শিরোনাম
◈ বাংলাদেশ ব্রাজিল থেকে ইথানল নিতে পারে, যা তেলের চেয়ে অনেক সস্তা: রাষ্ট্রদূত ◈ যুক্তরাষ্ট্র সরে এলে বিশ্বরাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবে কে: বাইডেন ◈ মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠালো বিজিবি ◈ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ ◈ বর্ধিত ভাড়ায় ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু ◈ বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ◈ আরও তিন মামলায় জামিন পেলেন মামুনুল হক ◈ সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ ◈ তাপপ্রবাহে উচ্চ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা,  বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ ইউনিসেফের ◈ মন্ত্রী ও এমপিদের নিকটাত্মীয়রা প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে: ওবায়দুল কাদের 

প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ দুপুর
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা: এবং সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক বিতর্ক

মোজাম্মেল হোসেন ত্বোহা: রবার্ট ফিস্ক নিয়ে গত কয়েকদিনে অনেকগুলো লেখা চোখে পড়ল। সবগুলোই পজেটিভ। এখন ছোটখাট শোক প্রকাশ টাইপের পোস্টগুলো যে পজেটিভ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন অনেকগুলো দীর্ঘ পোস্ট দেখেছি, যেখানে তার পুরো সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, অথচ লাস্ট অন্তত ৮ বছর যে তিনি বিতর্কিতও ছিলেন, সেই ব্যাপারটা পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
এটাই হচ্ছে ‘মেইনস্ট্রিম’ পশ্চিমা মিডিয়ার সমস্যা। রবার্ট ফিস্ক যদিও সেই অর্থে পশ্চিমা মেইনস্ট্রিম সাংবাদিক নন, সারাজীবন তিনি পশ্চিমা অন্যায় যুদ্ধের বিরুদ্ধে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পক্ষেই লেখালেখি করেছেন, কিন্তু দীর্ঘদিন ইন্ডিপেন্ডেন্টের মতো মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় লেখার সুবাদে তিনিও মেইনস্ট্রিম সাংবাদিকদের কাতারেই পৌঁছে গেছেন এবং যে বিপুল পরিমাণ সম্মান তিনি পেয়েছেন, অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন, নোম চমস্কির মতো ব্যক্তিদের প্রশংসা পেয়েছেন- এক কথায় যেরকম লিভিং লিজেন্ড তিনি হয়ে উঠেছিলেন, তাতে পশ্চিমা মিডিয়াও তার ন্যারেটিভ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি।
প্রশ্ন হচ্ছে, রবার্ট ফিস্ককে নিয়ে বিতর্কটা কী? বিতর্কটা হচ্ছে, পুরো সিরিয়া গৃহযুদ্ধের সময় রবার্ট ফিস্ক বাশার আল-আসাদের পক্ষে লেখালেখি করেছেন। এখন বাশারের পক্ষে লেখার মধ্যে কোনো অন্যায় নেই। আমি নিজে লিবিয়া গৃহযুদ্ধের সময় লিবিয়াতে ছিলাম, এবং সরাসরি দেখেছি বিদ্রোহীদের দ্বারা সংঘটিত ভয়াবহ অপরাধগুলো, গাদ্দাফীর সৈন্যদেরকে জবাই করার ভিডিওগুলো, কলিজা চিবিয়া খেয়ে ফেলার ভিডিওগুলো মানুষের হাতে হাতে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরেও কোনো মেইনস্ট্রিম মিডিয়া সেগুলো নিয়ে একটা শব্দও করেনি। ইভেন আল-জাজিরাও না। পুরো সময়টা তারা সেগুলো ইগনর করে বিদ্রোহীদের মহান বিপ্লবী হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

সুতরাং কোনো সাংবাদিক যদি পশ্চিমা ন্যারেটিভের বিপরীতে গিয়ে বিদ্রোহীদের অন্যায়গুলো, ষড়যন্ত্রগুলো তুলে ধরে, সেটা অন্যায় কিছু না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সেটা করতে গিয়ে সে যদি বেসিক সাংবাদিকতার এথিকস বিসর্জন দেয়? যদি ‘বিগার পিকচার’ দেখাতে গিয়ে ছোট ছোট ডিটেইলগুলো অগ্রাহ্য করে? সেটাই ঘটেছে রবার্ট ফিস্কের ক্ষেত্রে। রবার্ট ফিস্ক সারা জীবন পশ্চিমা যুদ্ধগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। এবং সেটা করতে গিয়ে তার ‘ওয়ার্ল্ড ভিউ’ নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো। বিশে^র যেকোনো সমস্যাকে তিনি সেই একই লেন্স দিয়ে দেখতে শুরু করেছিলেন। সে কারণে পুরো সিরিয়া যুদ্ধের সময় তিনি এমনভাবে রিপোর্টিং করেছেন যেন সিরিয়া যুদ্ধটা জাস্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে আরেকটা পশ্চিমা ষড়যন্ত্র। বাশার আল-আসাদও যে একজন ক্ষমতালোভী ঠাণ্ডা মাথার খুনি, তার বাহিনীও যে বিভিন্ন জায়গায় ম্যাসাকার চালিয়েছে, কেমিক্যাল গ্যাস প্রয়োগ করেছে, সে বর্ণনাগুলো তার লেখায় কম। বরং সেগুলো বর্ণনা করার সময় বাশারের মিডিয়ার মতো বর্ণনাই ব্যবহার করেছেন।

তার এসব রিপোর্টিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমি এখানে জাস্ট একটা উদাহরণ দিই। ২০১২ সালে ফিস্ক একটা আর্টিকেল লিখেছিলেন, ঝুৎরধ'ং ৎড়ধফ ভৎড়স লরযধফ ঃড় ঢ়ৎরংড়হ। সেখানে ফিস্ক সিরিয়ার বাশার-নিয়ন্ত্রিত একটি প্রিজন সফর করেছেন, যেটাকে তিনি নিজেই বলেছেন, সিরিয়ার সবচেয়ে নটোরিয়াস প্রিজন। তো এই প্রিজনে গিয়ে তিনি চারজন বন্দীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, এবং তাদের জবানবন্দীর উপর ভিত্তি করে পৃথিবীকে কনভিন্স করতে চেষ্টা করেছেন যে বিদ্রোহীরা আসলে কতো খারাপ।

এখন স্বাভাবিকভাবেই আপনার মনে প্রশ্ন জাগার কথা, এতো কুখ্যাত একটা প্রিজনের বন্দীরা কি স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে পারে? তারা যে ভয়ে মিথ্যা বলেনি, তার নিশ্চয়তা কী? এই প্রশ্ন যেন আপনার মনে না আসে, লিজেন্ডারি রিপোর্টার রবার্ট ফিস্ক সেজন্য আপনাকে আশ্বস্ত করেছেন, তার অনুরোধে সাক্ষাৎকার চলার সময় প্রিজনের গভর্নর এবং গার্ডরা ওই রুম থেকে চলে গিয়েছিলো এবং সাক্ষাৎকার শেষেও তিনি প্রিজন কর্তৃপক্ষকে তার নোটগুলো দেখাননি।

এসি রুমে বসে এটা শুনতে খুবই স্বস্তিদায়ক মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে নিজেকে যদি ওই বন্দীদের জায়গায় কল্পনা করেন, যারা সিরিয়ার সবচেয়ে কুখ্যাত প্রিজনে দিনের পর দিন টর্চারের শিকার হয়েছে, তাদের কাছে হঠাৎ একজন পশ্চিমা সংবাদিক এসে নির্জন রুমে কিছু একটা জিজ্ঞেস করলেই তারা নির্ভয়ে সব বলে দেবে? প্রিজন কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে? এমনকি যদি তাদের এই আশ্বাসও দেওয়া হয় যে, নোটগুলো প্রিজন কর্তৃপক্ষকে দেখানো হবে না, তারপরেও তো তাদের মাথায় আসার কথা- নোট দেখাবে না ভালো কথা, কিন্তু দুই দিন পর যখন ইন্ডিপেন্ডেন্টে এই সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে রিপোর্ট প্রকাশিত হবে, তখনই তো সেটা প্রিজন কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ে যাবে! তখন তাদের কে রক্ষা করবে?
কথা হচ্ছে এই সিম্পল লজিক কি রবার্ট ফিস্কের মতো লিজেন্ডারি সাংবাদিকের মাথায় আসেনি? সম্ভবত আসেইনি। সম্ভবত ‘বিগার পিকচার’ নিয়ে তিনি এতোটাই অবসেসড ছিলেন, এ ধরনের ছোটখাটো লজিক, স্মলার ডিটেইলস তার চোখ এড়িয়ে গেছে। এটাই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা। কারণ দ্বিতীয় যে সম্ভাবনাটা আছে, ফিস্ক জেনেশুনেও ইচ্ছা করে বারবার মিথ্যা বলেছেন, সেটা বিশ্বাস করতে আমার কষ্ট হবে। রবার্ট ফিস্কের অবদান বিশ^ সারা জীবন মনে রাখবে। কিন্তু সেই সাথে তাকে নিয়ে সৃষ্টি হওয়া বিতর্কগুলোও আলোচনায় থাকা উচিত। শুধু প্রশংসামূলক ওবিচুয়ারি একজন সেলিব্রেটি সাংবাদিকের লিগ্যাসির প্রতি অবিচার। ফেসবুক থেকে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়