। যাওয়া হলো না। এমন এক উত্তেজনা ও ঘটনাবহুল ভোটে।

ওখানকার ভোটের প্রচারণা ও ভোটের দিনের প্রতি আমার কোনও আর্কষণ নেই। বাঙালি পাড়ার উত্তেজনার বাইরে ভোট খুবই সাদামাটা। ভোট দিতে যেন নাগরিকেরা যান, সেজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তদবির করতেও দেখেছি স্থানীয় সংগঠনগুলোকে। তবে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ঘুরে নানা পেশা, বর্ণ ও ধর্মের মানুষের সঙ্গে কথা বলার অভিজ্ঞতার কাছে ভোটের আনুষ্ঠানিকতা একেবারেই বিবর্ণ। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা ভোট নিয়ে ভাবেন না। কে ভোটে দাঁড়ালো তা নিয়েও মাথাব্যথা নেই। ডেমোক্র‌্যাট এবং রিপাবলিকানের খাতায় যাদের নাম তোলা আছে, তারা তর্ক করেন, সমবেত হন বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও মিলনায়তনে। স্থানীয় গণমাধ্যমেও তারা নিজেদের নিয়ে সোচ্চার থাকেন। ২০১৬ সালে ট্রাম্প যে বছর জিতে এলো—রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে শুধু কিছু ফেস্টুন দেখেছি রাস্তার পাশে। দুই প্রার্থী যখন যেখানে গেছেন সেখানে ভিড় ছিল কর্মীদের। এর বাইরে ভোট নিয়ে কথা নেই। বার, রেস্তোরাঁ, মার্কেট, পার্কে কান পেতে দেখেছি, সরাসরি কথা বলেও দেখেছি, তারা ভোট নিয়ে চিন্তিত নন। কাজ, সপ্তাহ শেষে মজুরি পেলেই খুশি। ট্রাম্প, হিলারি–কে এলো তাতে ওদের কিচ্ছু যায় আসে না।

সত্যি কি আসে না? আসলে এই যে ভোট নিয়ে মস্তিষ্ককে ব্যস্ত না করে তোলা, একে আম মার্কিনিদের এক প্রকার প্রতিবাদও বলা যেতে পারে। কারণ তারা জানেন, তাদের ভোটই চূড়ান্ত নয়। জনপ্রিয় বা যাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিন নাগরিক সাদা বাড়িতে দেখতে চান, তিনি ওই বাড়িতে প্রবেশ নাও করতে পারেন। সাদা বাড়িতে প্রবেশের চাবি আসলে ইলেক্টোরাল কলেজের মোড়কে কতিপয় দলীয় প্রতিনিধির হাতে। তাদের মন স্থির বা বিগড়ে যাবার ওপর ভরসা করতে হয়। বিগত শতাব্দীতে এই আইনটিও করা হয়েছিল আম মানুষকে হেয় করেই। ভাবা হচ্ছিল, সাধারণ মানুষের নেতৃত্ব নির্বাচনের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা নেই। তাই তাদের হয়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করে আসছেন ৫৩৮ জন প্রতিনিধি। এর মধ্যে ২৭০ জনের রায় যিনি পাবেন, তিনি পান সাদা বাড়িতে প্রবেশের চাবি। জনভোট বেশি পেয়েও হিলারি ক্লিনটন নয়, মার্কিন অধিপতি হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৬ সালে ভোটের চেয়েও রোমাঞ্চ বোধ করেছি ফলাফল ঘোষণার নিউইয়র্কে ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভে থেকে।

প্রায় দশদিন ট্রাম্প বিরোধী সেই বিক্ষোভে থেকে এবং একডজন অঙ্গরাজ্য ঘুরে দেখেছি, জেনেছি সেখানকার মানুষগুলো কেমন দূরে সরে যাচ্ছে পরস্পরের থেকে। একের প্রতি অন্যের কী বীভৎস্য ঘৃণা তৈরি হচ্ছে। অভিবাসীদের দেশ আমেরিকা। আদি অভিবাসী যারা, যেমন আইরিশ। জো বাইডেন নির্বাচিত হলে তিনি হবেন আমেরিকার ২৩তম আইরিশ বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্ট। এমন যারা পুরাতন আছেন তারা আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেছে ৫০ অঙ্গরাজ্যেই। নতুন সইতে পারে না তারা। প্রবল রং বৈষম্যের সঙ্গে আছে ধর্মীয় বৈষম্য। সাধারণের ধারণা থাকতে পারে আমেরিকা নারীচোখে বিশ্ব দেখতে অভ্যস্ত। সমাজের নানা ক্ষেত্রে, এমনকি হিলারিকে দেখেও তাই মনে হতে পারে। গণতন্ত্র, মানবাধিকারের বুলি ও পতাকা উড়ানো আমেরিকা এখনও মানসিকভাবে তৈরি হতে পারেনি রাষ্ট্রের প্রথম নাগরিক হন কোনও নারী। হিলারির নানা কূটনৈতিক দোষ হয়তো ছিল, কিন্তু শুধু নারী বলেই আর তার পক্ষে ক্লিনটনকে নিয়ে আর সাদা বাড়িতে ফেরা হয়নি। ২০১২ তে ভার্জিনিয়াতে মেট্রোতে সাদা রংয়ের একজন আমার পাশে বসতে চাননি। একই ঘটনা নিউইয়র্কে ঘটেছে ২০১৬ সালে। ২০২০ একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হতো কিনা জানি না। তবে এতটুকু জানিÑআয় রোজগার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিন্তায় দূরত্ব বাড়ছে ওদের। অসহিষ্ণু তারা বরাবরই থাকে। এটি অভিবাসীদের জিনগত অসুস্থতা। সেই রোগটাও বেড়েছে ওদের। হয়তো বাইডেনই যাচ্ছেন সাদা বাড়িতে। যতদূর খবর নিয়েছি, খুব সাদা মনের মানুষ নন তিনি। অতীতে ইরাকসহ নানা যুদ্ধ বা আক্রমণে সায় ছিল বা অনুমোদন ছিল তার। পরবর্তীতে বড় পুত্রের কর্কট রোগে মৃত্যুর পর তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন দেখা যায়। কোনও কোনও অভিযানে নাবোধক অবস্থান ছিল এই অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান ডেমোক্র‌্যাটের। তবে দ্বিধা ও চঞ্চল মন নিয়ে, তিনি ভূ-গোলকের জন্য কতটা উপকারী হবেন বলা মুশকিল।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি।

ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়