নিউজ ডেস্ক : [২]পাপিয়া, শাহেদ, ডা: সাবরিনা এবং সর্বশেষ নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী। সবার চোখেই এরা প্রতারক। প্রতারণার বিস্তর অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। মামলাও হয়েছে। সবাই প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছে। তবে প্রতারণা করতে গিয়ে তারা অনেককেই ব্যবহার করেছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ভাঙ্গিয়েছে। ক্ষমতাধরদের সাথে ছবি তুলে তা ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়েছে। এমনকি, দু-একজন মিডিয়ায় নানা অনুষ্ঠানে জাতিকে অনেক জ্ঞানও দিয়েছেন। এসব প্রতারক গ্রেফতার হলেও যেসব ক্ষমতাধর তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন; যাদেরকে ব্যবহার করে প্রতারণার সুযোগ তারা পেয়েছে; তারা কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে।
পাপিয়া ওরফে পিউ। পুরো নাম শামীমা নুর পাপিয়া। যিনি ছিলেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক। ঢাকার পাঁচতারকা হোটেল ওয়েস্টিনে যার স্থায়ী রুম ছিল। প্রতিদিন ওই হোটেলে মদের বিলই পরিশোধ করতেন আড়াই লাখ টাকা। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ওই হোটেল থেকেই গ্রেফতার হন পাপিয়া। তার স্বামী মফিজুরসহ আরো কয়েক সহযোগীকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে পাপিয়ার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের চিত্র। বেরিয়ে আসে প্রতারণার মাধ্যমে অনেক মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়ার কাহিনী। প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন তিনি। আর এতে অনেক প্রভাবশালীকে ব্যবহার করেছেন তিনি। প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করেছেন, তাদের সাথে তোলা ছবি ব্যবহার করেছেন। মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রভাবশালীদের সাথে পাপিয়ার ঘনিষ্ঠতার ছবি বা ভিডিও দেখে তার খপ্পরে পড়ে গেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা না এলে হয়তো কোনোদিনই চেনা যেত না শাহেদ ও ডা: সাবরিনার আসল চেহারা। করোনার কারণে তাদের আসল চেহারা প্রকাশ পেয়েছে। তারা গণমাধ্যমে উপস্থিত হয়ে যেভাবে জাতিকে জ্ঞান দিতেন তাতে বোঝার কোন উপায় ছিলো না এরা এত বড় মাপের প্রতারক। মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়েও যারা প্রতারণা করেছেন।
করোনা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নামে শাহেদ ও ডা: সাবরিনা কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। করেনা শনাক্তের নামে মানুষকে উল্টা-পাল্টা রিপোর্ট দিয়ে দেশের মর্যাদাও ক্ষুণ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। প্রতারণার অভিযোগে গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরা সীমান্ত থেকে গ্রেফতার হন রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক শাহেদ। পরীক্ষা না করেই ওই হাসপাতাল মানুষকে করোনার ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে আসছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক, রাজনীতিকসহ অনেকের সাথে শাহেদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের নানা ছবি আর ভিডিওর সন্ধান মিলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, এগুলোই ব্যবহার করতেন প্রতারণার কাজে। এগুলোই ছিল তার উপরে ওঠার অন্যতম সিঁড়ি।
ডা: সাবরিনা চৌধুরী। জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান। নকল করোনাভাইরাস টেস্টের রিপোর্ট সরবরাহের অভিযোগে ১২ জুলাই সাবরিনাকে গ্রেফতার করা হয়। তার সাথেও দেখা গেছে অসংখ্য প্রভাবশালীর ছবি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্ষমতাধরদের সাথে ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই সাবরিনা সরকারি-বেসরকারি অনেক কাজ বাগিয়েছেন। হেলথ সেক্টর অনেকটা জিম্মি করে রেখেছিলেন তিনি। অনেক প্রভাবশালীর সাথে তার ভিডিও ও ছবি দেখা গেছে।
সর্বশেষ গ্রেফতার হলেন আরেক প্রতারক নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী। যিনি নিজেকে নবাব সলিমুল্লাহর নাতি আর খাজা আমানুল্লাহ আসকারীর ছেলে পরিচয় দিতেন। তিনিও প্রভাবশালীদের নাম ও ছবি ব্যবহার করেছেন। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, প্রভাবশালী রাজনীতিক, গণমাধ্যম কর্মীসহ অনেকের সাথেই ছিল তার ঘনিষ্ঠ ছবি ও ভিডিও। তিনি যে প্রভাবশালী, তার সাথে যে উপরতলার মানুষগুলোর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, তা প্রমাণের জন্যই এই ছবিগুলো ব্যবহার হতো। গ্রেফতারের পর জানা গেল আসকারী তার আসল পরিচয়ই গোপন করেছেন। তিনি যে নবাব পরিবারের সদস্য বলে দাবি করেছেন সেটিই ভুয়া। তার আসল নাম কামরুল ইসলাম হৃদয়। ‘তার বাবা ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। দুবাইতে তাদের স্বর্ণের কারখানা এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের মালিকানা তার বাবার।’ এসবও মিথ্যে কথা। প্রতারণা করার জন্যই এগুলো বলতেন তিনি। পুলিশ বলেছে, আসকারী যে তথ্য দিয়েছে সে অনুযায়ী তার বাবার নাম আবদুস সালাম। দ্বিতীয় বিয়ে করে কামরাঙ্গীরচরে বসবাস করছেন।
আসকারীর চাচাতো ভাই তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, তারা আগে পুরান ঢাকার ২১ নম্বর গৌরসুন্দর রায় লেনে একসাথে থাকতেন। হৃদয়ের বাবা তার ভাগের সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রায় ১০-১২ বছর ধরে তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। তাজুল ইসলাম আরো বলেন, হৃদয়রা সাত ভাই, দুই বোন। হৃদয়ের মা নাইমা খাতুন অনেক আগেই মারা গেছেন। হৃদয়ের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম ও এক ছোট ভাই মোহাম্মদ আলী মারা গেছেন। আমিনুল ইসলাম নামে আরেক ভাই কামরাঙ্গীরচরে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকেন। অন্য তিন ভাই আহাম্মদ আলী, রাজা ও রানা তার সাথেই থাকেন। প্রতারণা করেই কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন এই আসকারী ওরফে কামরুল ইসলাম হৃদয়। অবশেষে ২৯ অক্টোবর ধরা পড়েন কথিত এই নবাব।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কোনো প্রতারক গ্রেফতার হলেই অনেক প্রভাবশালীর সাথে তাদের ছবি পাওয়া যায়। এই ছবিগুলো তারা প্রতারণার কাজেই ব্যবহার করে। হাতে হাতে মোবাইল থাকায় এখনতো ছবি তোলা সহজ। কে কখন কার সাথে ছবি তুলছে তা বোঝাও যায় না। নয়াদিগন্ত
আপনার মতামত লিখুন :